ঢাকা: দ্রুতই বদলে যাচ্ছে শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট খানপুর হাসপাতাল। ডাক্তার ও রোগীদের নিরাপত্তার জন্য চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ হবে। এ ছাড়া অপরাধীদের অবাধ যাতায়াত রুখতে স্থায়ী আনসার ক্যাম্প স্থাপন করা হবে।
‘গ্রিন এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ কর্মসূচির আওতায় শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকালে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট খানপুর হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা এই কথা জানালেন।
জেলার সর্ববৃহৎ এই হাসপাতাল এরিয়াকে সবুজায়ান করতে ১০০০ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপন করা হবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে।
জেলার অন্যতম প্রধান এই স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটিকে একটি আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও জনবান্ধব হাসপাতালে রূপান্তরের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নিয়েছেন সারাদেশে মানবিক ডিসি হিসেবে পরিচিত পাওয়া নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম।
পরিদর্শনের সময় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক তত্ত্বাবধায়ক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), নির্বাহী প্রকৌশলী (গণপূর্ত), রেসিডেন্ট সার্জন (আরএস), কনসালটেন্টসহ হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
জেলা প্রশাসক ডাক্তারদের হাসপাতালের নতুন ভবন পরিদর্শন করে দ্রুত সেখানে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। নার্সদের জন্য নির্মিত নতুন ভবনের কাজ অসমাপ্ত থাকায় সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মাদকের আস্তানা গড়ে উঠেছে—এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। এ ছাড়াও ডাক্তারদের জন্য নির্মিত আবাসিক এলাকা এবং আনসার সদস্যদের জন্য আবাসন সুবিধার প্রয়োজনীয়তা পর্যালোচনা করেন এবং আনসারদের জন্য একটি আবাসন নির্মাণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
পরিদর্শনের সময় তিনি লক্ষ্য করেন, হাসপাতালে হুইলচেয়ারের সংকট রয়েছে, যা অসুস্থ রোগীদের চলাচলে ভোগান্তির কারণ হচ্ছে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি তাৎক্ষণিকভাবে রোগীদের জন্য ৫টি হুইলচেয়ার দেন, যা রোগীসেবায় বড় ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করবে।
এরপর তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড, সেবা কক্ষ ও চত্বর ঘুরে সার্বিক পরিবেশ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পর্যালোচনা করেন এবং ওয়ার্ডগুলোকে সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেবার মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, সেবাগ্রহীতাদের জন্য একটি মানবিক, উন্নত ও সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই প্রশাসনের অন্যতম অঙ্গীকার। তিনি হাসপাতালকে একটি সুগঠিত, আধুনিক ও যুগোপযোগী রূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
‘গ্রিন এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ কর্মসূচির মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেলার স্বাস্থ্য খাতে একটি গুণগত পরিবর্তন সূচিত হবে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা, সেবার মান এবং পরিবেশগত উন্নয়ন নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জকে একটি স্বাস্থ্যসম্মত ও মানবিক শহরে রূপান্তর করার লক্ষ্য সামনে রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট খানপুর হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে ঘুরে দেখে আসতে সহকারী কমিশনার তারিফ আল তওহীদকে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সহকারী কমিশনার তারিফের। তিনি বলেন, ডিসি স্যারের নির্দেশে গতকাল আমি ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট খানপুর হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আমি স্যারকে বিস্তারিত জানিয়েছি। স্যার আজ নিজে সমস্যাগুলো দেখে এসেছেন এবং দ্রুত সমধানের পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসপাতালের সুয়ারেজ সমস্যা, নিরাপত্তা রক্ষায় আনসার মোতায়েন না থাকায় নির্মানাধীন ভবনে মাদকসেবীদের আস্তানা, নিচু বাউন্ডারি ওয়ালের জায়গায় জায়গায় ভাঙ্গা থাকায় চোর ও ছিনতাইকারীদের তৎপরতা সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে আমার মনে হয়েছে। প্রায়শই হাসপাতালে প্রবেশ করে চুরি ও ছিনতাইকারীরা রোগী ও রোগীদের আত্মীয় স্বজনদের মোবাইল ও টাকা পয়সা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল।
৩০০ শয্যা বিশিষ্ট খানপুর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল কাইউম জানান, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতাল ২০০ শয্যা থেকে ৩০০ শয্যায় রুপান্তরিত হলেও অর্গোনোগ্রাম সেই আগেরটায় রয়ে গেছে। এর মধ্যে আবার আরও নতুন করে ৫০০ শয্যার ভবন নির্মিত হচ্ছে। তবে অর্গোনোগ্রাম পরিবর্তন করে লোকবল নিয়োগ না দিলে আশানুরূপ সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। আমরা ডিসি স্যারকে জানিয়েছি যেন উনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ে কথা বলে জনবলের এই সমস্যা স্থায়ী সমাধানে পদক্ষেপ নেন। ডিসি স্যার আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন উনি মন্ত্রাণালয়ে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।