চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ এনেছেন বন্দরের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান। তিনি বলেছেন, এনসিটির মালিকানা আমরা কাউকে দিয়ে দিচ্ছি না, মালিকানা আমাদেরই থাকছে, শুধুমাত্র টার্মিনালের অপারেটর নিয়োগ করছি।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ১৩৮ তম চট্টগ্রাম বন্দর দিবস উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এনসিটি (নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল) ও সিসিটি (চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল) দিয়ে দেয়ার একটা কথা বলা হচ্ছে। যে কথাগুলো বলা হয়, এগুলো আসলে বিভ্রান্তিকর কথা। আমরা এনসিটির মালিকানা কাউকে দিয়ে দিচ্ছি না। আপনি যদি একটা বিল্ডিং বানান, যদি সেটা ভাড়া দেন, এটাও ঠিক ওরকমই। মালিকানা আমাদেরই থাকছে, আমরা শুধু তাদের (বিদেশি প্রতিষ্ঠান) টার্মিনালের অপারেটর হিসেবে নিয়োগ করছি, যেমনটা আমরা পিসিটিতে (পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল) করলাম।’
‘তারপর বে-টার্মিনালে যেটা হবে, সিসিটি-ওয়ান যেটা হবে, সেটা করবে সিঙ্গাপুর। সিসিটি-টু করবে ডিপি ওয়ার্ল্ড (দুবাইয়ের প্রতিষ্ঠান)। ঠিক একইভাবে এনসিটির জন্য গভর্নমেন্ট লেভেলের নির্দেশনা অনুযায়ী যে চুক্তি হয়েছে, সে অনুসারে কাজ চলমান আছে। এটায় দুই দেশের কমিটমেন্ট অনুসারে কাজ চলছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এটার নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও ওভাবে ফাইনালাইজ হয়নি। আমাদের ট্রানজ্যাকশন অ্যাডভাইজার আছে, তাদের কাজ চলছে, তাদের প্রতিবেদন পেলে বুঝতে পারব।’
দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যা-ই করি না কেন, রাষ্ট্রের স্বার্থ সংরক্ষণ করে, দেশের মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ করে করা হবে। আমরা এখানে যারা আছি, কেউই কিন্তু পার্মানেন্ট না। কাজেই আমাদের হাত দিয়ে যে কাজটা হবে, সেটা দিয়ে দেশ এবং দেশের মানুষ যেন উপকৃত হয়, রাষ্ট্রের যে স্বার্থ সেটা যেন নিশ্চিত হয়। সেটা নিশ্চিত করেই সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
বিদেশি টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের সুবিধা বর্ণনা করে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ফরেনারদের কাছে দেব, সেটা প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় দেব, আর্থিকভাবে আমরা যাতে সর্বোচ্চ বেনিফিটেড হই, সেভাবে দেব। দ্বিতীয়ত. এটার মাধ্যমে আমাদের দক্ষতা নিশ্চিত হবে। তখন টার্মিনাল-টার্মিনালে কম্পিটিশন হবে। তৃতীয়ত. এটার মাধ্যমে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও ডেলিভারি দ্রুত হবে। জাহাজের ভাড়া কমে যাবে, কনটেইনারের ভাড়া কমে যাবে।’
‘আমাদের টার্গেট হচ্ছে, ভবিষ্যতে জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়া কত কমানো যায় আর কত দক্ষতা বাড়ানো যায়। এজন্য ফরেন টার্মিনাল অপারেটরদের দিলে কম্পিটিশন বাড়বে, তারা কার্গো জেনারেট করবে এবং রিজিওনাল হাব হিসেবে ব্যবহার হবে। এখান থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট হবে, কোস্টাল কানেক্টিভিটি স্টাবলিশ হবে। নিজেরা করলে এসব অ্যাডভান্টেজ তো আমরা নিতে পারবো না। কিন্তু উনারা যেহেতু ইনভেস্ট করবেন, উনারা এটাকে আরও এফিশিয়েন্ট করার চেষ্টা করবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কনটেইনার হ্যান্ডলিং রেট যে হারে বাড়ছে, আমাদের কিন্তু ভবিষ্যতে কনটেইনারাইজেশনে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে অত্যন্ত আধুনিক টেকনোলজি লাগবে। আমাদের সিসিটি-এনসিটিতে যে ইক্যুইপমেন্টগুলো আছে, সেগুলোর বয়স অলরেডি শেষের দিকে। অলরেডি ওভারডিউ হয়ে গেছে। এখন নতুন টেকনোলজি যদি আমাদের আনতে হয়, ইক্যুইপমেন্ট চেঞ্জ করে যদি নতুন আনতে হয়, তাহলে কী পরিমাণ টাকা লাগবে একবার চিন্তা করেন। একটা নরমাল কী গ্যান্ট্রি ক্রেনেই তো ৭০-৮০ কোটি টাকার মতো খরচ হবে। সুতরাং আমাদের সবদিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি টার্মিনালের মধ্যে এনসিটি সবচেয়ে বড়। প্রায় ৪৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে পাঁচ জেটির এ টার্মিনালের নির্মাণ শেষ হয়। অভিযোগ আছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের হস্তক্ষেপে টার্মিনালটি আট বছরেও পুরোপুরি চালু করা যায়নি। অথচ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এই টার্মিনালে আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জেটি ও যন্ত্রপাতি স্থাপন করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া দেশি অপারেটর দিয়ে এনসিটি পরিচালনা করছে। তবে টার্মিনালটি এখন নতুন করে বিদেশি অপারেটরের হাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এনসিটি বিদেশি অপারেটরের হাতে দেয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে জামায়াত ইসলামী ও বন্দর রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। গত ২০ এপ্রিল চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর শাহজাহান চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, এনসিটি নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বন্দর ভবনের সামনে লিফলেট বিতরণ করে প্রতিবাদ জানান।