ঢাকা: দ্রব্যমূল্য ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় আগামী বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির আয়করসীমা কিছুটা বাড়ানো হতে পারে। এর ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ওপর চাপ কিছুটা কমবে। তবে একদিকে চাপ কমলেও অন্যদিকে বাড়বে। বাজেটে একই সঙ্গে বাড়তে পারে সরকারি সেবা ব্যয় ও মাশুল। এ ছাড়া পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে করহার। সার্বিক রাজস্ব আদায় বাড়াতে অন্তবর্তীকালীন সরকার এ ধরনের কৌশল নিয়েছে বলে বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত দুই অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পরের দুই বছরেই মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। কিন্তু করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। এ প্রেক্ষিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ করদাতাদের ওপর চাপ কমাতে ব্যক্তিগত আয়কর সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর হিসাবে, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত অর্থাৎ গত এক বছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
অতি সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির সভায় ব্যক্তি শ্রেণীর আয়কর সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
অর্থ বিভাগের একটি সূত্র মতে, ব্যক্তিগত আয়কর সীমা খুব বেশি বাড়বে না। শেষ পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা চূড়ান্ত করা হতে পারে।
অর্থ বিভাগ সূত্র মতে, প্রতি বছর সরকারের ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু সেভাবে রাজস্ব আয় বাড়ছে না। আমাদের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাতও সন্তোষজনক নয়। এ প্রেক্ষিতে শুধু আইএমএফ বা অন্য কোনো দাতাগোষ্ঠীর চাপ কিংবা পরামর্শে নয়, নিজেদের প্রয়োজনেই আমাদের সার্বিক রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে বাজেটে কর হার পুনর্বিন্যাস এবং সরকারি সেবা ব্যয় ও মাশুল বাড়ানো হতে পারে।
সূত্র মতে, করমুক্ত আয়সীমার পরের এক লাখ টাকার ওপর বর্তমানে প্রচলিত ৫ শতাংশ কর আরোপ হয়। এ স্তরের পরিধি বাড়ানো হতে পারে। তবে করের হার অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে। নতুন বাজেটে করহার হতে পারে ৫, ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ শতাংশ।
সূত্র মতে, আগামী বাজেটে সরকারি বিভিন্ন পরিষেবা ব্যয় এবং বিভিন্ন ধরনের মাশুল (ফি), সুদ, মুনাফা, স্ট্যাম্প বিক্রি, টোল, ইজারা, ভাড়া ইত্যাদির হার বাড়তে পারে। ফলে এসব সেবা নিতে আগামী অর্থবছরে বর্তমানের চেয়ে একটু বাড়তি খরচ হবে।
ইতোমধ্যেই সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। চিঠিতে বলা হয়েছে, সেবা মাশুল তিন বছর পরপর অথবা প্রয়োজনের নিরিখে যথাসময়ে হালনাগাদ করতে হবে। তবে সেগুলো করতে হবে সেবা দেওয়ার খরচ, জীবনযাত্রার মান, মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনায় রেখে।
এছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেটে তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত হাটবাজারের ইজারা মূল্য কিছুটা বাড়তে পারে। মোবাইল কোর্টসহ যেসব খাতে সরকার জরিমানা ও দণ্ড আরোপ করে, বাড়তে পারে সেগুলোও। এক্সপ্রেসওয়ে, উড়ালসড়কসহ বিভিন্ন সেতু পারাপারের টোল, সেবা ও প্রশাসনিক মাশুল ইত্যাদির হারও কিছুটা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত: সরকারের রাজস্ব আয়ের প্রধান তিনটি উৎস হচ্ছে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও শুল্ক। এ উৎসগুলো থেকে আয় সংগ্রহের দায়িত্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। এর বাইরেও অন্যতম একটি খাত রয়েছে সরকারের রাজস্ব আয় সংগ্রহের, যেটাকে সরকার বলে কর ছাড়া প্রাপ্তি (নন-ট্যাক্স রেভিনিউ), সংক্ষেপে যা এনটিআর নামে পরিচিত। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনটিআর থেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ রয়েছে সরকারের। তবে আগামী অর্থবছরের জন্য এ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।