Saturday 26 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা
সিমলা চুক্তি কী, স্থগিত হলে ভারতের ওপর প্রভাব পড়বে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৩৫ | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ২০:১৮

ইন্দিরা গান্ধী ও জুলফিকার আলী ভুট্টো সিমলা চুক্তিতে সই করেছিলেন।

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর স্বাধীনতাকামীদের সহায়তাকারী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের (টিআরএফ) হামলার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দুই পক্ষই প্রতিশোধমূলক পালটাপালটি পদক্ষেপ নিয়েছে।

মঙ্গলবারের (২২ এপ্রিল) ঘটনার পর দ্রুত কতগুলো সিদ্ধান্ত জানায় দিল্লি। এই তালিকায় সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত, প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া, পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা বন্ধ এবং কূটনীতিকদের বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্তও রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জবাবে পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। জানানো হয়েছে, ভারত আর পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না। সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিও স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান।

সিমলা চুক্তি কী?

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিমলা চুক্তি এমন একটা আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছিল যেটিকে দুই দেশের মধ্যে ‘শত্রুতা’ অবসানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের পর ১৯৭২ সালের জুলাইতে সই হয়েছিল এই চুক্তি।

তার মাস ছয়েক আগেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। পাকিস্তানের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪৫ হাজার সৈন্য এবং আধাসামরিক বাহিনীসহ ৭৩ হাজার যুদ্ধবন্দি ভারতের কারাগারে ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রায় পাঁচ হাজার বর্গমাইল এলাকাও ভারতের দখলে ছিল।

এই পটভূমিতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো ভারতের হিমাচল প্রদেশের সিমলায় বৈঠক করছিলেন। সেখানে যে সমঝোতা হয় তার নাম সিমলা চুক্তি। চুক্তির দলিল সইয়ের তারিখ রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৭২ সালের দোসরা জুলাই। তবে বাস্তবে তেসরা জুলাই সকালে সই হয়েছিল এই চুক্তি।

বিজ্ঞাপন

দুই দেশের মধ্যে ‘শত্রুতার’ অবসানের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমঝোতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সিমলা চুক্তির বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল। সিমলা চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব সমস্যার সমাধান করবে।

সিমলা চুক্তির অধীনে দুই দেশের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) গঠিত হয়। সেই সময় ভারত-পাকিস্তান দুইপক্ষই এই নিয়ন্ত্রণ রেখাকে সম্মান জানাতে রাজি হয়। তারা এই বিষয়েও সম্মত হয়েছিল যে দুইপক্ষই কোনোরকম একতরফা সিদ্ধান্ত নেবে না।

নিয়ন্ত্রণ রেখাকে স্কেল হিসেবে বিবেচনা করে একে অপরের ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। কিন্তু দুই দেশই একে ওপরের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ রেখাকে ‘না মানার’ অভিযোগ তুলে এসেছে।

ভারতের ওপর প্রভাব পড়বে?

জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল কি সিমলা চুক্তির লঙ্ঘন?

এই প্রশ্নের উত্তরে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাউথ এশিয়া স্টাডিজের অধ্যাপক মহেন্দ্র পি লামা বলেছেন, ‘৩৭০ ধারা বিলোপের বিষয়টি সিমলা চুক্তির লঙ্ঘন ছিল না। ৩৭০ ধারা ভারতীয় সংবিধানের বিষয় ছিল এবং সংবিধান সংশোধন করার ক্ষমতা সংসদের রয়েছে।’

তার মতে, সিমলা চুক্তি স্থগিত হলে তার প্রভাব ভারতে পড়বে না।

অধ্যাপক মহেন্দ্র লামা বলেন, ‘পাকিস্তান সিমলা চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে ভারতের ওপর তার কোনো প্রভাব পড়বে না। এমনিতেও পাকিস্তানকে মোকাবিলা করা যাবে এবং সেটা শুধু বলপ্রয়োগের মাধ্যমে, সিমলা চুক্তির মাধ্যমে নয়।’

‘সিমলা চুক্তির এখন কোনো অর্থ নেই। পাকিস্তান প্রতিদিনই তা লঙ্ঘন করছে। সুতরাং এটা ভালো বিষয় যে তারা এখন চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসছে।’ [বিবিসি বাংলা]

সারাবাংলা/এইচআই

কাশ্মীরে হামলা পাকিস্তান ভারত ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা সিমলা চুক্তি