তরুণরা একটি জাতির প্রাণশক্তি। তাদের অফুরন্ত উদ্যম, উদ্ভাবনী চিন্তা এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। প্রথাগত রাজনীতির জরাজীর্ণ কাঠামোতে তারুণ্যের প্রবেশ প্রায়শই স্থবিরতা ভেঙে নতুন পথের দিশা দেখায়। তারা কেবল ভোট প্রদানকারী হিসেবে নয়, বরং সক্রিয় অংশীদার হিসেবে রাজনীতিতে অংশ নিতে চায়। বর্তমান সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তরুণদের রাজনৈতিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা একটি ইতিবাচক দিক। তারা কেবল নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা সম্পর্কেও অবগত। এই দায়বদ্ধতার অনুভূতিই তাদের রাজনীতিতে আসতে উৎসাহিত করে।
তারুণ্যের রাজনীতিতে আসার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পরিবর্তন আনার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। তারা বিদ্যমান ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করতে পারে এবং সেগুলোর সমাধানে নিজেদের অবদান রাখতে চায়। প্রথাগত রাজনীতির বাইরে গিয়ে তারা নতুন ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে, যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের অংশগ্রহণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারের ফলে তরুণরা এখন খুব সহজেই রাজনৈতিক তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে এবং নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। এটি তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে এবং তাদের মধ্যে সমষ্টিগত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রবণতা বাড়িয়েছে।
এছাড়াও, তরুণরা প্রায়শই আদর্শবাদী হয়। তারা বিশ্বাস করে যে, সঠিক নীতি ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এই আদর্শবাদ তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে, বৈষম্য দূর করতে এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে অনুপ্রাণিত করে। তারা শুধু নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়েই ভাবে না, বরং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্ন তাদের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে উৎসাহিত করে। তাদের এই অংশগ্রহণ কেবল নিজেদের জন্য নয়, বরং বৃহত্তর সমাজের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করে। তারা যখন রাজনীতিতে আসে, তখন তারা একটি নতুন বার্তা নিয়ে আসে – সেই বার্তা হলো পরিবর্তন, উন্নতি এবং ন্যায়বিচার। প্রথাগত রাজনীতির দীর্ঘদিনের জট কাটিয়ে তারা নতুন এক পথ তৈরি করতে চায়, যেখানে সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর শোনা যায় এবং তাদের প্রয়োজনগুলো পূরণ হয়।
তরুণদের মধ্যে থাকা এই ইতিবাচক শক্তি প্রায়শই সমাজে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। তারা কেবলমাত্র পুরনো সমস্যাগুলোর দিকে তাকায় না, বরং সেগুলোর আধুনিক এবং কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। ডিজিটাল যুগে বেড়ে ওঠার কারণে তারা প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে খুবই সচেতন এবং এই জ্ঞানকে তারা রাজনৈতিক সক্রিয়তায় কাজে লাগাতে দ্বিধা করে না। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহার করে তারা তাদের বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারে এবং জনমত গঠন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার, যা প্রথাগত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরেও তাদের শক্তিশালী করে তোলে।
এছাড়াও, তরুণদের মধ্যে থাকে এক ধরনের অক্লান্ত উদ্দীপনা এবং ঝুঁকি নেওয়ার সাহস। তারা প্রচলিত ব্যবস্থার প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিতে ভয় পায় না এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পিছপা হয় না। এই সাহস তাদের অনেক সময় কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও অবিচল থাকতে সাহায্য করে। তাদের এই মানসিকতা অনেক সময় পুরনো ধ্যান-ধারণা ভেঙে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এবং সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতিতে সহায়ক হয়। এই কারণেই তারুণ্যের রাজনীতি কেবল বর্তমানের নয়, ভবিষ্যতেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হয়। তারা যখন রাজনীতিতে আসে, তখন তারা শুধু ব্যক্তিগত লাভ বা ক্ষমতা অর্জনের জন্য নয়, বরং একটি বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনের জন্য কাজ করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাদের রাজনীতিকে আরও মহৎ এবং অর্থবহ করে তোলে।
চ্যালেঞ্জের কণ্টকময় পথ: তারুণ্যের রাজনৈতিক পথে পা রাখা যতটা সম্ভাবনাময়, ততটাই চ্যালেঞ্জিং। এই পথে তাদের বিভিন্ন বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।
ক. অভিজ্ঞতার অভাব এবং প্রথাগত রাজনীতির আধিপত্য:
তরুণদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো অভিজ্ঞতার অভাব। প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়শই দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নেতাদের প্রাধান্য দেয়, যেখানে তরুণদের জন্য সুযোগ সীমিত থাকে। রাজনীতিতে সফল হতে হলে প্রায়শই দীর্ঘমেয়াদী সম্পৃক্ততা, জনসম্পর্ক এবং সাংগঠনিক দক্ষতার প্রয়োজন হয়, যা তরুণদের ক্ষেত্রে শুরুতে অপ্রতুল হতে পারে। প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাঠামো এবং কার্যপদ্ধতি অনেক সময় এতটাই জটিল হয় যে, নতুনদের জন্য সেখানে নিজেদের স্থান করে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাদের প্রায়শই প্রবীণ নেতাদের ছায়াতলে কাজ করতে হয় এবং নিজেদের উদ্ভাবনী ধারণাগুলো বাস্তবায়নে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এই অভিজ্ঞতার অভাব অনেক সময় তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করে এবং তাদের রাজনৈতিক অভিযাত্রাকে ধীর করে দেয়। উপরন্তু, রাজনৈতিক দলগুলোতে প্রায়শই প্রথাগত ক্ষমতার কাঠামো এতটাই সুদৃঢ় থাকে যে, নতুনদের জন্য সেখানে প্রবেশ করা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এটি তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা তৈরি করতে পারে।
খ. আর্থিক সীমাবদ্ধতা:
রাজনীতিতে সক্রিয় হতে প্রায়শই আর্থিক সংগতির প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে। তরুণদের একটি বড় অংশের পর্যাপ্ত আর্থিক সংগতি না থাকায় তাদের জন্য এই পথটি কঠিন হয়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর তুলনায় তারা প্রায়শই আর্থিক সংকটে ভোগে, যা তাদের প্রচার-প্রচারণা এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করে। নির্বাচনে অংশ নিতে গেলে যে বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়, তা প্রায়শই তরুণদের সামর্থ্যের বাইরে থাকে। শুধুমাত্র অর্থবিত্তের অভাবে অনেক যোগ্য ও প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ রাজনীতিতে আসতে পারে না বা আসলেও টিকে থাকতে পারে না। এটি মেধাবী তরুণদের রাজনৈতিক ক্ষেত্র থেকে দূরে ঠেলে দেয় এবং একটি সমাজের জন্য একটি বড় ক্ষতি। এছাড়াও, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবেও অনেক তরুণ আর্থিক সংকটে ভোগে, যা তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সীমিত করে দেয়।
গ. রাজনৈতিক সহিংসতা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি:
অনেক দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা একটি সাধারণ ঘটনা, যা তরুণদের রাজনীতিতে আসতে নিরুৎসাহিত করে। তরুণ কর্মীরা প্রায়শই সংঘাতের শিকার হয় এবং তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে। এই ধরনের প্রতিকূল পরিবেশ তরুণদের জন্য রাজনীতিকে একটি বিপজ্জনক পেশা হিসেবে তুলে ধরে। মিটিং-মিছিল বা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে তাদের উপর হামলা, নির্যাতন বা এমনকি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। এই অনিরাপদ পরিবেশ তরুণদের মধ্যে ভয় তৈরি করে এবং তাদের রাজনৈতিক সক্রিয়তাকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করে। অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের রাজনীতিতে যুক্ত হতে দিতে চায় না এই সহিংসতার ভয়ে। এই পরিস্থিতি কেবল তরুণদের জন্য নয়, বরং একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যও হুমকিস্বরূপ। প্রতিহিংসার রাজনীতি এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার এই সহিংসতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে, যা তরুণদের জন্য রাজনীতিকে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
ঘ. প্রথাগত ধ্যান-ধারণার প্রভাব ও অনাস্থা:
সমাজ ও পরিবারের মধ্যে অনেক সময় রাজনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত থাকে। অভিভাবকদের পক্ষ থেকে প্রায়শই তরুণদের রাজনীতিতে না আসার জন্য চাপ দেওয়া হয়, কারণ তারা মনে করে রাজনীতি একটি অস্বচ্ছ এবং ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র। এই ধরনের সামাজিক চাপ তরুণদের রাজনৈতিক সক্রিয়তাকে বাধাগ্রস্ত করে। সমাজের একটি বড় অংশ মনে করে রাজনীতি মানেই দুর্নীতি, হানাহানি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। এই প্রথাগত ধ্যান-ধারণা তরুণদের মধ্যে রাজনীতি সম্পর্কে এক ধরনের অনীহা তৈরি করে। অনেক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও রাজনীতিকে নিরুৎসাহিত করা হয়, যা তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। এই অনাস্থা এবং নেতিবাচক ধারণা তরুণদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, যা একটি দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য শুভ নয়।
ঙ. দুর্নীতির ফাঁদ:
রাজনীতির সাথে দুর্নীতি শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে পড়েছে। তরুণরা যখন সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতিতে আসে, তখন তাদের সামনে দুর্নীতির অসংখ্য ফাঁদ তৈরি হয়। এই ফাঁদ এড়িয়ে চলা এবং নিজেদের আদর্শে অটল থাকা তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বা দ্রুত সাফল্যের জন্য অনেক সময় অনৈতিক পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়, যা তাদের মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত করে। অর্থ, ক্ষমতা বা প্রভাবের লোভে পড়ে অনেক তরুণ তাদের আদর্শ বিসর্জন দেয়। এটি তাদের মধ্যে এক ধরনের নৈতিক সংকট তৈরি করে এবং তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে। দুর্নীতির এই সর্বগ্রাসী প্রভাব তরুণদের জন্য রাজনীতিকে আরও কঠিন করে তোলে, যেখানে সৎ থাকা প্রায়শই একটি কঠিন পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। স্বজনপ্রীতি এবং পক্ষপাতিত্বও দুর্নীতিরই একটি অংশ, যা তরুণদের জন্য ন্যায়সঙ্গত সুযোগ প্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করে।
চ. তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার এবং ভুল তথ্য:
যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক, তবে এর অপব্যবহারও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভুল তথ্য, গুজব এবং মিথ্যা প্রচারণার শিকার হয়ে অনেক তরুণ বিভ্রান্ত হয়। সাইবার বুলিং এবং বিদ্বেষমূলক মন্তব্য তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুয়া খবর বা ফেক নিউজ তরুণদের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি করে এবং তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। তারা অনেক সময় না বুঝেই ভুল তথ্য প্রচার করে বা উসকানিমূলক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। এই ডিজিটাল বিশৃঙ্খলা তরুণদের জন্য রাজনীতিকে আরও জটিল করে তোলে এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস তৈরি করে।
ছ. দীর্ঘসূত্রিতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা:
রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রায়শই দীর্ঘসূত্রিতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকে, যা তরুণদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে পারে। দ্রুত পরিবর্তন আনার আকাঙ্ক্ষা থাকলেও, বাস্তবতার নিরিখে এই প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চলে। এই দীর্ঘসূত্রিতা তাদের মধ্যে হতাশার জন্ম দিতে পারে। তরুণরা যখন কোনো পরিবর্তন বা সংস্কারের প্রস্তাব করে, তখন তা বাস্তবায়নে অনেক সময় লেগে যায় বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আটকে যায়। এই ধীর গতি তাদের মধ্যে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি করে এবং তাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে দমিয়ে রাখে। এই ধরনের পরিবেশে অনেক তরুণ তাদের উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলে এবং রাজনীতি থেকে দূরে সরে যায়।
জ. যোগ্য নেতৃত্ব ও মেন্টরশিপের অভাব:
অনেক তরুণ নেতা সঠিক দিকনির্দেশনা এবং মেন্টরশিপের অভাবে ভোগেন। অভিজ্ঞ নেতাদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ সীমিত থাকে, যা তাদের রাজনৈতিক দক্ষতা বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। তরুণরা প্রায়শই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রবেশের পর দিকহারা হয়ে পড়ে, কারণ তাদের সঠিক পরামর্শ বা নির্দেশনা দেওয়ার মতো কেউ থাকে না। এই মেন্টরশিপের অভাব তাদের মধ্যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করে এবং তাদের নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশে বাধা দেয়। অনেক সময় অভিজ্ঞ নেতারাও তরুণদের সুযোগ দিতে বা তাদের পরামর্শ দিতে অনিচ্ছুক থাকেন, যা এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
সম্ভাবনার স্বর্ণদুয়ার: চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, তারুণ্যের রাজনীতিতে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনাগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে একটি জাতি অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে।
ক. উদ্ভাবনী চিন্তা ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি:
তরুণরা প্রায়শই প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে পারে। তাদের উদ্ভাবনী শক্তি নতুন সমস্যার সমাধান এবং নতুন নীতিমালা প্রণয়নে সহায়ক হতে পারে। তারা সামাজিক সমস্যাগুলো নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে এবং সেগুলোর জন্য উদ্ভাবনী সমাধান প্রস্তাব করে। তাদের এই সৃজনশীলতা রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করে এবং পুরনো সমস্যাগুলোর জন্য নতুন সমাধানের পথ উন্মোচন করে। উদাহরণস্বরূপ, জলবায়ু পরিবর্তন বা ডিজিটাল বিভাজনের মতো আধুনিক সমস্যাগুলোর সমাধানে তরুণদের উদ্ভাবনী চিন্তা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা প্রচলিত ব্যবস্থার প্রতি প্রশ্ন তুলে ধরে এবং নতুনত্বের বার্তা নিয়ে আসে। এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রায়শই সমাজের বিভিন্ন স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং স্থবিরতাকে ভেঙে গতিশীলতা তৈরি করে।
খ. ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার:
তরুণরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত। তারা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ডিজিটাল প্রচারণার মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারে এবং তাদের মতামত তুলে ধরতে পারে। এটি তাদের রাজনৈতিক বার্তা ছড়িয়ে দিতে এবং জনগণের সমর্থন আদায়ে সহায়ক হয়। ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তারা স্বল্প খরচে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে তারা দ্রুত জনমত গঠন করতে পারে এবং বিভিন্ন ইস্যুতে মানুষকে একত্রিত করতে পারে। এই ডিজিটাল সক্ষমতা তাদের রাজনৈতিক প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ করে এবং তাদের বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সহায়ক হয়। অনলাইন পিটিশন, হ্যাশট্যাগ আন্দোলন বা লাইভ সেশনের মাধ্যমে তারা জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে, যা গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণকে আরও সহজ ও সক্রিয় করে তোলে।
গ. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা:
তরুণরা প্রায়শই রাজনীতিতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার দাবি তোলে। তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং জনসেবকদের জনগণের কাছে দায়বদ্ধ করার চেষ্টা করে। এটি একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশে সহায়ক। তারা প্রচলিত ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেয় এবং সেগুলোর সমাধানে কাজ করে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে তারা সরকারি তথ্যের সহজলভ্যতা এবং স্বচ্ছতা বাড়াতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তারা অনলাইনে তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য আন্দোলন করতে পারে। তাদের এই অকপটতা এবং সৎ উদ্দেশ্য রাজনীতিতে নতুন করে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
ঘ. সামাজিক পরিবর্তন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি:
তরুণরা সামাজিক ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের পক্ষে কাজ করে। তারা লিঙ্গ সমতা, পরিবেশ সুরক্ষা, সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং অন্যান্য সামাজিক ইস্যুতে সক্রিয় থাকে। তাদের অংশগ্রহণ রাজনীতিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলে এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হয়। তারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয় এবং তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরে। এই অন্তর্ভুক্তিমূলক মানসিকতা একটি দেশের সকল মানুষের জন্য সমান সুযোগ এবং সম্মান নিশ্চিত করে। তরুণরা প্রায়শই পরিবেশ আন্দোলন, নারী অধিকার আন্দোলন এবং মানবাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়, যা সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সামাজিক সংবেদনশীলতা রাজনীতিকে আরও মানবিক এবং গণমুখী করে তোলে।
ঙ. নেতৃত্বের বিকাশ:
তরুণদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করে। তারা বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করে এবং নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশ করে। এটি একটি জাতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ। তরুণদের মধ্যে থাকা নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা এবং পরিবর্তন আনার উদ্দীপনা তাদের ভবিষ্যতে বড় ধরনের রাজনৈতিক ভূমিকা পালনে প্রস্তুত করে তোলে। সঠিক দিকনির্দেশনা এবং সুযোগ পেলে তারা ভবিষ্যতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে পারে এবং দেশের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এই নেতৃত্বের বিকাশ কেবল ব্যক্তি হিসেবে তাদের জন্য নয়, বরং একটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি বিশাল বিনিয়োগ।
চ. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও জ্ঞান বিনিময়:
তরুণরা প্রায়শই আন্তর্জাতিক ফোরামে সক্রিয় থাকে এবং বিভিন্ন দেশের তরুণ নেতাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। এটি তাদের মধ্যে জ্ঞান বিনিময় এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। তারা বৈশ্বিক সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতন হয় এবং সেগুলোর সমাধানে নিজেদের অবদান রাখতে চায়। জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার বা বিশ্বশান্তির মতো বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতে তরুণদের অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করে। এই আন্তর্জাতিক সংযোগ তাদের মধ্যে নতুন ধারণা এবং কৌশল অর্জনে সহায়ক হয়, যা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে সেরা চর্চাগুলো শিখে নিজেদের দেশে প্রয়োগ করার চেষ্টা করে।
ছ. জনগণের সাথে নিবিড় সম্পর্ক:
তরুণ নেতারা প্রায়শই জনগণের সাথে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। তারা তাদের সমবয়সীদের সমস্যাগুলো বুঝতে পারে এবং সেগুলোর সমাধানে কাজ করে। এটি তাদের মধ্যে জনগণের আস্থা অর্জনে সহায়ক হয়। সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে তারা জনগণের অভাব-অভিযোগ শুনতে পারে এবং সেগুলোর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। এই জনগণমুখী রাজনীতি তাদের মধ্যে এক ধরনের জনপ্রিয়তা তৈরি করে এবং তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করে। তারা কেবল নিজেদের দলের অনুসারীদের সাথে নয়, বরং সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করে।
জ. রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন:
তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দেয়। তারা বিতর্ক, আলোচনা এবং সহনশীলতার উপর জোর দেয়, যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে অপরিহার্য। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চায় উৎসাহিত করে। তরুণরা প্রায়শই সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। তাদের এই মানসিকতা রাজনৈতিক মেরুকরণ কমাতে এবং ঐক্যবদ্ধ সমাজ গঠনে সহায়ক হয়। তারা পুরনো রীতিনীতি বা পক্ষপাতিত্বের পরিবর্তে মেধা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করে, যা সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই সাংস্কৃতিক পরিবর্তন একটি দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক দিক।
ভবিষ্যতের পথরেখা: তারুণ্যের রাজনীতিকে আরও কার্যকর এবং ফলপ্রসূ করতে হলে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য।
ক. প্রশিক্ষণ ও মেন্টরশিপের সুযোগ বৃদ্ধি:
তরুণদের জন্য রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং অভিজ্ঞ নেতাদের কাছ থেকে মেন্টরশিপের সুযোগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এটি তাদের রাজনৈতিক দক্ষতা এবং জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এই প্রশিক্ষণ তাদের নেতৃত্ব, জনসম্পর্ক, সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং নীতি নির্ধারণে দক্ষ করে তুলবে। এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত যেখানে নবীন ও প্রবীণ নেতারা একসাথে কাজ করতে পারে এবং অভিজ্ঞরা তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নবীনদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারে। মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম তরুণদের ভুল থেকে শিখতে এবং তাদের রাজনৈতিক পথকে সুগম করতে সাহায্য করবে। এর ফলে তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে এবং কার্যকরভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
খ. রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার:
রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তরুণদের জন্য আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করা এবং তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা। দলীয় কাঠামোতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা এবং তরুণদের জন্য ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। দলীয় পদ, মনোনয়ন বা গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোতে তরুণদের জন্য নির্দিষ্ট কোটা বা সুযোগ রাখা যেতে পারে। দলগুলোকে তাদের সনাতন ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এটি কেবল দলের জন্যই নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্যও অত্যাবশ্যক। প্রজন্মের ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য দলগুলোর উচিত তরুণদের সাথে নিয়মিত সংলাপের আয়োজন করা।
গ. আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা:
তরুণদের জন্য রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আর্থিক বাধা দূর করতে বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এটি তাদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করবে। সরকার, বেসরকারি সংস্থা বা বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক ফান্ডের ব্যবস্থা করতে পারে, যা যোগ্য কিন্তু আর্থিকভাবে দুর্বল তরুণদের জন্য সহায়ক হবে। নির্বাচনী ব্যয় কমানোর জন্য নির্বাচনী সংস্কার আনা যেতে পারে, যা তরুণ প্রার্থীদের জন্য সুবিধা দেবে। এটি মেধাবী তরুণদের রাজনীতিতে আসতে উৎসাহিত করবে, যারা কেবল অর্থের অভাবে পিছিয়ে পড়ে। পাবলিক ফান্ডিং বা স্বচ্ছ অনুদানের ব্যবস্থাও তরুণদের জন্য আর্থিক চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।
ঘ. রাজনৈতিক সহিংসতার অবসান:
রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, যাতে তরুণরা নির্ভয়ে রাজনীতিতে অংশ নিতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি এবং নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। রাজনৈতিক সংঘাত এবং প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ এবং ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। সরকার এবং বিরোধী দল উভয়কেই এই বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সহিংসতা রোধে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দোষীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা অপরিহার্য। একটি সহিংসতামুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ তরুণদের জন্য রাজনীতিকে আরও আকর্ষণীয় এবং নিরাপদ করে তুলবে।
ঙ. সচেতনতা বৃদ্ধি ও ইতিবাচক ধারণা প্রচার:
সমাজ ও পরিবারের মধ্যে রাজনীতি সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা প্রচার করা প্রয়োজন। গণমাধ্যম এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের মধ্যে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করা উচিত। ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন এবং সফল তরুণ রাজনীতিবিদদের গল্প প্রচারের মাধ্যমে রাজনীতি সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা ভাঙানো যেতে পারে। নাগরিক শিক্ষা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, যা তরুণদের গণতন্ত্র, রাজনীতি এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান দান করবে। গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকাও রাজনীতি সম্পর্কে মানুষের ইতিবাচক ধারণা তৈরিতে সহায়ক।
চ. ডিজিটাল সাক্ষরতা ও দায়িত্বশীল ব্যবহার:
তরুণদের মধ্যে ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দায়িত্বশীল ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা উচিত, যাতে তারা ভুল তথ্য এবং গুজবের শিকার না হয়। ফেক নিউজ এবং হেট স্পিচ মোকাবিলার জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে উৎসাহিত করা উচিত যাতে তারা ভুল তথ্যের প্রচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। মিডিয়া লিটারেসি বাড়ানো এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটানো অপরিহার্য, যাতে তরুণরা অনলাইনে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারে।
ছ. শিক্ষাব্যবস্থায় রাজনৈতিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি:
শিক্ষাব্যবস্থায় রাজনৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যাতে তরুণরা অল্প বয়স থেকেই রাজনীতি সম্পর্কে জানতে পারে এবং একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে উৎসাহিত হয়। এই শিক্ষা তাদের রাজনৈতিক জ্ঞান এবং নাগরিক দায়িত্ববোধ বিকাশে সহায়ক হবে। কেবল তত্ত্বীয় জ্ঞান নয়, বরং ব্যবহারিক রাজনৈতিক জ্ঞান যেমন – বিতর্ক, মক পার্লামেন্ট, এবং স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া যেতে পারে। এটি তাদের মধ্যে রাজনৈতিক আগ্রহ তৈরি করবে এবং ভবিষ্যতে সক্রিয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ভিত্তি তৈরি করবে।
জ. নৈতিকতার উপর জোর:
তরুণদের মধ্যে নৈতিকতা এবং আদর্শের উপর জোর দেওয়া উচিত, যাতে তারা দুর্নীতির ফাঁদে না পড়ে এবং নিজেদের আদর্শে অটল থাকে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সৎ ও নৈতিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য তাদের উৎসাহিত করা উচিত। নীতিশাস্ত্র এবং মূল্যবোধের শিক্ষা তরুণদের রাজনৈতিক জীবনে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করবে। তাদের মধ্যে এই ধারণা তৈরি করা উচিত যে, ক্ষমতা কেবল সুবিধার জন্য নয়, বরং জনগণের সেবার জন্য। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা উচিত এবং এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য তাদের শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ, ফেনী