Monday 12 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনলাইনে জুয়া: ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তরুণ প্রজন্ম

আজহার মাহমুদ
১১ মে ২০২৫ ১৭:৫৩

সমাজের নানা অন্যায়, অনিয়ম, অসংগতি, বিশৃংখলা এমনকি সমস্যার সৃষ্টি হয় অপকর্মের মাধ্যমে। তেমনি একটি অপকাজ হচ্ছে জুয়া। জুয়া বলতে আমরা বুঝি টাকা দিয়ে একজন অন্যজনের সাথে চ্যালেঞ্জ ধরাকে। আর এই জুয়ার আসর বৃদ্ধি পায় আইপিএল এলে। ভারতীয় এই ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট এলে জুয়ার ছড়াছড়ি নেট দুনিয়ায় লক্ষ্য করা যায়। তবে এখন আর সেটা আইপিএলে সীমাবদ্ধ নেই। ক্রিকেট, ফুটবল থেকে শুরু করে হকি খেলা নিয়েও জুয়া খেলছে তরুণ প্রজন্ম।

বিজ্ঞাপন

আগে আইপিএল এলে জুয়ার আসর বসত বিভিন্ন ছোট বড় চয়ের দোকানে। সেসব দোকানে ভিড় জমে যায় জুয়াড়িদের। আর এখন ঘরে বসেও জুয়া খেলা যায় অনায়াসে। কিছুদিন আগে আমরা খবরের শিরোনামেও দেখেছি বাংলাদেশের একটি গ্রামে মোটামোটি সবাই জুয়া খেলায় আসক্ত। জামালপুর জেলার এই গ্রামে বৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশু পর্যন্ত বুঝে অনলাইন জুয়া। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন জুয়া খেলাটাও তাই সহজ হয়ে উঠেছে।

এই অপকর্মের ফলে সমাজের নতুন প্রজন্মের বেড়ে উঠতে বড় একটি সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে অভিবাবকদের। অনেকে জুয়ায় তার টাকা সব হারিয়ে, নিজের ঘরের টাকা চুরি করে এনে আবার জুয়া খেলে। এটা একটা ভয়ংকর নেশা। এই নেশায় যারা একবার জড়িয়ে পড়ে তাদের এখান থেকে বের হতে বেশ সময় লাগে। বড়ই লোভনীয় একটি নেশা এটি।

সময়ের সাথে সাথে বদলেছে জুয়া ধরণও। আগে একজন আরেকজনের সাথে জুয়া খেললেও এখন সবাই দলবেধে মোবাইলে জুয়া খেলে। অনলাইনে এখন শত শত জুয়ার সাইট রয়েছে। সেসব সাইটের বিজ্ঞাপনও এখন হরহামেশা দেখা মেলে। আমাদের দেশের ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানও বাদ যাননি এমন একটি সাইটের বিজ্ঞাপনি প্রচারণা করা থেকে। এসব জুয়ার সাইটে লাইভ খেলার পাশাপাশি দেখা মেলে ক্যাসিনো খেলাও। যেখানে আছে কার্ড, লুডু– থেকে শুরু করে হরেক রকমের খেলা। এক ক্লিকে টাকা আসে আরেক ক্লিকে টাকা যায়। তাছাড়া বিশ্বের যেখানেই খেলা হোক না কেন, জুয়ার সাইটে সেই খেলা নিয়ে জুয়ার সুযোগ থাকবেই। মজার বিষয় হচ্ছে এসব সাইটে প্রবেশ না করলে বুঝা যাবে না জুয়া কত প্রকার ও কি কি। কে গোল দিবে, কয়টা গোল দিবে, কে সেঞ্চুরি করবে, কে উইকেট পাবে এমনকি প্রতি বলে বলে পর্যন্ত জুয়া খেলা যায় এসব সাইটে।

বিজ্ঞাপন

আর এই নেশায় মগ্ন হয়ে অনেকে টাকার জন্য মানুষের কাছ থেকে ছিনতায় এবং চুরি ডাকাতি করার মতো বড় অপরাধের দিকে ঝুকে পড়ে। কেউ নিজের বাবার পকেট থেকে, কেউ মায়ের অলংকার, কেউ নিজের স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে জুয়ার টাকা জোগাড় করে। মূলত মোবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে জুয়ার টাকা লেনদেন করা হয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে এসব সাইট যারা চালায় তারা টাকা লেনদেন করলেও প্রশাসনের তেমন তদারকি নেই। দিনে দিনে এসব জুয়ার সাইট এতোটাই সহজলভ্য হয়ে পড়েছে যে এখন প্রতিটি এলাকায় এলাকা এসব জুয়ার সাইটের এজেন্ট পাওয়া যায়। বিকাশ, নগদ, রকেটে টাকা পেমেন্ট করলেই জুয়ার সাইটের একাউন্টে চলে যায় টাকা। যেই টাকা দিয়ে জুয়া খেলা যায় ঘরে বসে।

আসলে এই জুয়ার মূলে হচ্ছে বেকারত্ব। বেকার ছেলেরাই এই নেশায় বেশি আসক্ত। আজকাল দেখা যায় শিক্ষিত স্কুল কলেজের ছাত্ররাও এই জুয়ার নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে। সত্যি বলতে, সামন্য লোভ থাকলেই এই নেশায় যাওয়া কোনো ব্যপার না। আপনার বন্ধু, সহকর্মী, সহপাঠি যখন এখান থেকে আয় করছে তখন আপনি কেন করবেন না, এমন চিন্তা থেকেই এই পথে পা বাড়ায় বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু দিনশেষে সবাই সর্বস্ব হারায়।

এ ব্যপারে অভিবাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। সন্তান কি করে, সন্তানের ফোনে কোন কোন অ্যাপস রয়েছে সেসব নজরে রাখাও এখন অভিবাবকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লক্ষ করবেন হঠাৎ করে আপনার সন্তানের হাতে বেশকিছু টাকা চলে এসেছে। অনেক অভিবাবকই আছেন যারা সন্তানের কাছে এতো টাকা কীভাবে এলো সেটা জানতে চায় না। কিংবা বিষযটাকে গুরুত্ব দেয় না। সে ক্ষেত্রে বলা যায় অনেক অভিবাবকেরও দায় রয়েছে এই ক্ষেত্রে। আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে আগে আমাদের নিজেদের সচেতন হওয়া জরুরূ। তারপর আমরা আইন এবং প্রশাসনের সহযোগিতা পাবো। প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবী প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, পৌরসভা সহ সকল অলিগলিতে তল্লাশী চালিয়ে এই জুয়ার আসর বন্ধা করা হোক। এই জুয়ার আসর যদি আজ বন্ধ না হয় তবে কাল অন্য একজন ছেলে সেই জুয়ার আসরে বসতে সুযোগ পাবে। এভাবে নষ্ট হয়ে পড়বে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম। তাই প্রজন্মকে বাচাঁতে এবং দেশকে রক্ষা করতে হলে জুয়া নামক এই ভয়নাক খেলা থেকে বিরত রাখতে হবে সকল শ্রেনী পেশার মানুষদের। আগেও বলেছি, এই ভয়ানক নেশায় জড়িয়ে পডার অন্যতম কারণ হচ্ছে বেকারত্ব। তাই বেকরত্ব দূরীকরণে এই সমস্যার সমাধান অনেকটাই কমে আসবে। জুয়ার এই নেশা বন্ধ করার জন্য প্রয়োজন অধীক পরিমাণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। বাংলাদেশে যতজন বেকার রয়েছে তার ৫০ শতাংশ কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। তাই বর্তমান সরকারের কাছে আকুল আবেদন দেশে যেনো পর্যাপ্ত পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয় এবং বেকারত্ব দূর করা হয়। তবেই দেশে এই ধরনের জুয়ার নেশায় আর কোনো ছেলে নষ্ট হবে না।

লেখক: সাংবাদিকতা

সারাবাংলা/এএসজি

অনলাইনে জুয়া আজহার মাহমুদ মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর