সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত: বিপদের মুখে পাকিস্তান?
২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:১৯ | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪৪
কাশ্মীরের পেহেলগামে স্বাধীনতাকামীদের সহায়তাকারী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের (টিআরএফ) হামলায় ২৬ পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মঙ্গলবারের (২২ এপ্রিল) ওই হামলার পর বুধবার (২৩ এপ্রিল) ভারতের মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটি এক জরুরি বৈঠকে বসে এবং দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পাকিস্তানের সঙ্গে হওয়া ৬৫ বছরের পুরনো সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) স্থগিত করা হয়েছে।
ভারতের এমন পদক্ষেপ পাকিস্তানের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক ও কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। কারণ, চুক্তির আওতায় ইন্দাস, ঝিলম ও চেনাব নদীর পানির অধিকাংশ অংশ পাকিস্তান ব্যবহার করে থাকে। ভারত যদি বাস্তবিকভাবে এই পানির প্রবাহ সীমিত করার পদক্ষেপ নেয়, তবে পাকিস্তানের কৃষি ও বিদ্যুৎ খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, পাকিস্তান যদি আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদে সমর্থন বন্ধ না করে, তাহলে সিন্ধু পানি চুক্তি কার্যকর থাকছে না। তিনি জানান, চুক্তিটি পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
সিন্ধু পানি চুক্তি:
সিন্ধু পানি চুক্তি ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় হয়। এতে ভারত পূর্বের তিনটি নদী- রবি, বিয়াস ও শতদ্রুর পানি ব্যবহার করতে পারে এবং পাকিস্তান পশ্চিমের তিনটি- সিন্ধু এবং তার দুই উপনদ, বিতস্তা (ঝিলম) ও চন্দ্রভাগার (চেনাব) নদীর পানি ব্যবহার করে। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত এই নদীগুলোর পানি পুরোপুরি থামাতে বা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে না।
চুক্তি স্থগিতের প্রভাব:
যদিও ভারত একে ‘স্থগিত’ বলছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুক্তিতে এমন কোনো ধারা নেই যা একতরফাভাবে স্থগিত করার অনুমতি দেয়। তবুও ভারতের এই ঘোষণা পাকিস্তানের জন্য একটি কৌশলগত বার্তা এবং চুক্তিটি পুনরায় আলোচনার জন্য চাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের পর্যায়ে পড়ে এবং পাকিস্তান চাইলে আন্তর্জাতিক আদালতে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে, যদিও বাস্তবায়ন কঠিন। অতীতে ভারত বহুবার হুমকি দিলেও কখনোই এই চুক্তি স্থগিত করেনি। এই প্রথমবার ভারত সেটি কার্যকর করেছে।
এছাড়াও ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে মূল স্থলসীমান্ত ‘আটারি-ওয়াঘা’ চেকপোস্ট বন্ধ করে দিয়েছে, পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে এবং ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় সামরিক উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি) এক জরুরি বৈঠকে বসে। বৈঠকে বলা হয়, ভারতের এসব পদক্ষেপ একতরফা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী।
পাকিস্তান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, সিন্ধু পানি চুক্তির যেকোনো ব্যাঘাতকে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং সে অনুযায়ী জবাব দেওয়া হবে।
পাকিস্তানও পালটা পদক্ষেপ হিসেবে তাদের আকাশপথ ভারতীয় বিমানের জন্য বন্ধ করেছে, ভারতীয় সেনা উপদেষ্টাদের ‘অপ্রত্যাশিত ব্যক্তি’ ঘোষণা করেছে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও সব ধরণের ভিসা সুবিধা স্থগিত করেছে। পাকিস্তান বলেছে, তারা ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তিও স্থগিত করতে পারে।
সারাবাংলা/এনজে