Sunday 25 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদ্রোহী কবির জন্মদিন: স্বাধীন বাংলাদেশের চেতনা

ফাহিম হাসনাত
২৫ মে ২০২৫ ১৭:০১

‘মহাবিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত’

আজ সেই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। ১৮৯৯ সালের ২৫শে মে (বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ) তিনি এসেছিলেন পরাধীন ভারতে মুক্তির ঝান্ডা হাতে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তাকে ‘জাতীয় মুক্তির কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে চেয়েছিলেন, যদিও তার সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমান তাকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। নজরুল আমাদের জাতীয় চেতনার এক মূর্ত প্রতীক, তাই তাকে রাজকীয় সম্মানে কলকাতা থেকে ঢাকায় আনা হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।

বিজ্ঞাপন

দুখু মিয়া থেকে বিদ্রোহী কবি

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান বাঙালি কবি ও সংগীতজ্ঞ কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যিক জীবন মাত্র ২৩ বছরের, কিন্তু তার সৃষ্টি তুলনারহিত। বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই পরিচিত। বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া নজরুলের ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। মাত্র ৯ বছর বয়সে পিতার মৃত্যুর পর জীবিকার তাগিদে তার পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত হয়। তিনি মক্তবে শিক্ষকতা, মসজিদের মুয়াজ্জিন এবং মাজারের খাদেম হিসেবে কাজ করেন। এই অভিজ্ঞতাগুলো তার সাহিত্যে গভীর প্রভাব ফেলে এবং তাকে বাংলা সাহিত্যে ইসলামী চেতনার চর্চায় অগ্রণী ভূমিকা নিতে সাহায্য করে।

কবি হয়ে ওঠার পথে

বাল্যকালেই নজরুল লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একটি লেটো দলে যোগ দেন। এখানে তিনি নাটক লিখতেন, গান করতেন এবং অভিনয় শিখতেন। আরবি, ফার্সি ও উর্দু ভাষায় দক্ষ তার চাচা কাজী বজলে করিমের প্রভাবে তিনি লেটো দলে যোগ দেন বলে ধারণা করা হয়। লেটো দলে থাকাকালে তিনি বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্য, এবং হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পুরাণ অধ্যয়ন করেন। এ সময় তিনি চাষার সঙ, শকুনীবধ, রাজা যুধিষ্ঠিরের সঙ, দাতা কর্ণ, আকবর বাদশাহ, কবি কালিদাস, বিদ্যাভূতুম, রাজপুত্রের গান, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ এবং মেঘনাদ বধ-এর মতো লোকসঙ্গীত রচনা করেন। তার লেটো দলের অভিজ্ঞতা এবং মসজিদ, মাজার ও মক্তব জীবনের অভিজ্ঞতা তার সাহিত্যিক জীবনের উপাদান জুগিয়েছে। নজরুল শ্যামা সঙ্গীতও রচনা করেছেন এবং বলতেন, ‘আমি শুধু হিন্দু মুসলিমকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি’।

বিজ্ঞাপন

১৯১০ সালে নজরুল লেটো দল ছেড়ে পুনরায় ছাত্রজীবনে ফিরে আসেন। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর তাকে আবার কাজ করতে হয়। আসানসোলে চা-রুটির দোকানে কাজ করার সময় দারোগা রফিজউল্লাহ তার প্রতিভা চিনতে পেরে তাকে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন। পরবর্তীতে তিনি সিয়ারসোল রাজ স্কুলে ফিরে যান এবং ১৯১৭ সাল পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা করেন। ১৯১৭ সালের শেষের দিকে মাধ্যমিকের প্রিটেস্ট পরীক্ষা না দিয়েই তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

সৈনিক ও সাংবাদিক জীবন

১৯১৭ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত নজরুল সেনাবাহিনীতে ছিলেন। এই সময়ে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার হয়েছিলেন। করাচি সেনানিবাসে থাকাকালীন তিনি ফার্সি ভাষা শেখেন এবং সাহিত্য চর্চা অব্যাহত রাখেন। তার প্রথম গদ্য রচনা ‘বাউন্ডুলের আত্মকাহিনী’ এবং প্রথম প্রকাশিত কবিতা ‘মুক্তি’ এই সময়েই লেখা। করাচি সেনানিবাসে বসে তিনি বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। সৈনিক জীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে এসে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। ‘নবযুগ’ পত্রিকায় ‘মুহাজিরীন হত্যার জন্য দায়ী কে’ শিরোনামে প্রবন্ধ লেখার জন্য পত্রিকার জামানত বাজেয়াপ্ত হয় এবং তার উপর পুলিশের নজরদারি শুরু হয়। এ সময় তার লেখা উপন্যাস ‘বাঁধন হারা’ এবং কবিতা ‘বোধন’, ‘শাত-ইল-আরব’, ‘বাদল প্রাতের শরাব’ সাহিত্য সমাজে প্রশংসিত হয়। ১৯২১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় ছিল।

পারিবারিক জীবন

১৯২১ সালে নজরুল আলী আকবর খানের সাথে পরিচিত হন এবং তার মাধ্যমেই কুমিল্লার প্রমীলা দেবীর সাথে তার পরিচয় হয়, যাকে তিনি পরে বিয়ে করেন। এর আগে নার্গিস আসার খানমের সাথে তার বিয়ে ঠিক হলেও কাবিনের শর্ত নিয়ে বিরোধের কারণে তা সম্পন্ন হয়নি। নজরুল সাম্যবাদী ছিলেন এবং তার চার সন্তানের নাম বাংলা ও আরবি/ফারসি উভয় ভাষাতেই রেখেছিলেন: কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুলবুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ।

বিদ্রোহী নজরুল

১৯২১ সালের নভেম্বর মাসে নজরুল অসহযোগ মিছিলে অংশ নেন এবং ‘ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও! ফিরে চাও ওগো পুরবাসী’ গানটি গেয়েছিলেন। এই সময়কার তার কবিতা, গান ও প্রবন্ধে বিদ্রোহের ভাব প্রকাশিত হয়। তার বিদ্রোহী কবিতা ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়ে সারা ভারতের সাহিত্য সমাজে খ্যাতি লাভ করে। এই কবিতায় তিনি নিজেকে বঞ্চিত, অবমানিত ও লাঞ্ছিত মানুষের প্রতিচ্ছবি হিসেবে বর্ণনা করেন।

ধূমকেতু ও কারাবাস

১৯২২ সালের ১২ই আগস্ট নজরুল ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকায় প্রকাশিত তার ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতাটি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। ২৩শে নভেম্বর তার ‘যুগবাণী’ প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি আদালতে তিনি বিখ্যাত ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রদান করেন। ১৬ জানুয়ারি তাকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী থাকাকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে তার ‘বসন্ত’ গীতিনাট্য উৎসর্গ করেন, যা নজরুলকে বিশেষভাবে উল্লসিত করে।

সাহিত্যকর্ম ও অবদান

১৯২১ সালের ডিসেম্বরে নজরুল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও ‘ভাঙ্গার গান’ রচনা করেন, যা বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়। ১৯২২ সালে প্রকাশিত তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ বাংলা কাব্যে নতুনত্বের সৃষ্টি করে। তার শিশুতোষ কবিতা যেমন ‘খুকী ও কাঠবিড়ালি’, ‘লিচু-চোর’, ‘খাঁদু-দাদু’ বাংলা কবিতায় নান্দনিকতা এনেছে। নজরুল তার ‘মানুষ’ কবিতায় বলেছেন, “পূজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল মূর্খরা সব শোন/ মানুষ এনেছে গ্রন্থ, গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন।” তিনি কালীদেবীকে নিয়ে শ্যামা সঙ্গীত এবং ইসলামী গজলও রচনা করেন।

নজরুলের গানের সংখ্যা চার হাজারের বেশি, যা নজরুল সঙ্গীত নামে পরিচিত। ১৯৩৮ সালে তিনি কলকাতা বেতার কেন্দ্রের সাথে যুক্ত হয়ে ‘হারামণি’, ‘নবরাগমালিকা’ ও ‘গীতিবিচিত্রা’র জন্য প্রচুর গান লেখেন। তিনি চলচ্চিত্রের জগতেও অবদান রাখেন; তিনি ‘ধূপছায়া’ নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন এবং ‘জামাই ষষ্ঠী’, ‘গৃহদাহ’, ‘ধ্রুব’, ‘গ্রহের ফের’, ‘পাতালপুরী’, ‘গোরা’, ‘সাপুড়ে’, ‘রজত জয়ন্তী’, ‘নন্দিনী’, ‘অভিনয়’, ‘দিকশূল’ ও ‘চৌরঙ্গী’ চলচ্চিত্রের সাথে গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জড়িত ছিলেন।

রাজনৈতিক দর্শন ও বাংলাদেশে নজরুল

নজরুল সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন এবং মুজফ্ফর আহমদের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে অংশ নিতেন। ১৯১৭ সালের রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব তাকে প্রভাবিত করেছিল। তিনি তার ‘লাঙ্গল’ ও ‘গণবাণী’ পত্রিকায় ‘সাম্যবাদী’ ও ‘সর্বহারা’ কবিতাগুচ্ছ প্রকাশ করেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের দর্শনের বিপরীত সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বরাজ অর্জনে বিশ্বাস করতেন। তিনি তুরস্কের মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে সালতানাত উচ্ছেদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। নজরুল গোঁড়ামি, রক্ষণশীলতা, ধর্মান্ধতা এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। শেখ মুজিবুর রহমান তার রচিত ‘চল্ চল্ চল্, ঊর্ধ্বগগনে বাজে মাদল’ গানটিকে বাংলাদেশের রণসঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করেন। তার স্মৃতি রক্ষার্থে ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকায় নজরুল একাডেমি, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, বাংলাদেশ নজরুল সেনা এবং কবি নজরুল ইন্সটিটিউট স্থাপিত হয়েছে। ঢাকা শহরের একটি প্রধান সড়কের নাম কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ।

অবদানের স্বীকৃতি

বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে এবং একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে একুশে পদক প্রদান করা হয়।

নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা: বিদ্রোহের গভীরে অনন্ত প্রেম

‘বিদ্রোহী’ কাজী নজরুল ইসলামের একটি কালজয়ী কবিতা, যা তাকে ‘বিদ্রোহী কবি’ উপাধি এনে দিয়েছে। ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে রচিত এবং ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি সাপ্তাহিক ‘বিজলী’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত এই কবিতাটি প্রকাশের পরপরই অভাবনীয় জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই কবিতার মাধ্যমে নজরুল শোষিত, বঞ্চিত মানুষের মনের কথা তুলে ধরেছেন, যা পাঠককে গভীরভাবে আকর্ষণ করে।

এই কবিতাটি ছিল উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এক জোরালো কণ্ঠস্বর। ২২ বছর বয়সী তরুণ নজরুলের এই কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি ৬ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত, যেখানে অসমান পঙ্ক্তি ও অতি পর্বের ব্যবহার তারুণ্য ও যৌবনের উদ্দীপনাকে ইশারা করে। ১৪১ লাইনের এই কবিতায় ১২১ বার ‘আমি’ শব্দের ব্যবহার মানুষের অসম শক্তির প্রতিধ্বনি। নজরুল এই কবিতায় হিন্দু, মুসলিম, গ্রীক প্রভৃতি পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্যকে নতুনভাবে ব্যবহার করে তার কবিতায় পৌরাণিক অনুষঙ্গ ও মিথকে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন।

‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের পর একটি শ্রেণী সমালোচনামুখর হলেও, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক প্রথিতযশা সাহিত্যিক নজরুলের প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। বুদ্ধদেব বসু এই কবিতা সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘মনে হলো এমন কিছু আগে কখনো পড়িনি’। এই কবিতা বাঙালির ঘুম ভাঙিয়েছিল এবং তাদের মধ্যে বিপ্লবের নতুন মন্ত্র সঞ্চার করেছিল। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা বাংলা কবিতার এক ক্লাসিক হয়ে উঠেছে এবং বহুকাল ধরে আদরণীয় হয়ে থাকবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এএসজি

কাজী নজরুল ইসলাম ফাহিম হাসনাত মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর