অটোরিকশা বন্ধে ডিএনসিসির পদক্ষেপ
আসছে ই-রিকশা, চালকদের জন্য থাকবে বিশেষ ট্রেনিং
৩ মে ২০২৫ ১০:০৩ | আপডেট: ৩ মে ২০২৫ ১০:২১
ঢাকা: রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে বেপরোয়া ও অবৈধভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এতে তীব্র যানজটসহ প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না যান্ত্রিক এই রিকশাগুলো। তবে, সম্প্রতি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধে সিটি করপোরেশন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু ঢাকার রাস্তায় অটোরিকশা চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব কি না-তা নিয়ে প্রশ্ন খোদ নগরবাসীর।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, মগবাজার, পল্টন, গুলিস্তান, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। আর এই সড়কগুলোতে বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যান্ত্রিক এই বাহনগুলো। ফলে যেকোনো সময় বড়ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
বেপরোয়াভাবে চলাচল করা অটোরিকশায় আহত তুষার সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিরপুরের পল্লবীতে আমি মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা এসে আমার বাইকটিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এতে আমার এক হাত ভেঙে গেছে এবং হাত-পা ছিলে গেছে। চিকিৎসা নিয়ে এখন বাসায় আছি। অটোরিকশা চালকরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা কারও কথা শোনে না। অটোরিকশা বন্ধ করতে না পারলে আরও অনেক দুর্ঘটনা ঘটবে।’
গৃহিনী জেসমিন আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি স্বামী সন্তানসহ কয়েকদিন আগে শেওড়াপাড়া থেকে কাফরুল যাচ্ছিলাম। রিকশায় ওঠার পর থেকেই বলেছিলাম সাবধানে চালাতে। কিন্তু আমার কথা না শুনে চালক বিমানের মতো অটোরিকশা চালাচ্ছিল। পরে স্পিড বেকারের সামনে গিয়ে চালক যানটি সামলাতে ব্যর্থ হয়। তখন আমরা রাস্তায় পড়ে আহত হই। এ সময় লোকজন এসে আমাদের উদ্ধার করে।’
এ বিষয়ে কথা হলে বেশ কয়েকজন অটোরিকশা চালক সারাবাংলাকে বলেন, দেশে চাকরি নাই, তাই রিকশা চালিয়ে পরিবার চালাই। এটি বন্ধ হয়ে গেলে না খেয়ে থাকতে হবে। আমাদের চাকরি বা অন্য কোনো ব্যবস্থা করে দিয়ে অটোরিকশা বন্ধ করে দিক, তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নাই।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেরকেই অটোরিকশা ভাড়ায় চালান। আবার কেউ কেউ নিজেই কিস্তিতে বা ধার-দেনা করে কিনে চালাচ্ছেন। প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হয় তাদের। তবে এ জন্য ১২ ঘণ্টার বেশি রিকশা চালাতে হয়। এত সময় রিকশা চালালে শারীরিক সক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসে। ফলে ঘটে দুর্ঘটনা।
এদিকে রাজধানীর মূলসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও যানজট নিরসনে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা আর চলতে পারবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তবে ভেতরে সড়কে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের অনুমোদিত ব্যাটারিচালিত রিকশা (ই-রিকশা) চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে কী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তারা রিকশার একটি নকশা তৈরি করেছে। সেই নকশা অনুমোদন করা হয়েছে। অনেকে রিকশার স্যাম্পলও তৈরি করেছেন। আমরা ব্র্যাকের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তারা চালকদের ট্রেনিং দেবে। যারা ট্রেনিংয়ে পাস করবে তারা সিটি করপোরেশনে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন। পরে আমরা কোম্পানিকে ঠিক করে দেব যে, তারা কতটি রিকশা তৈরি করবে। একটি ভোটার আইডিতে আমরা একটি লাইসেন্স দেব।’
অটোরিকশা এখনো কতদিন লাগতে পারে? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অবৈধ রিকশা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করছি। চার্জিং পয়েন্ট বন্ধ করছি। ঢাকা শহরের বিভিন্ন ওয়েল্ডিংয়ের দোকানে রিকশা তৈরি করা হয়, সেগুলো বন্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছি। রাজধানীতে রিকশার জন্য ট্র্যাপার বসিয়েছি, আরও বসাচ্ছি। একসঙ্গে তো আর বন্ধ করা যায় না। কারণ, লাঠিসোঠা নিয়ে লোকজন রাস্তায় নামে। তাই কৌশলগতভাবে আমরা এগোচ্ছি। প্রতিদিন কিছু কিছু করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে আগামী চার/পাঁচ মাসের মধ্যে আমরা বৈধ রিকশা দিয়ে দেব।’
জানা গেছে, নতুন নকশার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ৩০০ জন মাস্টার ট্রেইনার রাখা হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে মাস্টার ট্রেইনার করা হবে।
সারাবাংলা/পিটিএম