কিশোর ক্রিকেটারের মরদেহ, পিটিয়ে নদীতে ফেলার অভিযোগ সহপাঠীর বিরুদ্ধে
৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৩২ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদী থেকে কিশোর ক্রিকেটারের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার চার সহপাঠীকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, স্কুলে ছোটখাট বিষয়ে বিরোধের জেরে সহপাঠী বন্ধুরা মিলে পিটিয়ে তাকে নদীতে ফেলে দিয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, এ অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য তারা চারজনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে নগরীর চান্দগাঁও থানার হামিদচর এলাকায় এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে কিশোর ক্রিকেটারের মরদেহ ভেসে আসে। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
নিহত রাহাত খান (১২) নগরীর চান্দগাঁও সানোয়ারা ইসলাম বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়া রাহাত চট্টগ্রাম ব্রাদার্স ইউনিয়ন জুনিয়র ক্রিকেট দলের সদস্য ছিলেন। তাদের বাসা নগরীর চান্দগাঁও থানার পূর্ব ফরিদার পাড়া এলাকায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে রাহাত সবার ছোট বলে জানা গেছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকালে যথারীতি স্কুলে গিয়েছিল রাহাত। ছুটির পর আর বাসায় ফেরেনি। পরিবারের সদস্যরা স্কুলে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করেন। এরপর তার নিকট বন্ধুদের কয়েকজনের কাছে গিয়ে তার খোঁজ পাবার চেষ্টা করেন। এরপর সকালে তার মরদেহ ভেসে ওঠার খবর মেলে।
আকস্মিক ছেলেকে হারিয়ে রাহাতের বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন। ছেলের মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না বাবা লিয়াকত আলী ও মা রোজী আক্তার।
রাহাতের মা রোজী আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছেলের সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পরীক্ষা ছিল। সে পরীক্ষা দিয়েছে। এরপর আধাঘণ্টা টিফিন ছুটি ছিল। এরপর আবার ক্লাস দেড়টা পর্যন্ত। টিফিন ছুটিতে যখন বের হয়েছে, তখন বন্ধুরা বলেছে খেলতে যাবে। সে খেলার পাগল। বন্ধুদের সঙ্গে চলে গেছে। আমার ছেলেকে ভুলিয়ে সেখানে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে।’
কেন খুন করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগে একটা ঘটনা ঘটেছে। যাকে পুলিশ ধরেছে, তার সঙ্গে হয়েছে। বেঞ্চে বসা নিয়ে ঝগড়া হয়েছে। ক্লাস টিচার ম্যাডাম এটা জানেন।’
কান্নায় ভেঙে পড়ে রোজী আক্তার বলেন, ‘আমি মৃত্যুর বদলে মৃত্যু চাই। আমার ছেলের খুনির ফাঁসি চাই।’
রাহাতের এক চাচা সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাকে (রাহাত) খেলার কথা বলে হামিদচরে নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে মারধর করে। এরপর নদীতে ফেলে দেয়।’
সানোয়ারা ইসলাম বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবুল মনসুর চৌধুরী সারাবাংলাকে জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে বিদ্যালয় ছুটির পর রাহাতকে তার এক সহপাঠী বন্ধুর সঙ্গে গেটের বাইরে আইসক্রিম খেতে দেখা গেছে। ওই বন্ধুকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চান্দগাঁও থানা পুলিশ নিয়ে গেছে। তারা দুজন একই সেকশনে পড়ে। এ ছাড়া পুলিশ আরও তিন ছাত্র যাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে তারা একই শ্রেণির হলেও ভিন্ন সেকশনের।
তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে রাহাতের বাবা-মা বিদ্যালয়ে গিয়ে সে বাসায় ফেরেনি বলে জানান। এরপর তারা নিজেরাই স্কুলের মাঠে খোঁজাখুঁজি করেন। কিছুসময় পর এক শিক্ষকের কাছে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল করে জানানো হয়, হামিদচরে নদীর তীরে রাহাতের স্কুলব্যাগ, জুতা, প্যান্ট পড়ে আছে। ব্যাগের ভেতর বেতনের রশিদ থেকে ওই শিক্ষকের নম্বর পেয়ে তাকে কল দেওয়া হয়।
বিষয়টি রাহাতের বাবা-মাকে জানান প্রধান শিক্ষক। তখন পরিবারের লোকজন হামিদচরে গিয়ে পরে থাকা ব্যাগ-জুতা, প্যান্ট দেখেন এবং সেগুলো উদ্ধার করেন। তারা বিষয়টি পুলিশকে জানান। বিকেলে পুলিশের টিম ওই বিদ্যালয়ে যায়। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করেন। সেখানে যার সঙ্গে সর্বশেষ রাহাতকে আইসক্রিম খেতে দেখা যায়, তার বিষয়ে পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের জানান তিনি।
প্রধান শিক্ষক আবুল মনসুর বলেন, ‘ওই ছেলের বাসা বাদুরতলায়। রাহাতের পরিবারের লোকজন পুলিশ নিয়ে ওই বাসায় যায়। রাহাতের বাবা আমাদের জানিয়েছে, ওই ছেলে হামিদচরে রাহাতকে নিয়ে যাবার কথা স্বীকার করে এবং আরও তিনজনের নাম বলে। রাতেই চারজনকে পুলিশ নিয়ে যায়। এরপর সকালে রাহাতের বাবা আমাদের ফোন করে জানায় যে, সে আর বেঁচে নেই।’
রাহাতের মায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্কুলে রাহাতের সঙ্গে বন্ধুদের ঝগড়ার বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। তখন আমাদের কাছে কোনো অভিযোগও করা হয়নি। আমি ক্লাস টিচারকে জিজ্ঞেস করেছি, তিনিও কিছুই জানেন না। রাহাতের মা আমাদের বলেছেন, ১০-১২ দিন আগে রাহাত একদিন বাসায় ফিরে উনাকে বলেছে, কয়েকটা ছেলের সঙ্গে তার গণ্ডগোল হয়েছে। তার মা এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়া না করার জন্য বলেছিলেন।’
ঘটনা তদন্তে সানোয়ারা ইসলাম বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।
চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তানভীর আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিবারের অভিযোগসহ সব বিষয় আমরা তদন্ত করে দেখছি। এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।’
সারাবাংলা/আরডি/এইচআই