এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে কিছুদিন আগে। দীর্ঘ প্রস্তুতি, পড়ালেখা ও পরীক্ষা শেষে এখন পরীক্ষার্থীরা এক প্রকার অবসরে রয়েছে। অনেকে একে ‘স্বস্তির সময়’ বললেও, এই সময়কে ‘সুবর্ণ সময়’ বলাই শ্রেয়—কারণ, এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে গড়ে তোলার ভিত্তি তৈরি করতে পারে।
এসএসসি ফলাফল প্রকাশ এবং কলেজে ভর্তি পর্যন্ত এই সময়কালকে অধিক ফলপ্রসূ ও প্রস্তুতিমূলক করে তোলার জন্য শিক্ষার্থীদের কী কী করা উচিত, তা নিচে বিশদভাবে আলোচনা করা হলো।
১. মানসিক ও শারীরিক বিশ্রাম
পরীক্ষা শেষে এক ধরনের চাপমুক্তি আসে, এবং এটা স্বাভাবিক। প্রথম ১-২ সপ্তাহ একটু বিশ্রাম, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, ঘুরতে যাওয়া—এসব মানসিকভাবে প্রশান্তি দেয়। তবে এই বিশ্রাম যেন দীর্ঘদিনের অলসতায় পরিণত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
২. নিজেকে জানো, আগ্রহ খোঁজো
এখন সময় নিজের আগ্রহ ও স্বপ্ন নিয়ে ভাবার। শিক্ষার্থীরা নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে পারে:
আমি কী বিষয়ে আগ্রহী?
আমি কী ধরনের পেশায় নিজেকে ভবিষ্যতে দেখতে চাই?
আমি কী বিষয়ে ভালো বা কৌতূহলী?
এই উত্তরগুলো ভবিষ্যৎ শিক্ষা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনার ভিত্তি হতে পারে।
৩. কলেজ ও বিষয় নির্বাচনের প্রস্তুতি
এসএসসি রেজাল্ট প্রকাশের পরই শুরু হবে কলেজে ভর্তির প্রতিযোগিতা। তাই এখন থেকেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত:
কোন কলেজে ভর্তি হতে চাই (সরকারি / বেসরকারি / রেসিডেন্সিয়াল)?
কোন বিভাগ বেছে নেব (বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা)?
আগ্রহ ও রেজাল্টের সম্ভাব্য ফল অনুযায়ী বিকল্প কলেজ তালিকা তৈরি
প্রয়োজন হলে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া (বিশেষ করে নামকরা কলেজগুলোর জন্য)
অনলাইনে কলেজ ও বিভাগ সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান করা
৪. নতুন কিছু শেখা: স্কিল ডেভেলপমেন্ট
বর্তমান যুগে একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি দক্ষতা অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবসর সময়টা কাজে লাগিয়ে নিচের বিষয়গুলো শেখা যেতে পারে:
কম্পিউটার স্কিলস: MS Word, Excel, PowerPoint, টাইপিং
প্রোগ্রামিং: Python, HTML, CSS (যারা প্রযুক্তি পছন্দ করে)
গ্রাফিক ডিজাইন / ভিডিও এডিটিং / ফটোগ্রাফি
ইংরেজি ভাষা দক্ষতা: কথোপকথন, গ্রামার, রাইটিং, IELTS প্রস্তুতি
অনলাইন কোর্স: Coursera, Udemy, Khan Academy, YouTube
এই স্কিলগুলো কলেজ জীবন এবং ভবিষ্যতের ক্যারিয়ারে বিশেষভাবে কাজে লাগবে।
৫. পাঠ্যাভ্যাস বজায় রাখা
পরীক্ষা শেষ মানেই বই থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হওয়া নয়। সাধারণ জ্ঞান, ইংরেজি শব্দ ভাণ্ডার, ম্যাথ প্র্যাকটিস বা যেকোনো একটি প্রিয় বিষয়ের বই পড়া—এই অভ্যাস কলেজ পর্যায়ে পড়াশোনায় বড় সুবিধা দেবে।
৬. সৃজনশীল কাজ ও হবি চর্চা
গান, ছবি আঁকা, কবিতা লেখা, গল্প বলা, ভিডিও বানানো, আবৃত্তি—এসব সৃজনশীলতায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা মানসিক বিকাশে সহায়ক।
বিতর্ক, কুইজ, বিজ্ঞান প্রকল্প, বাগান করা, এমনকি ছোটখাটো ব্লগ বা ইউটিউব চ্যানেল শুরু করাও একটি ভালো দিক হতে পারে।
৭. সমাজসেবা ও নেতৃত্বগুণ বিকাশ
বিভিন্ন সেবামূলক কাজে যুক্ত হওয়া যেমন—বৃক্ষরোপণ, রক্তদানের ক্যাম্পেইন, পরিচ্ছন্নতা অভিযান বা শিশুদের শিক্ষা সহায়তা—এসব কাজ ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গঠনে সাহায্য করবে।
৮. ভবিষ্যৎ পেশা ও উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে জানাশোনা
এখন সময় নিজের স্বপ্নের পেশা ও প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে জানার:
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, উদ্যোক্তা, প্রোগ্রামার, ডিজাইনার, সাংবাদিক ইত্যাদি
এই পেশাগুলোর জন্য কী পড়তে হয়, কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ ভালো, স্কলারশিপ বা বিদেশে পড়ার সুযোগ—এসব বিষয় নিয়ে রিসার্চ করা।
এসএসসি পরবর্তী সময়টা হলো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকের আগের প্রস্তুতিমূলক অধ্যায়। এটি এমন এক সুযোগ, যা একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনযাত্রার মান নির্ধারণ করে দিতে পারে। এই সময়কে যিনি গুরুত্বসহকারে আত্মউন্নয়নের জন্য কাজে লাগাবেন, তার ভবিষ্যৎ হবে সম্ভাবনাময়, গতিশীল ও আত্মবিশ্বাসে ভরা। অবসরকে অলসতা নয়, আত্মগঠনের সুযোগ হিসেবে দেখুন।
যাদের হাতে সময়, তাদের হাতেই ভবিষ্যতের নিয়ন্ত্রণ।
এসএসসি পরবর্তী সময়টা হলো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকের আগের প্রস্তুতিমূলক অধ্যায়। যারা এই সময়কে গুরুত্বসহকারে, আত্মউন্নয়নের দিকে কাজে লাগাবে, তাদের ভবিষ্যৎ হবে আরও সম্ভাবনাময়।
অবসরকে অলসতা নয়, আত্মগঠনের সুযোগ হিসেবে দেখুন। যাদের হাতে সময়, তাদের হাতে ভবিষ্যৎ।
লেখক: প্রভাষক, বি জে এস এম মডেল কলেজ, মনোহরদী, নরসিংদী