‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ফ্যাসিস্ট অপশক্তির ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে’
২৩ এপ্রিল ২০২৫ ২২:২২
সিলেট: সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যেকোনো ফ্যাসিস্ট অপশক্তির ষড়যন্ত্র কঠোরভাবে মোকাবিলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিলেটের সুধীজনেরা। তারা বলেন, সাবেক ভিসির ‘দুর্নীতি-অনিয়মের’ কারণে প্রতিষ্ঠানটি তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না।
তারা আরও বলেন, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বর্তমান প্রশাসনের যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে সিলেটবাসী।
বুধবার ( ২৩ এপ্রিল) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিকেল এডুকেশন ইউনিট মিলনায়তনে ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় সুধীজনেরা এসব মন্তব্য করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল পাটওয়ারীর সভাপতিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার শাহ আলম।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনজন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হলেও গত কয়েক বছরে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে উপাচার্য অধ্যাপক ইসমাইল পাটওয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কাজ করতে না পেরে ওসমানী মেডিকেল কলেজের একটি কক্ষে অফিস করছেন।
কোষাধ্যক্ষ জানান, প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোর্শেদ আহম্মেদ চৌধুরী সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই চারবার অবৈধভাবে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যেখানে ১১২টি পদ অনুমোদন করেছে, সেখানে প্রায় ২৪০ জনকে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ জনের নিয়োগে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির যৌথ তদন্তে দেখা গেছে, ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৮’ এর ১২(১০) ধারা অনুযায়ী, বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ পাওয়া ২৪০ জনের অধিক কর্মচারীর চাকরি বাতিল এবং তাদের বেতন-ভাতা ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে স্থগিত করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনে নামেন ওই নিয়োগপ্রাপ্তরা।
২০২২ সাল থেকেই তারা বিভিন্নভাবে আন্দোলন শুরু করেন এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। এ সময় ক্যাম্পাসে ভাঙচুর, তালা ভেঙে কক্ষের আলমিরা ও ফাইল কেবিনেট থেকে জরুরি কাগজপত্র (নথি), ব্যাংকের চেক বহি ও গুরুত্বপূর্ণ নথি লুট করার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরবর্তীতে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো সম্ভব না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম স্থানান্তর করে ওসমানী মেডিকেল কলেজে চালানো হচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল পাটওয়ারী জানান, তিনি (ভিসি) ও রেজিস্ট্রার ছাড়া বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী কোনো স্টাফ নেই। বর্তমান দৈনিক মজুরিভিত্তিতে স্টাফ নিয়ে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অ্যাডহক নিয়োগ বাতিল হয়ে যাওয়ায় এগুলো নিয়মিত করার কোনো সুযোগ নেই। তাদের পদ বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু, অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা- কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ৮০ একর জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তাকে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) প্রকল্পের পিডি নিয়োগ করা হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, ১২০০ বেডের হাসপাতাল হবে। এতে দেশের বাইরের চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীলতা কমবে এবং স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
সভায় সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী জানান, প্রতিষ্ঠানটি বাঁচাতে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে আমরা প্রস্তুত। ফ্যাসিস্ট অপশক্তির যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করা হবে।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না। অতীতের নিয়োগপ্রাপ্তদের ২০২২ সালে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় বর্তমান প্রেক্ষিতে জনবল নিয়োগ করতে হবে। তিনি অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালা ও বিধিমালা প্রণয়নের তাগিদ দেন। সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থার কারণে অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজগুলোও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উমর রাশেদ মুনির, দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস উন-নূর, সিলেট জেলা জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবির, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সাংবাদিক আবদুল কাদের তাপাদার, ডা. হোসাইন আহমদ।
সারাবাংলা/এইচআই
অনিয়ম এমএজি ওসমানী মেডিকেল দুর্নীতি ফ্যাসিস্ট অপশক্তি সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়