পাট বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। আমাদের দেশের ভূমি ও জলবায়ু পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ১৯৫১ সালে নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠেছিল আদমজী পাটকলের মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২৬টি সরকারি ও প্রায় ৭৬টি বেসরকারি পাটকল রয়েছে। বর্তমানে সব পাটকলে পাট উৎপাদন হয় না। আবার পাটকলগুলো পুরনো হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাওয়া দুষ্কর। ফলে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় পাট মিলগুলোতে অতিরিক্ত লোকসান হয়ে থাকে।
বর্তমানে বেসরকারি পাটকলগুলো যেভাবে মুনাফা করছে, সেভাবে সরকারি পাটকলগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়- উচ্চমূল্যে পাট ক্রয়, অধিক মজুরি ব্যয়, অতিরিক্ত রূপান্তরিত ব্যয় এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পাট ক্রয় করতে না পারার জন্য দায়ী মনে করেন।
একসময় পাট খাত থেকে প্রধান রপ্তানি পণ্য হিসেবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো। পাট খাত থেকে এখনো আসে রপ্তানি আয়ের একটি ভালো অংশ। পাট থেকে সুতাসহ অন্যান্য পাটসামগ্রী উৎপাদন হয়ে থাকে।
বর্তমানে পৃথিবীতে গড়ে প্রায় ১৯ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করে এবং প্রায় ৩২ লাখ মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। পৃথিবীর মোট উৎপাদনের ২৬.০২ শতাংশ বা ৮.৩৩ লাখ মেট্রিক টন যা বাংলাদেশে উৎপাদন হয়ে থাকে।
আমাদের দেশে সাধারণত বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পাটের প্রধানত দুটি প্রজাতি- ১. সাদা পাট ও ২. তোষা পাট, যা আঁশ হিসেবে বাংলাদেশে চাষ হয়ে থাকে। পাট ও বস্ত্র, পরিবেশ ও বন, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে একটি তদারক সংস্থা হওয়া প্রয়োজন।
পাট খাতের একটি বড় অংশ উন্নত প্রযুক্তির আওতায় ভ্যালু অ্যাডেড প্রডাক্ট উৎপাদন ও রপ্তানি করার সক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারলে এ খাতের চেহারা পাল্টে যাবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের গবেষণা করা যেতে পারে। পর্যাপ্ত গুণগত মানসম্পন্ন বীজ, কীটনাশক, সার, পাট পরিষ্কারের উপকরণ, বীজ শুকানোর শিট ইত্যাদি দিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
নতুন নতুন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে হবে। শুধু কাঁচামাল রপ্তানি না করে পাটের তৈরি পণ্য উৎপাদন করতে হবে। তাহলে দেশ আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হবে এবং রপ্তানি আয়ের বড় একটি অংশ অর্জন করা সম্ভব। পাটজাত দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ ও উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণা হতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও সিড প্যাথলজি কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিল বলেন, ভালো মানের পাটের উৎপাদনের জন্য গুণগত মানের দেশীয় বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ করতে হবে। আমাদের ভালো বীজের অভাব। বীজ উৎপাদন পর্যায়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) পাটের বীজের জন্য কৃষকদের ওপর নির্ভরশীল, তাই মানসম্মত বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকরা বীজ শোধন না করে বীজ বপণ করেন, ফলে ঠিকমতো চারা গজায় না এবং আশানুরূপ উৎপাদন হয় না। তাই কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ভালো মানের বীজ উৎপাদন করা সম্ভব।
দেশে প্রতিবছর কমবেশি ২০ শতাংশ পাট বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়। খুব বেশি আক্রান্ত হলে ৫০ শতাংশ উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। গুণগত মানসম্পন্ন উৎপাদন করতে হলে পাটের রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্য পাট দিয়েই তৈরি করা সম্ভব। পাট থেকে শুধু ছালা, বস্তা, চট এগুলোই উৎপন্ন হয় না। বর্তমানে দেশে নিজস্ব বিনিয়োগকারীরা ১৫০ ধরনের পাটপণ্য উৎপাদন করছে। যদি ফিনিশিং দিয়ে পণ্য তৈরি করতে পারি, তাহলে আমাদের পণ্য বিদেশের বাজারে বিক্রি হবে। পাটের তৈরি জিনিসপত্র পরিবেশবান্ধব। তাই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন ও অন্য দ্রব্যাদি ব্যবহার না করে পাটের তৈরি জিনিস ব্যবহার করতে পারি।
পাট ও পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়িত করা দরকার। পাট খাতের ভবিষ্যত নির্ভর করছে বহুমুখী পাট পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি সম্ভাবনার ওপর। এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া অনেক বেশি জরুরি।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ