ক্ষতস্থানে পচনের শঙ্কা
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত আরও ১১ যোদ্ধাকে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে
২৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:১৩ | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:২৮
ঢাকা: গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই আন্দোলনে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লাগিয়ে দেওয়া হয় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারীরাও বৃষ্টির মতো গুলি করতে থাকে রাজপথে। বুলেটের আঘাত কেড়ে নিতে থাকে একেকটি তাজা প্রাণ। এ থেকে বাদ যায় না চার বছরের ছোট্ট শিশুও।
বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংঘটিত সেই আন্দোলনে চালানো বর্বর হামলায় আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন জুলাই যোদ্ধারা। কারও কারও শরীরে এখনো রয়ে গেছে ঘাতকদের ছোড়া বুলেট, যা দেশের চিকিৎসায় বের করা সম্ভব নয়। কারও কারও শরীরে বুলেট রয়ে যাওয়ায় ক্ষত স্থানে এরইমধ্যে পচন ধরতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন আহতরা।
জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য জুলাই-আগস্টে আহত ১১ জনকে বিদেশে পাঠাতে সুপারিশ রোজার ঈদের আগে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে কোনো তোড়জোড় নেই। এতে শঙ্কিত বোধ করছেন আহতরা।
অভ্যুত্থানে আহত মো. ডলার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাসা মিরপুর ১০ নম্বরের ঝুটপট্টিতে। গত ৫ আগস্ট ১০ নম্বরের আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ আমাকে গুলি করে। সেদিন গুলিতে আমার খালাতো ভাই রুবেল মারা গেছে। আমার হাতে গুলি লাগার পর পঙ্গু হাসপাতালে এলে চিকিৎসকরা জানায় হাত কেটে ফেলতে হবে। পরে ৬ আগস্ট আমাকে হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে যায়। গুলি লেগেছিল কনুইয়ের উপরে। কিন্তু কনুইয়ের নিচের অনেকটা অংশ ও হাতের একটা আঙুল কেটে ফেলে। তারপর জাতীয় বার্ন এবং প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ছিলাম পাঁচ মাস। এরপর আসি পঙ্গু হাসপাতালে। এখানে আসার পর ডিরেক্টর স্যার দেখে বলল, আপনার তো বাংলাদেশে চিকিৎসা নাই। আপনাকে বিদেশে পাঠাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় নয় মাস হতে চলল। সরকার বিদেশেও পাঠাচ্ছে না, আবার এখানেও চিকিৎসা দিচ্ছে না। এরই মধ্যে হাড়ে ইনফেকশন হয়ে গেছে। হাড়ের ভেতরে এখনো গুলি, সেজন্য হাড় পঁচে যাচ্ছে। আমার হাত পঁচে গেলে কি আমাকে বিদেশে পাঠানো হবে? যে অবস্থা মনে হচ্ছে হাত পঁচে যাবে। চিকিৎসকরা ঠিক মতো চেষ্টা করছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষের তেমন গুরুত্ব দেখতে পাচ্ছি না। এখন কি করব বুঝতে পারছি না। তারা না পাঠালে আমাদের জমিজমা বিক্রি করে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত জয় ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি পেশায় একজন টাইলস মিস্ত্রি। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাই। কুষ্টিয়া থানা এলাকায় পুলিশ আমাদের সামনে একটি ছেলেকে গুলি করে। তখন আমরা সাতজনের মতো আন্দোলনকারী গিয়ে বলি আর গুলি কইরেন না, ছেলেটাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এ সময় পুলিশ আমাদের গুলি করলে সেটা এসে আমার শরীরে লাগে। আমার হাতের কাঁধের জয়েন্ট পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এটার চিকিৎসা সম্ভব না, ইনফেকশন হয়ে গেছে। আমাদের বিদেশ যাওয়ার সব প্রক্রিয়া হয়েছে। কিন্তু এখানো পাঠানো হচ্ছে না, কেন দেরি হচ্ছে- বলতে পারি না।’
এ বিষয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কেনান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আহতদের মধ্যে এখনো কেউ কেউ আছেন যাদের বিদেশে পাঠানো দরকার। তাদের মধ্য থেকে ১১ জনকে বিদেশে পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছি। সেটি এখন প্রক্রিয়াধীন।’
এর আগে, গণঅভ্যুত্থানে আহত ৪০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। সেইসঙ্গে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত আরও ৬০ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলে গত ১৪ এপ্রিল জানান তিনি।
সারাবাংলা/এমএইচ/পিটিএম