কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন ৩ উদীয়মান স্থপতি
২৭ এপ্রিল ২০২৫ ২১:৩১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চুয়েটসহ তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ‘উদীয়মান স্থপতি’ পেয়েছেন কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড। ষষ্ঠবারের মতো এ আয়োজনে স্বীকৃতি পাওয়া এ তিন শিক্ষার্থীর আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর দূরদর্শিতা ও মেধাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে ঢাকায় বাংলাদেশ স্থাপত্য ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক ও জনপথ এবং সেতু ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
তিন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) রিফাত আল ইব্রাহিম। দ্বিতীয় হয়েছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিরা সারওয়াত ও তৃতীয় হয়েছেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঁধন দাশ।
এছাড়া দুই প্রকল্প উপস্থাপককে বিশেষ পুরস্কার করা হয়েছে। এরা হলেন- চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) খন্দকার মাহাতি ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারিয়া আহমেদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘কাজ করার জন্য আমাদের হাতে যে সময় আছে তা যথেষ্ট নয়। তবু আমরা কিছু কিছু কাজে হাত দিয়েছি নগরকে যানজটমুক্ত বাসযোগ্য করার জন্য। বিভিন্ন কাজে পেশাদারদের সম্পৃক্ত করার কাজও আমরা করে যাচ্ছি। উপযুক্ত জায়গায় উপযুক্ত ও যোগ্য ব্যক্তির নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।’
‘ঢাকা একটি চরিত্রহীন শহর। আমাদের মুগল ঐতিহ্য ছিল। সেটা আমরা ধরে রাখতে পারিনি। বাংলার আবহমান ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারিনি। আত্মপরিচয় ছাড়া টিকিয়ে থাকা সম্ভব না। স্থপতিরাই ঠিক করবেন আমাদের উপযোগি ও উপযুক্ত কোন ঐতিহ্যকে ধারণ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে তরুণ স্থপতিদের উদ্দেশ্যে ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি) সভাপতি ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, ‘কেএসআরএম-আইএবির যৌথ উদ্যোগে প্রতিবছর এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে নতুন পেশায় আগত সৃষ্টিশীলদের স্থাপত্য শিক্ষার মানোন্নয়ন হচ্ছে। তারা মনোযোগি হচ্ছে সৃজনশীল কাজে। প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে। শিক্ষার্থীর প্রতিবছর এমন দিনটির জন্য এক ধরনের অপেক্ষায় থাকে বলা যায়। যা তাদের চিন্তা ও মননকে শাণিত করে।’
কেএসআরএমের মহাব্যবস্থাপক (মার্কেট রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আশফাকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে ষষ্ঠবারের মতো কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড ভবিষ্যৎ স্থপতিদের হাতে তুলে দিতে পেরে আনন্দিত। উদীয়মান স্থপতিদের জন্য এটি একটি স্বপ্ন, দক্ষতা ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব বোধের স্বীকৃতি। আমরা দেখছি তরুন স্থপতিরা তাদের কাজের মাধ্যমে একটি টেকসই, উদ্ভাবনী ও মানবিক বাংলাদেশের কল্পনা রয়েছে। কেএসআরম ১৯৮৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন রড উৎপাদন ও সরবরাহ করে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের সকল স্থাপনা হবে দীর্ঘস্থায়ী ও ভুমিকম্পন সহনশীল। কেএসআরএম রড ৫৫ লাখ সাইক্লিক লোডিং নিতে সক্ষম।’
বিচারকমণ্ডলীর পক্ষে স্থপতি আসিফ মো. আহসানুল হক তার বক্তব্যে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের উপস্থাপনা করা প্রতিটি প্রকল্প অত্যন্ত সুন্দর ও সৃষ্টিশীল মননের সমন্বয়ে গড়া। প্রকল্পগুলো এতোই দৃষ্টিনন্দন, সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক যে কোনটা রেখে কোনটা নির্বাচন করবো খুবই কঠিন। তবু এই কঠিন বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদের চুলছেঁড়া বিশ্লেষণের মাধ্যমে তিনজনকে নির্বাচিত করতে হয়েছে। জুরি বোর্ডের দৃষ্টিকোণ থেকে নিজ নিজ অবস্থানে প্রতিটি প্রকল্পই সেরা।’
এছাড়া স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যাওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর স্থপতি সাকিব আহসান চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন আইএবির সহ-সাধারণ সম্পাদক ড. মো. নওরোজ ফাতেমী, সম্পাদক (শিক্ষা) ড. মো. মারুফ হোসেন, সম্পাদক (প্রকাশনা ও প্রচার) মো. শফিউল আযম শামীম, কেএসআরএমের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম, উপ-মহাব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক, নাজমুল হুদা, আলী কবির, উপ-ব্যবস্থাপক সৈয়দ তানভীরুল হাসান, ব্যবস্থাপক সাইফ মাওলা, প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা মিজান উল হক, মিথুন বড়ুয়া, মো. মুন রহমান মুন্নাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ‘কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ডস ফর ফিউচার আর্কিটেক্টস: বেস্ট আন্ডার গ্র্যাজুয়েট থিসিস’ কর্মসূচির আওতায় ১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেরা গবেষণাপত্রের প্রকল্প প্রদর্শনীর মাধ্যমে জুড়িবোর্ড অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তদের নাম নির্বাচন করেন। কেএসআরএম ও আইএবি’র সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে ২০১৯ সালে। চুক্তির আওতায় এবার ১৫ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ৪৪ গবেষণাপত্র প্রদর্শন করা হবে। রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও স্থপতি ইনস্টিটিউটে এসবের প্রদর্শনী হবে ২৭ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। এরমধ্যে নির্বাচিত তিন সেরা প্রকল্প উপস্থাপনকারী শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়।
সারাবাংলা/আরডি/এসআর