প্রাইভেটকারে জোড়া খুন: নেতৃত্বদাতা যুবক গ্রেফতার, অস্ত্র উদ্ধার
৩ মে ২০২৫ ১৫:১৩ | আপডেট: ৩ মে ২০২৫ ১৮:০৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরীতে প্রাইভেট কার ধাওয়া করে গুলি চালিয়ে দুজনকে খুনের ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে কারাবন্দী পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের অনুসারী ওই যুবক জোড়া খুনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শুক্রবার (২ মে) রাতে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগরীর বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন।
গ্রেফতার মো. মেহেদি হাসানের (৩৭) বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানা এলাকায়। জোড়া খুনের মামলায় নগরীর বাকলিয়া থানায় দায়ের হওয়া মামলায় হাসান তিন নম্বর আসামি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জোড়া খুনের ঘটনার পর হাসান পালিয়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নলের চর ভূমিহীন বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে সেখানে আত্মগোপনে ছিল হাসান।’
এদিকে শনিবার ভোরে হাসানকে সঙ্গে নিয়ে বাকলিয়া থানা পুলিশ নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার পশ্চিম শহীদ নগর এলাকায় তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুইটি ম্যাগাজিন, দুটি গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করেছে।
‘আমাদের ধারণা, উদ্ধার করা বিদেশি পিস্তলটি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে সেভেন পয়েন্ট সিক্সটি ফাইভ বোরের বিদেশি পিস্তলের গুলির খোসা পাওয়া গিয়েছিল। ধারণা করছি, ওই খোসাটি হাসানের কাছ থেকে উদ্ধার করা পিস্তলের গুলির খোসা হতে পারে। পিস্তল ও খোসাটির ফরেনসিক পরীক্ষা করানো হবে, – বলেন ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন।
গত ২৯ মার্চ গভীর রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার রাজাখালী এলাকা থেকে একাধিক মোটর সাইকেলে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রাইভেট কারকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। প্রাইভেট কারটি বাকলিয়া এক্সেস রোড দিয়ে প্রবেশ করে নগরীর চকবাজার থানার চন্দনপুরায় পৌঁছানের পর থেমে যায়। তখন বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা। এতে দুজন নিহত ও দুজন আহত হন।
নিতরা হলেন, বখতেয়ার হোসেন মানিক ও মো. আব্দুল্লাহ। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। আহতরা হলেন- রবিন ও হৃদয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. রবিন জানিয়েছিলেন, প্রাইভেট কারে চালক ছিলেন মানিক। কারের মালিক আবদুল্লাহ। কারে চালক মানিকের পাশে ছিলেন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত সরোয়ার হোসেন বাবলা। পেছনের সিটে আবদুল্লাহ, রবিন, হৃদয় ও ইমন ছিলেন।
রবিনের অভিযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বী সরোয়ার ছোট সাজ্জাদকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেন বলে তার সন্দেহ ছিল। এজন্য সরোয়ারকে টার্গেট করে ছোট সাজ্জাদের অনুসারী সন্ত্রাসীরা কারে গুলিবর্ষণ করে। তবে সরোয়ার প্রাণে বেঁচে যান।
উল্লেখ্য, ছোট সাজ্জাদ ও সরোয়ার হোসেন বাবলার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্যের বিরোধ চলছে। সেই বিরোধে এর আগেও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
গত ১৫ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা থেকে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর সরোয়ার ও সাজ্জাদের বিরোধ নতুন মাত্রা পায়।
এদিকে জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত বখতেয়ার হোসেন মানিকের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে গত ১ এপ্রিল নগরীর বাকলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাসহ ৭ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় অন্য আসামিরা হলেন,, মোহাম্মদ হাছান (৩৬), মোবারক হোসেন ইমন (২২), খোরশেদ (৪৫), রায়হান (৩৫) ও বোরহান (২৭)।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীর পরিকল্পনা অনুসারে আসামিরা গুলি করে মানিকসহ দুজনকে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় বাকলিয়া থানা পুলিশ বেলাল, মানিক ও সজীব নামে তিনজনকে এর আগে গ্রেফতার করেছে। কারাবন্দি ছোট সাজ্জাদকেও আদালতের নির্দেশে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এরপর তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/এমপি