রাউজানে খুনোখুনি দলীয় কোন্দলে নয়— দাবি গোলাম আকবরের
২৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:২৪ | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:০৩
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপর দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও উত্তর জেলা কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার। ছবি: সারাবাংলা
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের পালটাপালটি খুনোখুনির ঘটনা দলীয় কোন্দলের কারণে নয় বলে দাবি করেছেন দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও উত্তর জেলা কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার। বালুমহাল, ইটভাটা, চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বে এসব খুনোখুনি হচ্ছে বলে দাবি এ নেতার।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত আট মাসে শুধু রাউজানে ৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ প্রেক্ষাপটে শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন গোলাম আকবর খোন্দকার।
অব্যাহত হত্যাকাণ্ড দলীয় কোন্দলের জেরে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, ‘আমি এটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট ডিনাই করছি। এসব ক্ষেত্রে আমাদের দল কখনোই কম্প্রোমাইজ করছে না। আমি দলের অবস্থান পরিস্কার করার জন্য এসেছি। যারাই সন্ত্রাস করছে, খুনোখুনি করছে, সেটা যত বড় নেতাই হোক, সেটা যদি গোলাম আকবর খোন্দকারও হয়, দল কখনও কম্প্রোমাইজ করবে না।’
‘৫ আগস্টের পর রাউজানে আমি বেশ কয়েকটি জনসভা করেছি। বারবার বলছি- কোনো দ্বন্দ্ব, কোনো সংঘাতে যেন আমাদের নেতাকর্মীরা না জড়ায়। কোনো অভিযোগ থাকলে আমরা থানায় মামলা করব, আমরা বিচারপ্রার্থী হবো যথাযথ কর্তৃপক্ষের আছে। কিন্তু আমরা কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নিই। পজেটিভ প্রতিযোগিতা ভালো, নিগেটিভ প্রতিযোগিতা দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
তাহলে কেন এত খুনোখুনি, এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, ‘যখন বালুমহাল নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়, যখন মাটিকাটা নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। গাছের ট্রাক থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে, প্রতিদিন ৫০ এর অধিক গাড়ি থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে। এই চাঁদার ভাগ কোথায় যাচ্ছে, সেটা জনগণের জানার অধিকার আছে। রাউজানে ৩৮টি ইটভাটা আছে, সেখানে দুই লাখ টাকা করে চাঁদা ধার্য্য করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন এগুলো তদন্ত করে দেখুক কারা করছে।’
‘যে অস্ত্রগুলো ৫ আগস্টের পর সন্ত্রাসীদের জন্য কেনা হয়েছে, কারও আশ্রয়-প্রশ্রয়ে চাঁদাবাজির টাকায়, যৌথবাহিনী এসব অস্ত্র উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।’
উল্লেখ্য, রাউজান উপজেলায় ‘গডফাদারের’ তকমা পাওয়া সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর আমলে আওয়ামী লীগের ১৫ বছর বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া ছিলেন। অনেক নেতাকর্মী বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। যারা দেশে ছিলেন, তারাও রাউজানে যেতে পারতেন না।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাউজানের বিএনপি নেতাকর্মীরা ফিরে আসেন। কিন্তু শুরু থেকেই রাউজানে বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একভাগে আছেন গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুরাসীরা, আরেক ভাগে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা।
অভিযোগ আছে, দুই নেতার অনুসারীদের বিরোধের জেরে চলছে সংঘাত, খুনোখুনির ঘটনা। গত আট মাসে রাউজানে ৯ জন খুন হয়েছেন, এর মধ্যে ছয়জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধের জেরে খুনোখুনি ঘটছে কি না, জানতে চাইলে গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, ‘আমি এখানে দলের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে আসিনি। কারও মুখোশ খুলতেও আসিনি। আমি শুধু আমার দলের অবস্থান পরিস্কার করতে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমাদের নামে অসংখ্য মামলা। আমি জীবনে কাউকে একটা ঢিলও মারিনি। আমাকে রাজপথের মিছিল থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। বেশ কিছুদিন আমি কারাগারে ছিলাম। শুধু আমি না, আমাদের অনেক নেতাকর্মীর নামে মামলা আছে। কিন্তু সেই সুবাদে এখন কেউ যদি অপরাধ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশে বসে থাকে তাহলে আমাদেরকে ফাইন্ড আউট করা উচিত। যথোপযুক্ত শাস্তি দেওয়া উচিত বলে মনে করি।’
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হানিফ, মোহাম্মদ ইউনুস চৌধুরী, কাজী সালাউদ্দিন, মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ নুর মোহাম্মদ, বেলায়েত হোসেন, রাউজান উপজেলার সভাপতি জসিম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ