হেফাজতের মহাসমাবেশ: ৫ লাখ সমাগমের টার্গেট, আসছে ইসলামী শক্তির ঐক্যের ডাক
২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:১৯ | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ২০:২০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশের কওমি মাদরাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আগামী শনিবার (৩ মে) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশকে সামনে রেখে সারাদেশে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন, কমপক্ষে পাঁচ লাখ লোক সমাগমের লক্ষ্য নিয়ে তারা দেশজুড়ে মহাসমাবেশের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মহাসমাবেশ থেকে নারী সংস্কার কমিশন বাতিল, আওয়ামী লীগের আমলে হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা প্রত্যাহার এবং ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের নৃশংসতাসহ আওয়ামী লীগ আমলে সকল গুম, খুন ও গণহত্যার বিচার দাবি জানানো হবে। মূল এই তিন দাবির পাশাপাশি সর্বোপরি ইসলামী শক্তির ঐক্য ও পুনর্জাগরণের ডাক আসবে এ মহাসমাবেশ থেকে, এমনটাই জানিয়েছেন হেফাজতের নেতারা।
জানা গেছে, মহাসমাবেশ সফল করতে চট্টগ্রামসহ দেশের সকল জেলা, উপজেলায় এবং মাদরাসাকেন্দ্রিক প্রস্তুতি সভা করেছে হেফাজতে ইসলাম। ভারতে প্রণীত ওয়াকফ আইন ও ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করতে গত ২২ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহ ধরে জেলা-উপজেলায় গণসংযোগ করেছে সংগঠনটি। গত শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) জেলা-উপজেলা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সব কর্মসূচিতে মহাসমাবেশের প্রস্তুতিকে জোরালোভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হেফাজত নেতারা।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সকল স্তরে, একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে পর্যন্ত মহাসমাবেশের প্রচারণা চালিয়েছি। আমরা দেখতে পেয়েছি, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সবার মধ্যে একটা জাগরণ তৈরি হয়েছে। আমরা মিনিমাম পাঁচ লাখ লোকের সমাবেশ করতে পারব বলে আশা করছি।’
সংগঠনটির আরেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাদেশ থেকে লাখ লাখ লোকের সমাগম হবে সমাবেশে। সব জেলা, উপজেলা, গ্রামগঞ্জ থেকে লোকজন এদিন ঢাকায় পৌঁছাবে। সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশ হবে স্মরণকালের মধ্যে বৃহত্তম কর্মসূচি।’
হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত নারীনীতিতে নারীর জন্য সম্পত্তিতে সমান ভাগসহ বেশকিছু প্রস্তাব সরাসরি কোরআন-সুন্নাহর বিরোধী বলে মনে করছেন হেফাজতের নেতারা। তারা বলছেন, সংস্কার কমিশনের এ প্রস্তাব ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আঘাত করেছে। সবার দাবি, যেন মহাসমাবেশ থেকে নারীনীতি সংক্রান্ত সকল প্রস্তাবনাসহ নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের জোরালো আওয়াজ তোলা হয়।
এছাড়া বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের নৃশংসতা, ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে চালানো দমন-পীড়ন এবং ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা- সবক্ষেত্রেই হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকেই গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। এসব গণহত্যার জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বিচার চান সংগঠনটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ আমলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে হেফাজতে ইসলামের হাজার, হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শতাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ আট মাস পার হয়ে গেছে। অথব এসব মামলা প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে হেফাজতের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
মহাসমাবেশে এসব বিষয় হেফাজতের নেতারা জোরালোভাবে তুলে ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সুষ্পষ্ট বার্তা দেবেন বলে সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন।
আজিজুল হক ইসলামাবাদী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে এ সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। অথচ গত আট মাসেও আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয়নি। মহাসমাবেশ থেকে এসব মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হবে। আওয়ামী লীগ আমলে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছে। কয়েকবার হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে দেশে কোনো ধরনের রাজনীতি ও ভোট করার অধিকার দেওয়া যাবে না। আমরা স্পষ্টভাবে এ বার্তা তুলে ধরব।’
মীর ইদ্রিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সবাই নারী সংস্কার কমিশনের একটি প্রতিবেন দেখেছি। সেখানে এমন সব ধারা-উপধারা যুক্ত করা হয়েছে, যেগুলো কোরআন-সুন্নাহর সরাসরি বিরোধী। আমরা সংস্কারের পক্ষে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার বিধান লঙ্ঘন করে কোনো সংস্কার আমরা চাই না, ইসলামবিরোধী কোনো সংস্কার আমরা বাস্তবায়ন হতে দেব না। এটা সুস্পষ্টভাবে বলা হবে। এই নারী সংস্কার কমিশন বাতিল করতে হবে।’
‘আপনারা জানেন, এদেশের জনগণ ইসলামপ্রিয়, ধর্মপ্রাণ। যখনই ইসলামের বিরুদ্ধে, কোরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র হয়, তখন সকল মুসলমান এক হয়ে যায়। এখন আবার কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হচ্ছে, যেজন্য দেশের মুসলমানেরা উদ্বিগ্ন। সেজন্য আমাদের সর্বোপরি আহ্বান থাকবে ইসলামী শক্তির ঐক্যের, পুনর্জাগরণের। মহাসমাবেশ থেকে এ ডাক দেওয়া হবে,’ –বলেন মীর ইদ্রিস।
এদিকে মহাসমাবেশের সর্বশেষ প্রস্তুতি জানাতে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদরাসায় এক সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলাম। এতে জানানো হয়েছে, আগামী শনিবার (৩ মে) সকাল ৯টায় সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ শুরু হবে।
এতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মামুনুল হক চার দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হল- নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিল, সংবিধানে বহুত্ববাদের পরিবর্তে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, ফ্যাসিবাদের আমলে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, শাপলা চত্বরসহ সব গণহত্যার বিচার এবং ফিলিস্তিন এবং ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধ।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, ‘যে কমিশন কোরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে সুপারিশ করতে পারে, বাংলাদেশের মানুষ সেই কমিশন মানে না। সংবিধানে বহুত্ববাদ নয়, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।’
সারাবাংলা/আরডি/এসআর
ইসলামী শক্তি ঐক্যের ডাক চট্টগ্রাম হেফাজতে ইসলাম হেফাজতের মহাসমাবেশ