খুলনা: বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আমরা একটা কালো যুগ পার করেছি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষের সকল অধিকার হরণ করেছিল। মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। মানুষকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেয়নি। তারা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেয়নি।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় খুলনা জেলার খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে কেন্দ্র ঘোষিত দেশব্যাপী গণসংযোগ পক্ষ উপলক্ষ্যে সহযোগী সদস্য সংগ্রহ অভিযান-২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৪ সালে তারা ষড়যন্ত্র করে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করেছিল। কেউ নির্বাচনে যায়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল ইতিহাসের আরেক কালো অধ্যায়। যেখানে রাতেই ভোট হয়ে গিয়েছিল। আর এসব নির্বাচনে হাসিনাকে সঙ্গ দিয়েছে জাতীয় পার্টি।
তিন আরও বলেন, জামায়াত দেশ ও জাতির মুক্তি ও কল্যাণের জন্য দীর্ঘ পরিসরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা দেশে একটি ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। আমরা কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে মানবিক বাংলাদেশ গড়বো। আমরা দেশ, দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসি। মানুষের কল্যাণ ও মুক্তিই হচ্ছে জামায়াতের রাজনীতি মূলনীতি।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আর সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বিধান করা। কুরআন-সুন্নাহর আদর্শের দিকে ফিরে আসতে হবে। তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সকলকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, এ এলাকায় এক সময় অসংখ্য সন্ত্রাসী ছিল। কিন্তু আজ আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশে আর কোনো সন্ত্রাসীকে মাথা তুলতে দেবো না ইনশাআল্লাহ।
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আমাদের সন্তানরা জীবনবাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল, আমরাও তাদের সঙ্গে ছিলাম। তারা ফ্যাসিবাদকে বিদায় দিয়েছে। এক বছর আগেও মানুষ চিন্তা করতে পারেনি যে তারা মনের কথা নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু আজ সারাদেশের জনগণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন এবং ইচ্ছামতো কেড়েও নেন। তিনিই মহান সত্তা যিনি যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন; আবার বেইজ্জতিও করেন। তা আমরা জুলাই বিপ্লবে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতার দম্ভে মানুষের ওপর লাগামহীন জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলা না করে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, জেল-জুলম, গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তারা মনে করেছিল যে, তাদের এমন অপশাসন ও দুঃশাসন কেয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী হবে। কিন্তু আল্লাহ জালেমদের ছাড় দিলেও ছেড়ে দেন না।
তিনি বলেন, যারা হাত-পা হারিয়েছে, যারা নির্যাতিত হয়েছে, তারা কখনোই এসব খুনিদের ক্ষমা করবে না। খুনিদের বিচার করতে হবে এবং সকল স্তরে সংস্কার করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে, যেখানে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব থাকবে না।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন জনগণের অধিকার। জনগণই তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। যারা নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার করতে চাইবে জনগণ তাদের প্রতিহত করবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে ন্যায়বিচার থাকবে, বেকারত্ব ও চাঁদাবাজি থাকবে না। যেখানে মা-বোনেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না। আমরা সাম্যের ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।
খানজাহান আলী থানা আমীর সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটোর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মানুনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা সেক্রেটারি ম্ন্সুী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, বায়তুল মাল সেক্রেটারি হাফেজ আমিনুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে থানা কর্ম পরিষদ সদস্য এমদাদুল্লাহ মাসরুর, আবুল কালাম মহিউদ্দিন জাকারিয়া, ৮ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি মাওলানা সাইফুল ইসলাম, ৭ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি আফজাল হোসেন, ৯ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি শামসুর রহমান, থানা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মুরসালিন গাজী, থানা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি সৈয়দ তারিক হাসান প্রমুখ।
গণসংযোগের সময় স্থানীয় মার্কেটের ব্যবসায়ী, পথচারী, স্থানীয় বাসিন্দা, গাড়িচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দাওয়াত প্রদান করা হয়। মানুষ ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে দাওয়াতি আহ্বান শোনেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে অনেকেই সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করে জামায়াতকে সমর্থন জানান। অনেকেই আগামী দিনের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য জামায়াতকে প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।