Wednesday 14 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জলবায়ু পরিবর্তন ও তার প্রভাব

মো. আরিফুল ইসলাম আকাশ
১৪ মে ২০২৫ ১২:৩৫ | আপডেট: ১৪ মে ২০২৫ ১৫:১৮

জলবায়ু হলো কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যমান আবহাওয়ার গড় অবস্থা। এতে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বাতাস, আর্দ্রতা এবং ঋতুচক্রের বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। সাধারণত ৩০ বছরের বা তারও বেশি সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি স্থানের জলবায়ু নির্ধারণ করা হয়।

কেন এই জলবায়ু পরিবর্তন হয়?

প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু যে মাত্রায় এখন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতেছে তা মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ডেই প্রধানত দায়ী।

গবেষকদের মতে ‘মানুষ যখন থেকে কল-কারখানা এবং যানবাহন চালাতে বা শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে শুরু করলো সেই সময়ের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে’। বায়ুমণ্ডলে অন্যতম একটি গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ উনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ।

বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। ফলে, সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ পরিণতি কী হতে পারে?

জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং মানব সমাজের উপর প্রভাব ফেলে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী ক্রমশ উষ্ণ হচ্ছে, আবহাওয়া আরও চরম হচ্ছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী, মানব বসতি এবং সমাজের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।বিজ্ঞানীরা বলছেন, বরফের আচ্ছাদন বিলীন হওয়ার কারণে কার্বন নি:সরনের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। যার ফলে, পরিস্থিতি দিনকে দিন বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ পরিণতি গভীর ও বহুমাত্রিক হতে পারে। যদি বর্তমান হারে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও পরিবেশ দূষণ চলতে থাকে:

বিজ্ঞাপন

১. প্রাকৃতিক দুর্যোগের বৃদ্ধি:

ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন ও তীব্র হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে, যার ফলে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হবে।

২. খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি:

ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। মাটি ও পানির গুণমান কমে যাবে। কৃষি নির্ভর দেশগুলোর জন্য এটি মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

৩. মানব স্বাস্থ্য বিপর্যস্ত হবে:

ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের বিস্তার বাড়বে। পানি ও বায়ুবাহিত রোগ বাড়বে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে হিটস্ট্রোক ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগও বাড়তে পারে।

৪. জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি:

অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে পড়বে। বনাঞ্চল ধ্বংসের হার বাড়বে। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

৫. অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা:

জলবায়ু উদ্বাস্তু বাড়বে (যারা বসবাসের জায়গা হারাবে)। বিভিন্ন অঞ্চলে পানি, খাদ্য ও বসতির জন্য সংঘাত দেখা দিতে পারে।

জলবায়ু স্বাভাবিক রাখতে করণীয়

বর্তমান সময়ে মনুষ্যজনিত গ্রিনহাউজ গ্যাসের ফলে পৃথিবীর উষ্ণায়নকে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অন্যতম কারণ ধরা হয়। যেটি কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধিরতে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সর্বোপরি জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশেষ কোনো অঞ্চল বা জনগোষ্ঠী নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের মুখে পড়েছে সারাবিশ্বের মানুষ। এটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই যে, এর প্রভাব শুধু অনুন্নত দেশগুলো ভোগ করবে। বিশেষ করে গত ২০ বছরে এই প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে আমেরিক মহাদেশেও।

বিজ্ঞাপন

বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচকের (সিআরআই) এক গবেষণায় দেখা গেছে, গেল ২০ বছরে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কুফলে মারা গেছে ৫ লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। আর এর সরাসরি ফলাফল হিসেবে আবহাওয়া বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে ১১ হাজারটি। অতিখরা, অতিবৃষ্টি, প্রলয়ঙ্করী ঝড়, তীব্র শীত, অসহনীয় তাপপ্রবাহ, করাল বন্যা ও ভূমিধস আমাদের জানিয়ে দেয় জলবায়ু পরিবর্তন এক কঠিন বাস্তবতা, এক মূর্তিমান চ্যালেঞ্জ।

আমাদের করণীয়

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হলে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস লাগবেই লাগবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে মানুষকে সজাগ ও সচেতন করতে হবে। কলকারখানায় কালো ধোঁয়া নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে। সিএফসি নির্গত হয়- এমন যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমাতে হবে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে ধুসর হয়ে যাচ্ছে সব সবুজ।

বনভূমি ধ্বংস বন্ধ করতে হবে এবং বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন বাড়াতে হবে। সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সন্ধান করতে হবে। প্রকৃতির ওপর মানুষের বিরূপ আচরণ বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দেশের সরকার ব্যাপক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট গঠন করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচলনা করছে।

পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-উদ্ভাবন ও অর্থায়নের যুগে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে যা সম্মিলিতভাবে কাজে লাগাতে হবে। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু দূষণ রোধে আমাদের সম্মিলিতভাবে সচেতন ও কার্যকর ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। যানবাহনে সিএনজি বা বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া উচিত। গাছপালা লাগানো ও সংরক্ষণ জরুরি, কারণ বৃক্ষ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। শিল্প-কারখানায় বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পরিহার করে পুনঃব্যবহারযোগ্য সামগ্রী ব্যবহার করা উচিত। জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সবাইকে পরিবেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জলবায়ু রক্ষায় প্রতিটি পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঝালকাঠি সরকারি কলেজ

সারাবাংলা/এএসজি

জলবায়ু পরিবর্তন মুক্তমত মো. আরিফুল ইসলাম আকাশ