Saturday 17 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বদলে চাই স্বস্তিকর বাসযোগ্য শহর

উম্মে সালমা
১৭ মে ২০২৫ ১৬:৫৯

অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নোংরা- রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন নগরী। ঢাকা যানজট ও অপরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে পরিণত হয়েছে। ২০২৪-এর হিসাব অনুযায়ী ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যা হলো ২ কোটি ৩২ লাখ ১৫ হাজার ১০৭ জন। জনঘনত্বের বিচারে ঢাকা হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশী জনঘনত্বপূর্ণ মহানগরী। শুধুই ঢাকায় না বিভিন্ন নগরীতে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যত মানুষ মারা যাবে, তার কয়েকগুন বেশি মারা যাবে আগুনে পুড়ে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে।

বিজ্ঞাপন

ভূমিকম্পের পর গ্যাসলাইনে বিস্ফোরণ ঘটবে। সেই আগুনে পুড়ে পুড়ে পুরো নগর দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে ময়লাস্তুপের কারণে। ভূগর্ভস্থ পানি ও আশপাশের নদী জলাশয়ের পানি নগরে বন্যার সৃষ্টি করবে। উদ্ধার কাজে সাধারণ সময়ে যারা মূল ভূমিকা রাখেন, সেই ফায়ার সার্ভিসের অস্তিত্ব থাকবে কি-না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। রাজধানী ঢাকা এবং বিভিন্ন নগরীতে তেমন আশঙ্কা বুকে চেপে রেখে দিন রাত পার করা হচ্ছে।

নানা সংকটে জর্জরিত রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন নগরবাসীর অবস্থা চরম উপরে উঠছে। যানজট, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট, চাঁদাবাজি, মশার উপদ্রব প্রভৃতি সমস্যাকে নিত্যসঙ্গী করে বসবাস করছেন সবাই। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, ছিন্নমূল বস্তিবাসি সবাইকে এক ধরনের অস্থিরতা, অতৃপ্তি, অশান্তি নিয়ে থাকতে হচ্ছে এই শহরে। এতো সমস্যা, সংকট, অস্বস্তি, অস্থিরতা, অনিশ্চয়তার কথা জানার পরও প্রতিদিনই গ্রাম ছেড়ে ঢাকা বা চট্টগ্রাম শহরে পা রাখছেন অগণিত নারী-পুরুষ। শুধুমাত্র দারিদ্র্যের কারণেই শহরমুখী হচ্ছেন তা কিন্তু নয়।

সচ্ছলতা থাকার পরও আজকাল অনেকেই গ্রাম ছেড়ে অপেক্ষাকৃত মানসম্মত জীবনযাপনের আশায় শহরে চলে আসেন। গ্রামগুলো আগের চেয়ে অনেকটা উন্নত হলেও সামাজিক কাঠামোতে আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন হয়নি। প্রাণহানি ঘটছে প্রতিনিয়ত। গ্রামীণ সমাজ জীবনে অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় বিরক্ত হয়ে শহরে চলে আসছেন। বাসা ভাড়া করে পরিবার পরিজন নিয়ে উঠছেন। আবার সন্তানদের উচ্চতর শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে কেউ কেউ শহরমুখী হচ্ছেন। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সামলাতে গিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বেসামাল নগরীতে পরিণত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

শহর বা নগরকে একটি সুন্দর উন্নতমানে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা দরকার। শহরে আমরা যারা বাস করছি, তাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব রয়েছে শহরটিকে সুন্দর আকর্ষণীয় করে তোলার ব্যাপারে। এ শহরকে নিজ বসতবাড়ি, ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের মতো ভালোবাসতে হবে। তাহলেই একে পরিচ্ছন্ন, বসবাস উপযোগী সুন্দর নগরীতে পরিণত করা সম্ভব হবে। পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর শহর গড়তে নগরবাসীর আন্তরিক সহযোগিতাই সফলতার শক্তি।

সামনেই আসছে বর্ষাকাল। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বর্ষার পানিতে ডুবে যায় নগরের অলিগলি। শহরের অধিকাংশ ফুটপাথ দখল করে আছে দোকানপাট। যার সমাধান এখনো পরিপূর্ণভাবে হয়নি। শুধু তাই নয়, যখন তখন যে কেউই তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী শহরের ফুটপাতে দোকান তুলছেন। এই দখল প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়নি এখনো। ফুটপাত দখল উচ্ছেদ করা হলেও কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই উচ্ছেদের জায়গাগুলো আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। এই শহরে সারি সারি ভবন আর রাস্তাঘাটের বিস্তৃতি ঘটছে, কিছু কিছু এলাকার চাকচিক্য সৌন্দর্য বাড়ছে তবে সেই তুলনায় বস্তির কোনো উন্নয়ন হয়নি। খেলার মাঠে নেই খেলাধুলার পরিবেশ। ঢাকাসহ বিভিন্ন নগরীর বিভিন্ন জায়গায় এরকম বহু খেলার মাঠ হারিয়ে গেছে।শিশু-কিশোররা খেলার মাঠের অভাবে ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি হয়ে মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে এবং অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে। তাদের যথার্থ মানসিক, শারীরিক গঠন এবং বিকাশ ঘটছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে খেলার মাঠের অভাব দূর করতে হবে। এজন্য প্রতিটি শহরের ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যত্রতত্র গড়ে উঠছে শপিং সেন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল। আবাসিক এলাকাগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। ঝুলন্ত তারের নগরীতে পরিণত হচ্ছে শহরগুলো। অল্প বৃষ্টিতেই নগরীর রাস্তাঘাট তলিয়ে যাচ্ছে, পানিবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

সর্বোপরি, নগরীতে পার্ক, খেলার মাঠ, বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণ ও সংস্কার করে, দূষণমুক্ত পরিবেশ, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ড্রেনেজ সমস্যার সমাধানসহ নাগরিক ভোগান্তি দূর করা দরকার। আমাদের রাজধানীসহ বিভিন্ন নগরী দুর্ভোগের শহর হিসেবে বিবেচিত হোক, তা আমরা কোনোভাবেই প্রত্যাশা করি না। আমরা মনে প্রাণে চাই, একটি চমৎকার ও সুন্দর বাসযোগ্য স্বস্তিকর শহরের, যা শান্ত সুনিবিড় শহর হিসেবে গণ্য হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ

সারাবাংলা/এএসজি

অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ উম্মে সালমা মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর