Wednesday 09 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তরুণ নেতৃত্বে পরাজয়ের ধারাবাহিকতা: আদৌ কি ফিরবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের গৌরব?

সুমন বৈদ্য
৯ জুলাই ২০২৫ ১৭:০১

একটা সময় ছিলো বাংলাদেশে সাকিব-তামিম- মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ-মাশরাফি নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি শক্ত অবস্থানে ছিল। তাদের দেখাদেখিতে অনেক উদীয়মান খেলোয়াড় উঠে এসেছে এবং তাদের মধ্যে সমীহ জাগানোর মতন ক্রিকেট খেলার মনমানসিকতা তৈরি করার পিছনে এই নেতৃত্বধারী খেলোয়াড়দের একটি বিশেষ অবদান ছিল। টেস্ট কিংবা টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে একটি কঠিন প্রতিপক্ষ হিসেবে গড়ার স্বপ্ন তারাই দেখেছিল। কিন্তু আশানুরূপভাবে টেস্ট কিংবা টি-টোয়েন্টিতে শক্ত অবস্থান ঘটতে না পারলেও অন্তত চোখে চোখ রেখে লড়াই করার মন মানসিকতা ছিল। অন্যদিকে ওয়ানডেতে হয়েছিল বাংলাদেশ এক অপ্রতিরোধ্য দল, হয়তো বিশেষ কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে না পারলেও, জয়ের ধারাবাহিকতার মধ্যে ছিল বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ২০১৯ পর্যন্ত তাদের লড়াই বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে এক নতুন পরাশক্তিতে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে পৌঁছানো, এশিয়া কাপে একাধিকবার ফাইনাল খেলা। এখানেই শেষ নয়, প্রথমবারের মতো ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ও এসেছিল তাদের হাত ধরে। এরপর একে একে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে নাস্তানাবুদ করার গল্প— সবকিছুতেই আধিপত্য রেখেছিলেন এই পাঁচজন।

সময়ের তাগিদে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই মহারথীরা আজ অনুপস্থিত। তাই তামিম-সাকিব-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর পর দলের ভার এখন মিরাজ-লিটন-শান্ত- শামিম-মুস্তাফিজুর-তাসকিনদের কাঁধে। তাই বর্তমান বাংলাদেশ দল যেনো তরুণ প্রজন্মের মিশেলে গড়া নতুন একটি দল সেইসাথে অনভিজ্ঞ। কিন্তু কথা হচ্ছে তারা কি আদৌ কোন বাংলাদেশের সামনের দিনগুলোতে তারা কি আদৌ ভূমিকা রাখতে পারবে!

সাম্প্রতিক পারফর্মেন্সের দিকে যদি তাকানো যায় দু একজন খেলোয়াড় বাদে বাকিদের নাস্তানাবুদ অবস্থা। না ভালো করতে পারছে টেস্ট ফরম্যাটে, টি টুয়েন্টি ফরম্যাটে কিংবা বাংলাদেশের প্রিয় ফরম্যাটে ওয়ানডেতে।

এর প্রধান কারণ নির্বাচনে দুর্বলতা, দুর্বল ম্যানেজমেন্ট, মেধার ঘাটতি, জবাবদিহিতার অভাব, গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা বসে আছেন তাদের নিজেদেরও যোগ্যতার অভাব, ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামোর ভেঙে পড়া ও ভুলভাল জিনিসে প্রাধান্য দেওয়া। যেখানে ভালো কোচ, নামি কোচ এনেও তো কিছু করা যাচ্ছে না, সেইসাথে অধিনায়ক পরিবর্তন করেও। আর এই খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। যার ফলে আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্রের মতন দলের কাছে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে।

শুধু কি তাই, একটা সময় যেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল থেকে শুরু করে দর্শকরা যেখানে চিন্তা করতো, সাউথ আফ্রিকা অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের মতো খেলোয়াড়দের সাথে চোখে চোখ রেখে লড়াই করার সামর্থ্য আমাদের আছে সেখানে তাদেরকে এখন অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের হতশ্রী পারফর্মেন্সের কথাও ধরা যাক।

যে বাংলাদেশ ৩০০ বা ৩০০ অধিক কিংবা ২৮০ রান তোলার মতো ক্ষমতা রাখে, সে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ২৫০ এর উপর রান তুলতে পারেনি। অন্যদিকে সিরিজ ম্যাচ গুলোতে অবস্থা আরো বেগতিক। ১০০ রান যোগ করেই মাত্র বাংলাদেশের দায়িত্বহীন ব্যাটিং শুরু হয়ে যায়। যার ফলে অনেক জেতা ম্যাচ বিশাল ব্যবধানে হারের বোঝা সাথে নিয়ে চলে আসে।

আর বর্তমানে ওয়ানডে থেকে শুরু যেকোনো ফরম্যাটে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের অবস্থা অনেকটাই এইরকম কোনোদিন বোলিং ভালো হচ্ছে না। কোনোদিন ব্যাটিং। আবার কোনোদিন দুটাই খারাপ। বর্তমান দলের যে পারফরম্যান্স তাতে মনে হতেই পারে জয়ের ক্ষুধাটাও যেনো তাদের নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের এমন হতশ্রী পারফরম্যান্স ছিলো গত ১০ বছর আগে।

বাংলাদেশের অবস্থান এমন এক জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো বাংলাদেশের খেলা সম্প্রচার করতে চাচ্ছে না যার উদাহরণস্বরূপ আসন্ন পাকিস্তান সিরিজে কোন স্যাটেলাইট চ্যানেল খেলা সম্প্রচার করতে অনাগ্রহতা প্রদর্শন করেছেন।আর তাই সে জায়গা থেকেই প্রশ্ন তৈরি হয় তরুণদের নেতৃত্বে আদৌ কি ফিরবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের গৌরব?

আর তার থেকেও বড় সমস্যা হলো কোচিং প্যানেলের দূব্যবস্থা। বর্তমান কোচিং প্যানেলের দিকে তাকানো যায় ফিল সিম্মন্স থেকে শুরু করে মুসতাক আহমেদের মতো কোচরা রয়েছেন, কিন্তু বাংলাদেশের দরকার এই মুহূর্তে দেশীয় কোচদের প্রাধান্য দেওয়া। বর্তমান সময়ে সালাউদ্দিন সহকারী কোচ হয়ে আসলেও, বাংলাদেশ ক্রিকেট এখনো বিদেশি ফর্মুলাতে বিশ্বাসী। যার ফলে অনেক সময় বিদেশি খেলোয়াড়রা ক্রিকেটারদের সঠিক মনস্তাত্ত্বিক বিষয় থেকে শুরু করে সমস্যা গুলো নিয়ে কাউন্সিলিং করতে পারে না। এর আরো একটি কারণ ভাষাগত সমস্যা।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কোচিং পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়ে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, কোচদের খেলোয়াড় সিদ্ধান্তে স্বাধীনতা না দেওয়া, অনেক কোচকে নিরুৎসাহিত করে। অনেক সময় কোচদের সিদ্ধান্তের ওপর অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করা হয়, যা তারা পছন্দ করেন না।শীর্ষস্থানীয় কোচরা সাধারণত এমন দলে কাজ করতে চান যেখানে পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে।

বাংলাদেশে কোচদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও ধৈর্যের অভাব দেখা যায়। ফলাফল দ্রুত চাইতে গিয়ে কোচদের ওপর চাপ দেওয়া হয়, যা অনেক বিশ্বমানের কোচ পছন্দ করেন না। তারা সাধারণত এমন দল খোঁজেন যেখানে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সময় দেওয়া হবে। যার ফলে জেমি সিডন্স, অ্যানাল ডোনান্ড, স্টিভ রোডসের মতো অনেক হাইপ্রোফাইল কোচরা বাংলাদেশে খন্ডকালীন দায়িত্বে এসেই অল্পতেই হারিয়ে গিয়েছে।

তাছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটের তামিম-সাকিব-মুশফিক থাকাকালীন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় তৈরি না হওয়ার আরো একটি কারণ হলো খেলোয়াড়দের নিয়মিত ম্যাচ খেলোনো। একজন ক্রিকেটারের সাথে ইনজুরির সম্পর্ক বেশ পুরোনো। তাই তার কিছু ম্যাচ প্রতি বিশ্রামেরও প্রয়োজন। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের মানসিক এবং শারীরিক চাপের উপর লক্ষ্য না রেখে খেলানো যাচ্ছে। এতে করে তাদের ধারাবাহিক পারফর্মেন্সে ঘাটতি হচ্ছে ।

ভারত-অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতোন দল যেখানে প্রতিটি ফরম্যাটে বাড়তি খেলোয়াড় তৈরি করার ক্ষমতা রাখে সে জায়গায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। যার ফলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটের ধ্যান ধারণা সম্পর্কে অবগত নয়। এর পিছনেও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তা হলো অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটারদের যত্ন না নেওয়া।

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল নিয়মিতভাবে ভালো পারফর্ম করে, এমনকি ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপও জিতেছে। সেইসাথে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে পরপর দুইবার এশিয়া কাপ জেতার কর্তৃত্বও দেখিয়েছে। তবে সিনিয়র দলে এসে অনেক ক্রিকেটার প্রত্যাশিত উন্নতি করতে পারে না। এর কারণ হলো সঠিক মনিটরিং, স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং মানসিক প্রশিক্ষণের ঘাটতি। অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করলেও জাতীয় দলে জায়গা পেতে দেরি হয় বা নিয়মিত সুযোগ পান না।

আর বরাবরের মতো ঘরোয়া ক্রিকেটের মান যেনো ক্রিকেটের উন্নতিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের গুণগত মানের দিকে তাকালেই ফুটে আসবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাথে অসামঞ্জস্যতা।বিশেষ করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পিচের মান, প্রতিযোগিতার তীব্রতা না থাকা।

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের প্রজন্ম একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু সেখান থেকে আর ওপরে তুলতে না পারার জন্যই দেশের ক্রিকেট আবারো অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে। তার কারণ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ভালো মানের বিকল্প খেলোয়াড় তৈরি করতে পারেনি। যেখানে বাইরের বড় দলগুলো যখন সিরিজ ভেদে বিভিন্ন ধরণের খেলোয়াড় তৈরি করে নতুন জাতীয় দল গড়ার চেষ্টা করছে সেখানে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত এক দল নিয়ে খেলিয়ে যাচ্ছে, যা খেলোয়াড়দের স্কিল সমস্যা এবং ইনজুরি প্রবণতা বেড়েই চলেছে।

তাছাড়া এইচপি বা অনূর্ধ্ব-১৯-এর খেলোয়াড়দের লক্ষ্য সবসময়ই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলার। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো স্বপ্নটা কিন্তু ওখানেই থেমে যায়।জাতীয় দলে খেললে এরপর কীভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে সেটা তারা জানে না। তাদের আসলে কী ধরনের লক্ষ্য হওয়া উচিত, মেন্টালিটি হওয়া উচিত, কীভাবে আরও বড় খেলোয়াড় হওয়ার জন্য নিজেকে মোটিভেট করা উচিত এই বিষয়ে তাদের ধারণা থাকে না।

তাছাড়া বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের আরো একটি বড় সমস্যা হলো যুক্তির চেয়ে আবেগকে প্রাধান্য দেয় বেশি। বাংলাদেশের অনেক খেলোয়াড় বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। মাঠে অযথা উত্তেজনা, স্লেজিংয়ে জড়িয়ে পড়া বা সিদ্ধান্তে বেশি প্রতিক্রিয়াতে জড়িয়ে যায়।

অন্যদিকে একটি ম্যাচে কেউ ভালো করলে পরের সিরিজেই তাকে জায়গা দেওয়া হয়, আবার সামান্য খারাপ করলেই বাদ — এখানে যুক্তির চেয়ে আবেগ ও জনমতের প্রভাব বেশি কাজ করে।

আধুনিক ক্রিকেটে বিশ্লেষণ, পরিসংখ্যান, ম্যাচ কন্ডিশন অনুযায়ী একাদশ গঠন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো অনেকাংশেই সেই ধরনের ‘ক্রিকেটিং ইন্টেলিজেন্স’ অনুপস্থিত।

যুক্তিসঙ্গতভাবে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দল গড়ার কথা থাকলেও, তা অনুপস্থিত। তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত, নতুন খেলোয়াড় এনে আবার বাদ দেওয়া — এসব সিদ্ধান্ত যুক্তির বদলে আবেগনির্ভর।

বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্স অনেক সময় বড় দলগুলোর তুলনায় খুব একটা শক্তিশালী নয়, বিশেষ করে টেস্ট, টি টুয়েন্টি ফরম্যাটে। তার সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে বাংলাদেশের কমফোর্টজন ফরম্যাট ওয়ানডে।

অনেক বড় দল, বিশেষ করে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, বা দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার সময়ে সেগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে না, কারণ তারা জানে যে বাংলাদেশ বেশিরভাগ সময় তাদের জন্য কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে না।

বড় দলগুলো আইসিসির বিভিন্ন ইভেন্টে প্রস্তুতির জন্য তাদের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে বেছে নেয়, যাতে পরবর্তী টুর্নামেন্টের প্রস্তুতির জন্য উপযুক্ত প্রতিপক্ষ হতে পারে। সে জায়গায় বাংলাদেশ খেলে থাকে জিম্বাবুয়ের মতো দলের সাথে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডব (মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ) এর অবসরের মধ্যে দিয়ে একটি সোনালী যুগের সমাপ্তি। তারা দলকে যা দিয়ে গিয়েছে, তা ধরে রাখতে তারুণ্যেদের দক্ষতার সহিত দায়িত্ব নিতে হবে।

আর তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তরুণদের ওপর আস্থা রেখে অন্তত ২–৩ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। একজন খেলোয়াড়কে ২ সিরিজ খেলিয়ে বাদ দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

অন্যদিকে অধিনায়কে হতে হবে সঠিক গুণাবলী ও নেতৃত্ববান সম্পন্ন।বর্তমান বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। নিজেকে সময় দিতে হবে, দলকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। উদীয়মান খেলোয়াড়দের সুযোগ দিতে হবে। শামীম পাটোয়ারী, পারভেজ ইমন, তৌহিদ হৃদয় এদের নিয়ে লম্বা সময় পরিকল্পনা সাজাতে হবে। তাদের ওপর আস্থা রাখতে হবে ।সেইসাথে হুট করে নেতৃত্ব বদল না করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আস্থা রাখা দরকার।

নতুনদের ব্যাটিং লাইনআপে স্ট্রাইক রেট ও ম্যাচ-ফিনিশিং দক্ষতা উন্নত করতে হবে। পাওয়ার হিটিং স্কিল ডেভেলপ করতে হবে, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডের জন্য। সেইসাথে মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞ, পজিশনভিত্তিক বিকল্প খেলোয়াড় ও টেকনিক্যালি দক্ষ ব্যাটসম্যান দরকার।

যেমন উইকেট কিপিং ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান, মহিদুল ইসলাম অংকন এবং অলরাউন্ডিং পজিশনে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, জাকের আলীমতো খেলোয়াড়দের ব্যাকআপ হিসেবে তৈরি করতে হবে এবং প্রয়োজনমতো খেলাতে হবে।

এইবার আসা যাক বোলিং ইউনিটের দিকে স্পিন নির্ভরতা কমিয়ে পেস আক্রমণ আরও শক্তিশালী করা দরকার, বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে ভালো করতে হলে। ইয়র্কার ও ভ্যারিয়েশন শিখতে হবে বোলারদের, ডেথ ওভারে কার্যকর হতে হবে।

অন্যদিকে চাপের মধ্যে ভালো খেলার মানসিকতা তৈরি করতে হবে এবং বিদেশি কন্ডিশনে ভালো করার জন্য মানসিক প্রশিক্ষণ দরকার, সেইসাথে খেলোয়াড়দের শৃঙ্খলা ও মানসিকতার উন্নতির দিকেও লক্ষ্য রেখে স্পোর্টস সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করতে হবে।

ডিপিএল এবং বিপিএলকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করা ও তরুণদের সুযোগ দেওয়া দরকার। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটকে উন্নত করতে হবে, যেন টেস্ট ক্রিকেটের জন্য খেলোয়াড় তৈরি হয়।

খেলোয়াড়দের বাইরের দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার সুযোগ দিতে হবে। এতে করে অনেক ধরনের উপকার হতে পারে।বিদেশি খেলোয়াড় ও কোচদের সঙ্গে খেলার মাধ্যমে টেকনিক ও কৌশল উন্নত হয়।

যারা বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন তাদেরকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে মেন্টরশীপ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে, এবং খেলোয়াড়দের নিয়ে আলাদা কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

খেলোয়াড়দের সাথে বোর্ডের কর্মকর্তাদের খোলামেলা এবং স্পষ্টভাবে যোগাযোগ করতে হবে। তাদের সমস্যাগুলো শোনা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সমাধান করতে হবে। সেইসাথে খেলোয়াড়দের বাজে পারফরমেন্সের সময় বোর্ড কর্মকর্তাগণ তা নিয়ে তাদের সাথে সহমর্মিতাস্বরুপ আলোচনা করতে হবে ।গঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে তা যেন খেলোয়াড়দের উন্নতির পথ দেখায়।

এর পাশাপাশি বড় বড় দলের সাথে সিরিজ আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে বিশ্বমঞ্চে খেলতে গেলে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে তারা ম্যাচ খেলতে পারে। আর এখন থেকেই ২০২৬ টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপকে সামনে রেখে সঠিক খেলোয়াড় নির্বাচনের দিকে সোচ্চার হতে হবে।

বাংলাদেশ যদি সত্যিকারের শীর্ষস্থানীয় কোচদের আনতে চায়; তাহলে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, কোচদের স্বাধীনতা, ভালো পারিশ্রমিক ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে হবে। শীর্ষস্থানীয় কোচের পাশাপাশি দেশীয় কোচদের নিয়োগ দিতে হবে। এতে করে দেশীও কোচরাও ভিন্ন কিছু বিষয় রপ্ত করার সুযোগ পাবে, সেইসাথে দেশীয় কোচদেরও সঠিক মূল্যায়ণ হবে।

এইসব বিষয় যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিকল্প খেলোয়াড় তৈরি করা সম্ভব এবং তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরো শক্তিশালীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি

সারাবাংলা/এএসজি

বাংলাদেশ ক্রিকেট মুক্তমত সুমন বৈদ্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর