Sunday 05 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মিরসরাই: ভুলে যাওয়া সীমান্ত নাকি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক ফ্রন্টিয়ার?

জিয়াদ আমিন খান
৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৩৭

ঢাকা, এমনকি চট্টগ্রাম শহরের অনেকের কাছেই মিরসরাই যেন কেবল একটি দূরবর্তী উপজেলা— শান্ত, নিরিবিলি, মাঝে মাঝে সংবাদপত্রে আসে কোনো কারখানা উদ্বোধন বা সড়ক দুর্ঘটনার খবর। কিন্তু আমি এর কাদামাটি মাড়িয়েছি, কৃষকের সঙ্গে কথা বলেছি, মায়েদের সঙ্গে কেঁদেছি, তরুণদের সঙ্গে স্বপ্ন দেখেছি। আমি বলতে পারি; মিরসরাই বাংলাদেশের গল্পে কোনো ফুটনোট নয়। এটি এক নতুন ফ্রন্টিয়ার, যা জেগে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে।

ভালো করে তাকান, এটি বাংলাদেশের আগামী অর্থনৈতিক বিপ্লবের ভ্রূণ। এটি এমন এক জায়গা যেখানে পাহাড় মিলেছে সমুদ্রের সঙ্গে, উচ্চাকাঙ্ক্ষা মিলেছে প্রতিকূলতার সঙ্গে—আর সেখানে আমরা যদি আত্মতুষ্টির বদলে সাহস বেছে নিই, তবে বাংলাদেশ তার শিল্প ও অভিবাসনের গল্প নতুন করে লিখতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এক অনাবিষ্কৃত শক্তির ভাণ্ডার

মিরসরাইয়ে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (EPZ) গড়ে উঠেছে। এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। বিনিয়োগকারীরা তা-ই দেখছেন যা অনেক রাজনীতিক চোখ এড়িয়েছেন। এটি কৌশলগতভাবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত, সমুদ্রবন্দর, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং যথেষ্ঠ শ্রমশক্তির নাগালও রয়েছে আমাদের।

কিন্তু শুধু শিল্পই একটি অঞ্চলকে পাল্টে দিতে পারে না। যদি রাস্তা জলস্রোতে ভেঙে যায়, তরুণরা প্রশিক্ষণহীন থাকে, নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়—তাহলে আমরা বালুর ওপর কারখানা দাঁড় করাচ্ছি।

তাই আমি শুধু EPZ নয়, বরং রপ্তানি-প্রস্তুত সম্প্রদায় গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি।

আমরা এক সংযোগস্থলে—ভৌগোলিকভাবেও, অর্থনৈতিকভাবেও

মিরসরাই শুধু একটি শহর নয়—এটি একটি সীমান্ত প্রবেশদ্বার। ফেনী নদীর সংযোগ আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ করেছে পাচারের জন্য: ইয়াবার মতো মাদক, অবৈধ অস্ত্র, চোরাই কাঠ। তবে এটিই আমাদের সুযোগও তৈরি করে—লজিস্টিকস, বাণিজ্য, এমনকি সঠিকভাবে পরিচালনা করলে পর্যটনের জন্যও।

কিন্তু আমি প্রশ্ন করি: বাণিজ্য কিভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠবে, যদি আমাদের রাস্তা ভাঙা হয়, অবৈধভাবে পাহাড় কেটে রক্তক্ষরণ করে, আর আমাদের তরুণরা পাচার হয়—মাদকের মাধ্যমে নয়, ভুয়া অভিবাসন প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে?

আমাদের তরুণরাই আমাদের স্বর্ণখনি

মিরসরাইয়ের ৩০ শতাংশের বেশি পরিবার রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের মানুষ পরিশ্রমী, সহনশীল এবং সুযোগের জন্য ব্যাকুল। কিন্তু তারা প্রায়শই দেশ ছাড়ে প্রশিক্ষণ ছাড়া, সুরক্ষা ছাড়া, কণ্ঠ ছাড়া।

এটা থামতেই হবে। আমি এমন এক মিরসরাইয়ের স্বপ্ন দেখি, যা শুধু শ্রমশক্তি নয়, বরং নেতৃত্ব ও উদ্ভাবনও রপ্তানি করে। যেখানে আমাদের ছেলে-মেয়েদের কাছে বিকল্প থাকে—নিরাপদে বিদেশে যেতে পারা, অথবা থেকে গিয়ে সফল হওয়া।

তাহলে, আমাদের কী করতে হবে?

আমি বিশ্বাস করি এই রূপান্তর কোনো স্বপ্ন নয়। এটি একটি রোডম্যাপ—পরিষ্কার ও অর্জনযোগ্য, যদি আমরা সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারি। আমার নীলনকশা হলো—

সবুজ শিল্পের জন্য বিশেষ অঞ্চল

এমন বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে যা পরিবেশকে সম্মান করে—টেক্সটাইল, হালকা শিল্প, কৃষি-প্রক্রিয়াজাতকরণ। যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও শূন্য-অবশিষ্ট নীতি ব্যবহার হবে।

সীমান্ত-প্রযুক্তি নজরদারি

ফেনী সীমান্তে স্মার্ট মনিটরিং সিস্টেম বসাতে হবে, যাতে মাদক ও কাঠ পাচার রোধ হয়, আর বাণিজ্যপথ হয় নিরাপদ ও দ্রুততর।

দক্ষতা ও রেমিট্যান্স পুনঃবিনিয়োগ কর্মসূচি

প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, যা তরুণদের উচ্চমূল্যের কাজের জন্য প্রস্তুত করবে। তারপর তাদের উপার্জন পুনঃবিনিয়োগে সহায়তা করতে হবে—বাসস্থান, উদ্যোক্তা কার্যক্রম ও স্থানীয় কর্মসংস্থানে।

রপ্তানি-নির্ভর তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র

EPZ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অংশীদারিত্বে এমন প্লেসমেন্ট সেন্টার গড়তে হবে, যা প্রশিক্ষিত স্থানীয় শ্রমিকদের সরাসরি শিল্পের চাহিদার সঙ্গে যুক্ত করবে, দালালদের বাদ দিয়ে শোষণ কমাবে।

মিরসরাইয়ে বিশ্বাস রাখুন

অনেকে প্রশ্ন করবেন: আমাদের কি মাকাও হতে হবে? আমার উত্তর সহজ—

বাংলাদেশকে মাকাও কপি করতে হবে না। বাংলাদেশকে মিরসরাইয়ে বিশ্বাস রাখতে হবে।

আমাদের কাছে ইতোমধ্যেই উপাদান আছে—ভূমি, অবস্থান, শ্রমশক্তি এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা। এখন দরকার বিচক্ষণ নেতৃত্ব। যে শুনবে, পরিকল্পনা করবে এবং বাস্তবায়ন করবে। সরকারের নীতিগত সহায়তা ও বিভিন্ন অংশীদারের যৌথ প্রচেষ্টায় এটি বড় সাফল্যে রূপ নিতে পারে।

আসুন, এই ভুলে যাওয়া সীমান্তকে জাতীয় ফ্রন্টিয়ারে রূপ দিই।

আসুন, এই নীরব ভূখণ্ডকে সম্ভাবনার এক উচ্চকণ্ঠ প্রতীকে পরিণত করি।

আসুন, প্রতিশ্রুত বাংলাদেশ গড়ি— শুরু হোক মিরসরাই থেকে।

লেখক: উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ

সারাবাংলা/এফএম/এএসজি

জিয়াদ আমিন খান মিরসরাই মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

মুশফিকের শততম টেস্ট মিরপুরে
৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:১৬

আরো

সম্পর্কিত খবর