নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাংলাদেশের মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী
৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:১৬ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:০৬
ঢাকা: সরকার পতিত স্বৈরাচারের জঞ্জাল পরিষ্কারের লক্ষ্যে যে সংস্কার-উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা জনসমর্থনপুষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সংবিধান সংস্কার কমিশনের মতো কিছু কমিশন জনাকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। কিন্তু নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা দেশের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং সরাসরি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শামিল।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তেন আয়োজিত এক সেমিনারে দেশের বিদগ্ধ আলেম-ওলামাগন এসব কথা বলেন। “নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামফোবিয়া: করণীয়” শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ।
বক্তারা বলেন, এই কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ এমন, যা পশ্চিমা মতবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতা, নারীসমাজের প্রকৃত চাহিদা ও জীবনসংগ্রামের সম্পূর্ণ বিপরীত। নারীপাচার, যৌন নিপীড়ন ও দারিদ্র্যজনিত কারণে যারা পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের পুনর্বাসন ও সমাজে স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করার কথা থাকলেও কমিশন বরং এই ব্যাধিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নারীর জন্য অভিশপ্ত জীবনকে আইনি বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে।
তারা বলেন, বাংলাদেশের পারিবারিক আইন বহুদিন ধরে ধর্মভিত্তিক। যেমন মুসলিম পারিবারিক আইন, হিন্দু পারিবারিক আইন, খ্রিস্টান পারিবারিক আইন। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং ভারতের মতো বহু দেশেই প্রচলিত। এই আইনের মাধ্যমে পরিবার গঠিত হয় এবং তা নিয়ে কোনো বড় অসন্তোষও সমাজে নেই। অথচ নারী কমিশন এই ধর্মীয় ভিত্তিকে বাতিল করে নতুন আইনের নামে ধর্মহীন পরিবার কাঠামো চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে তারা ধর্মবিশ্বাসী জনগণকে উত্তেজিত করে ভারতের বিজেপির সাম্প্রতিক সামাজিক বিভাজনের কৌশলের অনুকরণ করছে বলে মনে হয়।
সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়, নারীর জন্য কল্যাণকর প্রস্তাবনার প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত, তাদের সম্মান, নিরাপত্তা ও পারিবারিক মর্যাদা নিশ্চিত করা। অথচ কমিশন যে ভাষায় ও যুক্তিতে তাদের প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে, তা পশ্চিমা দর্শনেরই বিকৃত প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের নারীরা এই ধরনের ভাষা ও মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে না। বক্তাগণ প্রশ্ন করেন, সরকার যে নারীদের কল্যাণে কমিশন গঠন করেছে, সেখানে কীভাবে সবাই একমুখী, ইসলামবিরোধী এবং পাশ্চাত্য চিন্তায় প্রভাবিত হল?
সেমিনারে বক্তারা বলেন, এই প্রস্তাব জনরোষ উসকে দেবে এবং এর সুযোগ নিয়ে পতিত ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। একটি গণ-আন্দোলননির্ভর সরকারকে এই ধরনের বিভ্রান্তিকর কমিশন বিপদে ফেলবে।
সেমিনারে সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নোক্ত দাবিগুলো পেশ করা হয়-
১. নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাব অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
২. কমিশন সরকারিভাবে বাতিল করতে হবে।
৩. নতুন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে দীনদার, শিক্ষিত, দেশীয় চিন্তায় বিশ্বাসী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪. পরিবার ও নারী বিষয়ে প্রস্তাবের ভিত্তি হতে হবে কুরআন-সুন্নাহ, সংবিধান এবং সামাজিক বাস্তবতা।
সেমিনারে বক্তব্য দেন মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম, ডা. শফিকুর রহমান, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, মুজিবুর রহমান মঞ্জু, ড. আহমদ আব্দুল কাদের, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, নুরুল হক নুর, মাওলানা ইউনুছ আহমদ, গাজী আতাউর রহমান, মাওলানা আশরাফ মাহদি, মাওলানা রুহুল আমীন সাদি (সাইমুম সাদী), মুফতি সাকিবুল ইসলাম কাসেমি, আরিফুল ইসলাম অপু, মুফতি আবু মুহাম্মাদ রাহমানি হাফি, মুফতি লুৎফুর রহমান ফারায়েজি, হাফেজ আব্দুল বাসিত আল হাসসানি, মাওলানা হানজালা; শায়খ আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক হাফি; নুরুল ইসলাম বুলবুল, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী; মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন মাওলানা নুরুল হুদা।
সারাবাংলা/এজেড/ইআ