Thursday 01 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পঙ্গু হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তি, অস্ত্রোপচারের পর জায়গা হচ্ছে মেঝে-বারান্দায়

মেহেদী হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ মে ২০২৫ ০৮:২২

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভাঙা হাত-পা নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসছেন রোগীরা। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের এতটাই ভিড় যে হাসপাতালের বারান্দা ও মেঝে রোগীদের দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ। অস্ত্রোপচারের পর বারান্দা ও মেঝেতেই জায়গা হয় তাদের। সেখানেই ব্যক্তিগত বিছানার চাদর পেতে ভোগান্তি নিয়ে থাকছেন রোগীরা।

রোববার (২৭ এপ্রিল) জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) জরুরি বিভাগে সরেজমিনে এমন চিত্রই দেখা যায়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বারান্দা জুড়ে ঠাঁই নেই রোগীর। বিছানার চাদর বা কাঁথা বিছিয়ে শুয়ে আছেন রোগীরা। ফ্যান না থাকায় তীব্র গরমে রোগীকে বাতাস করছেন তার স্বজনরা। রোগীদের কারো হাতে, কারো পায়ে ব্যান্ডেজ করা। আবার কেউ কেউ বারান্দাতে শুয়েই নিচ্ছেন স্যালাইন। তারা যে এই বারান্দায় বেশকিছু দিন ধরে আছেন সেটি বুঝা যায় পাশেই মশারি টানানো দেখে। শয্যা না পাওয়ায় রোগীরা হাসপাতাল থেকে পাচ্ছেন না খাবার। তাই বাইরে থেকেই খাবার কিনে আনতে হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া, বাড়তি রোগী আসায় চাপ সামলাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

বিজ্ঞাপন

বারান্দাতের চাদর-মাদুর বিছিয়েই অবস্থান করছেন রোগীরা।

গাজীপুরের কোনাবাড়ি থেকে আগত জহিরুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা দুর্ঘটনায় পায়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। চিকিৎসক বলেছেন তাকে ভর্তি করাতে হবে, কিন্তু সিট খালি নাই। দুই দিন ধরে আমরা এই হাসপাতালে আছি। সিট খালি হলে আমাদের দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

বরিশাল থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রুবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমার ছেলেকে নিয়ে এসেছি। দুর্ঘটনায় তার হাত ও পায়ের হাড়ে সমস্যা হয়েছে। অপারেশন করা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে এসে সিট পাইনি, তাই বারান্দায় আছি। কিছুটা সেবা পাচ্ছি, সিট পেলে যেরকম চিকিৎসা পাওয়া যেত সেটা পাচ্ছি না। নিজেদের খাবার বাইরে থেকে কিনে আনছি।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক সারাবাংলাকে বলেন, তাদের চিকিৎসায় কোনো কমতি হচ্ছে না। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক রোগী আসছেন। এতে আমাদের ওপর একটা বাড়তি চাপ তো আছেই। সবারই অবস্থা গুরুতর কিন্তু পর্যাপ্ত শয্যা না থকায় তাদের সবাইকে দেওয়া যাচ্ছে না। কোনো শয্যা ফাঁকা হলে তাৎক্ষণিক বঞ্চিত রোগীদের দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালের বারান্দা ও মেঝে রোগীদের দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ। ছবি: সারাবাংলা

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালটিতে চিকিৎসকদের ঘাটতি রয়েছে। তাই পর্যাপ্তভাবে চিকিৎসকদের পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ রোগীদের। আর বাড়তি রোগী আসায় চাপ সামলাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

জানা গেছে, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৩৯০ জন চিকিৎসক রয়েছেন, যেখানে থাকার কথা ছিল ৬৩৪ জন। ২৪৪ চিকিৎসকের পদ এখনো ফাঁকা পড়ে আছে। এ ছাড়া, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীরও সংকট রয়েছে হাসপালটিতে।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কেনান সারাবাংলাকে বলেন, হাসপাতালে ঈদের পর থেকে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। হাসপাতালের ভেতরে এক হাজার ৮৮ জন রোগীর জন্য শয্যা আছে। সংগত কারণেই প্রতিদিন ২৫০ জনের অধিক রোগী জরুরি বিভাগে আসছে। তাই বড় একটা সংখ্যাকে শয্যা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই তারা বারান্দা বা মেঝেতে অবস্থান নিয়েছেন। শয্যা খালি হলেই তাদের দেওয়া হবে। তবে এই রোগীদের ঠিক মতো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, হাসপাতালের আটটি এক্সরে মেশিনের মধ্যে তিনটি সচল রয়েছে এবং পাঁচটি মেশিন দীর্ঘদিন যাবত অচল অবস্থায় পড়ে আছে। সেইসঙ্গে দুটি সিটি স্ক্যান মেশিনও অকেজো রয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৭ এপ্রিল জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে দুদকের অভিযানে এমনই তথ্য উঠে আসে। আর এই স্বল্প যন্ত্রপাতি দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সারা দেশ থেকে আগত রোগীদের। এ ছাড়া, শয্যা সংকট এবং রোগীর প্রচণ্ড চাপ থাকায় অসহায় রোগীদের কাছ বিভিন্ন পরীক্ষা ও স্ট্রেচারের নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন হাসপাতালের অসাধু কর্মচারীরা।

সারাবাংলা/এমএইচ/এইচআই

চিকিৎসা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল পঙ্গু হাসপাতাল রোগীদের ভোগান্তি হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর