শেখ পরিবারের নামে থাকা প্রকল্প বাতিল
ফেরত যাচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণের ২৫ কোটি টাকা
২ মে ২০২৫ ০৮:২৬
যশোর: ফেরত যাচ্ছে শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমির ভূমি অধিগ্রহণের ২৫ কোটি টাকা। মণিরামপুরের মাছনা-বেগমপুরে প্রায় ৫০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্যে প্রাথমিকভাবে এই ২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা শেখ জহুরুল হকের নামে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০২২ সালের ১০ মে। প্রকল্পটি চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। মন্ত্রণালয়েরর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে পাওয়া এই টাকা ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে যশোর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের চারটি অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পের সঙ্গে পাস হয়। প্রকল্পগুলোর জন্য মোট ৩ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারিত হয়েছিল। এরই মধ্যে প্রকল্পগুলোতে ৬৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ও হয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে নামকরণ করা তিনটিসহ কম অগ্রাধিকারের চারটি প্রকল্প বাতিল করেছে। গতবছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রকল্পগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জানা গেছে, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতাভুক্ত প্রকল্প হলো- নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোরের শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি এবং খুলনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার। অন্যটি বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ছয়টি ওপেন-হেডেড ট্যুরিস্ট বাস ক্রয়সংক্রান্ত প্রকল্প।
যশোর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যশোরের মণিরামপুরে শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমির নির্মাণ প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করতে গতবছর মার্চে সরেজমিন পরিদর্শন করেছিলেন সিনিয়র সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম। ওই বছর ২২ মার্চ উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের মাছনা-বেগমপুর মাঠে নির্ধারিত নির্মাণ প্রকল্প পরিদর্শন করেছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের এই সচিব।
এর আগে ২০২৩ সালে শেখ জহুরুল হক পল্লী একাডেমিতে জমি দিতে অস্বীকার করে কৃষক ও চাষিরা সমাবেশও করেছিলেন। তারা কৃষি উৎপাদনশীল ওই জমিতে একাডেমি না করার জন্য আন্দোলনও করেছিলেন। তাদের দাবি ছিল, ওই জমিতে ধান, পাট, গম ও মসুরি চাষ হয়। কোটি টাকা দিলেও তাদের জমি বিক্রি করবেন না। ওই জমি তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি বার বার কৃষকদের চাপ দিয়েছিলেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছিলেন।
পরবর্তী সময়ে ওই এলাকায় ৫০ দশমিক ১০৫ একর জমির জন্য ৩২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা অধিগ্রহণ মূল্য নির্ধারিত হয়। সে অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রত্যাশিত সংস্থার কাছে এই টাকার চাহিদা দিলে তারা যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর ২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা প্রাথমিক বরাদ্দ দেয়।
কিন্তু, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর একপ্রকার স্থবিরতা নেমে আসে প্রকল্পের কাজে। পরে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে যশোরের মণিরামপুরের শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমিসহ ৪ টি প্রকল্প বাতিল করে সরকার। অসমাপ্ত রেখে প্রকল্প সমাপ্ত করার নির্দেশনা আসে যশোর জেলা প্রশাসনেও।
২০২৫ সালের ২৩ জানুয়ারিতে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. আব্দুর রহিমের সই করা চিঠি পাওয়ার পর যশোর জেলা প্রশাসন টাকা ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। সে হিসেবে যশোর জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা অধিগ্রহণের জন্যে সংরক্ষিত টাকা ফেরত দিতে স্থানীয় সরকার ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চায়। মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। সে অনুসারে সব কার্যক্রম দ্রুত শেষ হতে পারে এবং প্রাক্কলিত টাকাও ফেরত যেতে পারে।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন সরকার টাকা ফেরতের বিষয়টি নিশ্চিত করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি অসমাপ্ত রেখে সমাপ্ত ঘোষণা করে টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে। আমরা সে অনুসারে কাজ করছি। খুব শিগগিরই টাকা ফেরত পাঠানো হবে।’
সারাবাংলা/পিটিএম
২৫ কোটি টাকা ফেরত ভূমি অধিগ্রহণ শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি