Friday 25 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বসন্ত-বৈশাখে ফুলবাণিজ্য কমে অর্ধেক, হতাশ ব্যবসায়ীরা

ফারহানা নীলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:০২

বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা ফুলের বাগান। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: বাংলা ঋতুচক্রে ফাল্গুন-চৈত্র মিলে বসন্ত। চৈত্রের সঙ্গে সঙ্গে সেই ঋতুরাজ বসন্তও বিদায় নিয়েছে। চলছে বাংলা নতুন মাস বৈশাখ। বঙ্গাব্দের আবাহন পহেলা বৈশাখ শেষ। বসন্ত থেকে বৈশাখ। এই পুরো সময়টা জুড়েই চলে ফুল কেনাকাটার নানা আবহ। কারণ এই সময়টাতেই আসে বসন্ত বরণ, ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি ও বর্ষবরণ। আবার পুরো ফেব্রয়ারি জুড়েই চলে অমর একুশে বইমেলা। সেইসঙ্গে থাকে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের আনুষ্ঠানিকতা।

বিজ্ঞাপন

এসব হিসাব করে ফেব্রয়ারির ১৩ থেকে এপ্রিলের ১৪ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন আয়োজন ঘিরে চলে ফুল কেনাকাটার ধুম। আর এই দুই মাসসহ সারা বছরজুড়ে সারাদেশে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ফুলবাণিজ্য হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন ফুল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাদের সেই লক্ষ্যমাত্রা এবার পূরণ হয়নি। এর আগের বছরও ৬০০ কোটি ফুলবাণিজ্য হয়েছে। সেই হিসাব অনুযায়ী এবারও প্রত্যাশা ছিল, বেশি না হলেও আগের বছরের মতো হবে। কিন্তু এ বছর ফুলবাণিজ্য হয়েছে মাত্র ২৮৫ কোটি টাকার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সিন্ডিকেটে দাম বৃদ্ধি ও মানুষের আগ্রহ কম থাকায় ফুলবাণিজ্য এবার অর্ধেকে নেমেছে।

বিজ্ঞাপন

‘বড় কোনো উৎসব আইলেই, নতুন নতুন ফুল ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নাইমা পড়ে। ফুলের বাজার বুঝে না, আন্দাজি দাম চায় । সিন্ডিকেট কইরা বেশি দামে বিক্রি করে। আর এদিকে আমরা সারাবছর ধইরা ব্যবসা করি। এই বড় উৎসবগুলার জন্য অপেক্ষায় থাকি। আমাগো তখন ফুল বিক্রি হয় না। এই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীগুলানরে আগে ধরতে হইবো।’- এভাবেই সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন ফুল ব্যবসায়ী মো. নাদিম মিয়া।

সম্প্রতি রাজধানীর বেশকিছু ফুলের দোকানে ঘুরে জানা গেল, দোকানগুলোতে ফুল বাণিজ্য একেবারেই কমে গেছে। এবারের উৎসবগুলোতে ফুল বেচাবিক্রি ছিল অনেক কম। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে মানুষ জীবন-যাপনের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে বেশি চিন্তিত। তাই বিনোদন বা উৎসবে ফুলের মতো জিনিস বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইমামুল হোসেন সারাবাংলা বলেন, ‘এবারের ভালোবাসা দিবসে অনেক কম দামে ফুল বিক্রি হয়েছে। মানুষ কম দামে ফুল কিনছে। এর আগের বছরগুলোতে এবারের মতো এত কমে আর কেউ ফুল কিনতে পারেনি। বলা যায় প্রথম তিনটা উৎসবই আমরা ব্যবসা করতে পারিনি। কম দামে ফুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি।’

কেন ব্যবসা লাভজনক হয়নি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমদানি বেশি হয়েছে। আর দ্বিতীয়ত, পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে পড়েছে। আগে দুই উৎসব পৃথক পৃথক দিন হতো। গত কয়েক বছর ধরে একসঙ্গে হওয়ায় আমাদের এই দুইদিনের বাণিজ্য অর্ধেকে নেমেছে। এছাড়া, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু, ফুলের দাম বাড়েনি। ফলে আমরা পুরোই লসে আছি।’

সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফুলের এক্সপোর্ট বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকেও উদ্যোগ নিতে হবে। যে সিজনে যে ফুল উৎপাদন হয়, সেই ফুলের প্রদর্শনীর মাধ্যমে এক্সপোর্ট বাড়াতে হবে। করপোরেট বিজনেসম্যান যারা আছেন, তারা তখন এই ব্যবসায় ঝুঁকবেন। তখন রফতানিও বাড়বে। এতে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসবে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি শ্রী বাবুল প্রসাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র বসন্ত উৎসবের দিনই ৩০০ কোটি টাকার ফুলবাণিজ্যের টার্গেট নিয়েছিলাম। সেরকম প্রস্তুতিও আমাদের ছিল। অনেক ফুলও আমরা রেখেছিলাম। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় আমাদের টার্গেট পূরণ হয়নি। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস, মাতৃভাষা দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসে সারাদেশে মাত্র ২৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। যেখানে শুধুমাত্র পহেলা ফাল্গুনেই বিক্রি হয় ৩০০ কোটি টাকা। প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের প্রত্যাশা ছিল পহেলা বসন্তেই ৩০০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হবে। কিন্তু হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এর পর পহেলা বৈশাখে আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে, সারাদেশে শত কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হবে। কিন্তু সেখানে মাত্র ৩৫ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হয়েছে। অর্থাৎ বসন্ত থেকে বৈশাখ জুড়ে মাত্র ২৮৫ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হয়েছে। সেই হিসাবে আমাদের ফুল বাণিজ্য অর্ধেকে নেমে এসেছে।’

এই ক্ষতির জন্য বাবুল প্রসাদ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেই দায়ী করেন। শ্রী বাবুল প্রসাদ বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এবার উৎসবগুলোতে কম বের হয়েছেন। কেউ কেউ হয়তো ভয়েই বের হননি। সেজন্য ফুল বিক্রিও হয়েছে কম। আগের বছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে আমরা প্রায় ৪০ শতাংশ লোকসানে আছি। লসের আরেকটি কারণ হলো- দ্রবমূল্য বৃদ্ধি। মানুষ আগে খাওয়ার জন্য দ্রব্য কিনবে। ফুল হচ্ছে শৌখিন বিষয়। সেটি পড়ে কিনবে। আসলে বর্তমানে প্রয়োজন ছাড়া কেউ ফুল কিনছেন না।’

রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হলে, নতুন করে ফুল বিক্রি বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করছেন ফুল ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা। তাদের মতে, দেশের অর্থনীতিকে আরও বিকশিত করতে ফুলের উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। সেইসঙ্গে এই ফুল বাণিজ্যকে যদি আরও সম্প্রসারণ করা যায়, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম

অর্ধেক ফুলবাণিজ্য বসন্ত বৈশাখ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর