Tuesday 29 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফু-ওয়াং ফুডসের সাবেক এমডির বিরুদ্ধে আরও এক মামলা, গ্রেফতার ৩

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৪২ | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:০৯

ফু-ওয়াং ফুডসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আহমেদ চৌধুরী – (ছবি : সংগৃহীত)

ঢাকা: ফ্যাসিবাদের দোসর ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ফু-ওয়াং ফুডসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সম্প্রতি ৭০ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকা সিএমএএম কোর্টে একটি মামলা দায়ের হয় তার বিরুদ্ধে ।

ওই মামলার পর আবারও গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় গত ২৪ এপ্রিল একটি মামলা করেছে ফু-ওয়াং ফুডস কর্তৃপক্ষ। এই মামলায় আরিফ আহমেদ চৌধুরীসহ ২৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। চাঁদাবাজি, হত্যাচেষ্টা ও অর্থ লোপাটসহ একাধিক অভিযোগে আনা হয়েছে এজাহারে। মামলায় আরও অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে অভিযুক্তদের মধ্যে তিন জন বহিরাগত।

বিজ্ঞাপন

মামলার পর এই ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন- মো.সাইদুর রহমান, মো.মজিবুর রহমান ও মো.সুলতান মাহমুদ।

গ্রেফতারতৃত মো.সাইদুর রহমান, মো.মজিবুর রহমান ও মো.সুলতান মাহমুদ – (ছবি : সংগৃহীত)

মামলা সুত্রে জানা যায়, এ মামলার এক নম্বর আসামি হচ্ছেন- ফু-ওয়াং ফুডসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আহমেদ চৌধুরীকে (৫৮)।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খোকন আকন(৩৭), মো.সেলিম হোসেন (৩৫), মো.ফারুক হোসেন( ৪৮), মুনীর হোসেন ভুঁইয়া(৫০), আশরাফুল আলম (৩৪), মো.সাদেকুল ইসলাম (৩৩), মিলন রানী সরকার (৩৮),সাইদুর রহমান (৪০), রাজিয়া বেগম (৩৫), তানভীর আহমেদ (২৩),আলমগীর হোসেন(৩৮), মো.মাহমুদ হক(৩৫), মাহবুব জামান নাহিদ,(৩২),হাসান শিকদার(৩০), আপেল মাহমুদ (৩২), মো.শাহীন গাজী(৩০),মো.জাহিদ হোসেন(৪০),মো.নওয়াব আলী সোহেল(৫০), মেহেদী হাসান সুজন(৪০), মো.রানা(৩৩),মো.মজিবুর রহমান (৪৮),মো.ইজাদুর রহমান (৩৭),মো.সুরুজ্জামান হাওলাদার (২৮),মোছা: মোসুমী আক্তার(৪০), হৃদয় মাহমুদ (২২) এবং অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৮ এপ্রিল সকাল ৮ টায় গাজীপুরের জয়দেবপুরের ফু-ওয়াং ফুডসের প্রতিষ্ঠানে জেনারেল ম্যানেজার মো.আমীর হোসেন অফিসে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করছিলেন। এ সময় আরিফ আহমেদ চৌধুরীর ইন্ধনে ৪ নং আসামি মো.ফারুক হোসেন, ৯ নং আসামি মো.সাইদুর রহমান, ১০ নং আসামি রাজিয়া বেগমসহ কয়েকজন ব্যাক্তি জিএমের রুমের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে তাকে মারপিট করে। এ সময় তারা ল্যাপটপ, টেবিলসহ রুমের অনান্য জিনিসপত্র ভাংচুর করে।

উক্ত হামলাকারীরা জিএম আমীর হোসেনকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে শহীদ তাজ উদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ১৩ এপ্রিল ১৬ নম্বর আসামি আপেল মাহমুদ ওই প্রতিষ্ঠানের শিফট ইনচার্জ আ: বাতেনের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়া মামুনকে ফোন করে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় মিয়া মামুন জাপানে অবস্থান করছিলেন। ফোনে তিনি মিয়া মামুনকে হুমকি দেন চাঁদার টাকা না পেলে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুন করবেন এবং ফ্যাক্টরি ভাংচুর করবেন।

এছাড়াও, গত ১৯ এপ্রিল ও ২০ এপ্রিল রাতে অনান্য আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ফু-ওয়াং ফুডের ফ্যাক্টরিতে প্রবেশ করে জেনেরেটরের ১৪টি ক্যাবল, জেনারেটর কুলিং টাওয়ারের ৪টি মেইন ক্যাবলসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এমন অবস্থায় প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলেও মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবির) পরিদর্শক মো.আব্দুল মান্নান জানান, ফু-ওয়াং ফুডস কোম্পানির দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মামলার বিষয় জানতে চাইলে ফু-ওয়াং ফুডসের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়া মামুন বলেন, ‘সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আহমেদ চৌধুরী কোম্পানির ৭০ কোটি ৮৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকার ভ্যাট-ট্যাক্সসহ বিভিন্ন হিসাব নিকাশ বুঝে না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। আরিফ আহমেদের এসব অপকর্মের সঙ্গী কোম্পানির সাবেক কর্মকর্তা মজিবুরসহ আরও কয়েকজন। তারা ষড়যন্ত্র করে তাইওয়ানের বিনিয়োগকারীদের যেভাবে ফু-ওয়াং এর মালিকানা থেকে সরিয়েছে। ঠিক একইভাবে আমাদেরকেও সরিয়ে পুনরায় প্রতিষ্ঠানটি তাদের করে নিতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে আমার ধারণা।’

জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরির মালিকানা থেকে সরিয়ে তারা তাদের নিজেদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিতে দুরভিসন্ধি করেছে বলে আমার প্রতীয়মান হয়।

কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ করতে সাধারণ শ্রমিকদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে মিয়া মামুন বলেন, ‘অনৈতিকভাবে বেতনের দাবিতে ওই চক্রটি শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখার হীনচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকদের বেতন ভাতা প্রদানের পরও তারা বার বার সাধারণ শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে উস্কে দিচ্ছে। তারা কোম্পানি জিমএমকে অবরুদ্ধ করে মারধোর করেছে। এছাড়াও তারা এমন পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে তাদের ভয়ে ফ্যাক্টরিতে কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যাওয়ার সাহস পায় না৷ উর্ধ্বতন কেউ গেলেই তারা হামলার ভয় দেখায়। তাই বাধ্য হয়ে ফু-ওয়াং ফুডস কোম্পানির পক্ষ থেকে থানায় মামলাটি করা হয়েছে।’

এসব সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই), বিডাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন কোম্পানির বর্তমান এমডি মিয়া মামুন।

সকল অভিযোগ ও দায়ের হওয়া মামলার বিষয়ে জানতে আরিফ আহমেদ চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া মেলেনি।

সারাবাংলা/ইউজে/আরএস

ফু-ওয়াং ফুডস সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আহমেদ চৌধুরী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর