চুক্তির খুব কাছাকাছি রাশিয়া-ইউক্রেন: ট্রাম্প
২৬ এপ্রিল ২০২৫ ১১:২১
রাশিয়া ও ইউক্রেন শান্তি চুক্তির খুব কাছাকাছি রয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) মস্কোতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যে আলোচনার কয়েক ঘণ্টা পর এই মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে বলেন, ‘প্রধান বিষয়গুলোর বেশিরভাগেই ঐকমত্য হয়েছে।’ এছাড়া তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনকে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকের মাধ্যমে চুক্তি সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।
ইতিমধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতে ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর প্রকৃত চাপ প্রয়োজন, যেন তারা নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। যদি তারা পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে ঐকমত্য হয়, তবে ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনার দরজা খোলা থাকতে পারে।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের একটি শান্তি প্রস্তাবে ইউক্রেনকে রাশিয়া দখলকৃত বেশ কিছু অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ট্রাম্প ক্রাইমিয়া রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নেওয়ার পক্ষেও অবস্থান নিয়েছেন, যা ইউক্রেনের পক্ষে অগ্রহণযোগ্য।
২০১৪ সালে রাশিয়া অবৈধভাবে ক্রাইমিয়া দখল করে এবং ২০২২ সালে পূর্ণমাত্রায় ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে। বর্তমানে মস্কো ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) মস্কোতে স্টিভ উইটকফের বহর প্রবেশের সময় শহরের কিছু অংশে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এটি ছিল চলতি বছরে তার চতুর্থ রাশিয়া সফর।
প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠককে খুবই ফলপ্রসূ বলেছেন পুতিনের সহকারী ইউরি উশাকভ। তিনি বলেন, এই আলোচনার মাধ্যমে শুধু ইউক্রেন নয়, আরও কিছু আন্তর্জাতিক বিষয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান একে অপরের কাছে এসেছে।
আলোচনায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে সরাসরি সংলাপ পুনরায় শুরু করার বিষয়েও আলোচনা হয় বলে জানান উশাকভ। সপ্তাহের শুরুতে পুতিন প্রথমবারের মতো জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা খোলা রেখেছেন।
এদিকে শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ট্রাম্প ইউক্রেনের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তিনি দাবি করেন, প্রতি সপ্তাহে পাঁচ হাজার জন ইউক্রেনীয় ও রাশিয়ান প্রাণ হারাচ্ছেন এবং যুদ্ধের ইতি টানাই তার লক্ষ্য।
তবে, ইউক্রেনের অবস্থান স্পষ্ট। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত। কোন ভূখণ্ড ইউক্রেনের, তা ঠিক করার অধিকার শুধু ইউক্রেনের জনগণের আছে।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির মাধ্যমেই সবকিছু আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইউরোপীয় ও ইউক্রেনীয় পক্ষের পালটা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির পরই কেবল দখলকৃত ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনা সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাব এখনো প্রকাশ্যে আনা হয়নি, তবে বিষেশজ্ঞদের মতে এটি রাশিয়ার দখলকৃত এলাকা রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে, যা মস্কোর অনুকূলে।
এদিকে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ইউক্রেন এখনো ‘রেয়ার আর্থস চুক্তিতে’ স্বাক্ষর করেনি, যা তিন সপ্তাহ আগে হওয়ার কথা ছিল।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের অবস্থান এখনও অনেক দূরে থাকলেও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আশাবাদী শান্তিচুক্তি শিগগিরই বাস্তবায়িত হতে পারে।
সারাবাংলা/এনজে