Tuesday 29 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শঙ্কা কেটে গেছে, হাওরের ৮০ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০০ | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০৯

সুনামগঞ্জের হাওরে চলছে ধান কাটা ও মাড়াই। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: হাওরে বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা প্রায় কেটে গেছে। কারণ, এবার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল কিংবা আকস্মিক বন্যার দেখা নেই। এমনকি এখন পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কাও নেই। আর এরই মধ্যে হাওরের প্রায় ৮০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ। জানা গেছে, এবার হাওরবেষ্টিত সাত জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেখানকার কৃষকরা এখন পর্যন্ত বোরো ধানের ভালো দামও পাচ্ছেন।

এদিকে পুরো দেশজুড়ে এখন চলছে বোরো ধান ঘরে তোলার ভর মৌসুম। এখন পর্যন্ত সারাদেশে ২০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। ঝড় কিংবা শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কৃষক ও কৃষিসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে। গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকাল থেকেই বাঁধটি দিয়ে পানি প্রবেশ করছে বলে জানান স্থানীয়রা। তবে এই বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্ধারিত ফসলরক্ষা বাঁধ নয়। স্থানীয়রা এই বাঁধ যাতায়াতের জন্য তৈরি করেছেন।

অপরদিকে সংরক্ষিত হাওর টাঙ্গুয়ায় এক হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে বলে জানায় স্থানীয় কৃষিবিভাগ। এই বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর এলে হাওরের বোরো ধানের অগ্রগতি নিয়ে শঙ্কা জাগে। পরিস্থিতির খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, এবার হাওরের বোরো ধান নিয়ে শঙ্কা প্রায় কেটে গেছে।

দেশে হাওরভুক্ত সাত জেলা- সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের তথ্যমতে, সাত জেলার ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমির বোরো ধানের মধ্যে কাটা হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৪১ হেক্টর। হাওরে এবার চালের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৩০ টন। সমপরিমাণ জমিতে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তথ্যমতে, হাওরের সাত জেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪৫ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এক হাজার হেক্টর বেশি জমিতে এবার বোরোর আবাদ হয়। এদিকে সারাদেশে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর জমিতে। তবে আবাদ হয়েছে ৫০ লাখ ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে। সারাদেশে এখন পর্যন্ত ২০ শতাংশের কিছু বেশি জমি কাটা শেষ হয়েছে। এবার বোরোতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ২৬ লাখ টনের বেশি।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এরই মধ্যে হাওরের ৮০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছ। হাওরের ধান নিয়ে এখন আর তেমন কোনো শঙ্কা নেই। হাওরের তলদেশের প্রায় সবজমির ধান কাটা শেষ। ফলে পানি ঢুকলেও এখন আর বড় কোনো বিপর্যয় হবে না। যদি পানি ঢুকতে শুরুও করে, যেটুকু জমিতে ধান আছে, আশা করা যায় সেই জমির ধান ঠিকভাবেই কৃষকরা ঘরে তুলতে পারবেন। এবার কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটায় দ্রুত ধান কাটা সম্ভব হয়েছে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত সারাদেশের ২০ শতাংশ জমির বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টি বা বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হয়েছে। তবে এতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। এখন পর্যন্ত বন্যার তেমন কোনো পূর্বাভাসও নেই। তবে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।’

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের কৃষক আবু সালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাওরের ধান কাটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। ৯০০ থেকে সাড়ে ৯০০ টাকা মণে (৪০ কেজি) ধান বিক্রি হচ্ছে।’

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কৃষক মোস্তফা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার ধানের ভালো ফলন হয়েছে। বলা যায়, প্রচুর ফল হয়েছে। ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। এখন ধান সাড়ে ৮০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। আরও সাত দিন পরে হয়তো দাম আরও কিছুটা কমে যাবে। কারণ, তখন সবার ধান উঠে যাবে। বেপারীরা (পাইকার) তখন ধান কম কিনবে।’

অপরদিকে আগামী সাতদিনে দেশে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার তেমন কোনো শঙ্কা দেখছে না বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকারণ কেন্দ্র। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আকস্মিক বন্যা সম্পর্কিত সাতদিনের ধারণাগত পূর্বাভাস সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর অববাহিকার প্রধান নদীসমূহ তথা ভুগাই-কংস নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, ধনু বাউলাই নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, অপরদিকে সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং সকল নদী প্রাক-মৌসুমী বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর অববাহিকা ও তৎসংলগ্ন উজানে গত সাতদিন স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, আগামী সাত দিনে (২৮ এপ্রিল থেকে ৫ মে) সামগ্রিকভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর অববাহিকা ও তৎসংলগ্ন উজানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত সংঘটিত হতে পারে। বর্ণিত সময়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং প্রাক-মৌসুমী বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এ সময় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা কম।

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

৭ জেলা ৮০ ভাগ ধানকাটা বোরো সারাদেশ ২০ ভাগ হাওর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর