Sunday 05 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অক্সিজেন, জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ

উম্মে সালমা
৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:০৬

শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বজুড়ে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়। এ দিবসটি শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এ দিনে পৃথিবীজুড়ে শিক্ষকদের আলাদাভাবে স্মরণ করা হয়, শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং কর্মক্ষেত্রে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা দেওয়া হয়। প্রতিবছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে ইআই প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে, যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। ২০২৫ সালের এই দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘শিক্ষকতাকে একটি সহযোগী পেশা হিসেবে পুনর্গঠন’। এবারের প্রতিপাদ্যটি বেশ চমৎকার ও বর্তমান সময়ের সঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষাই মানুষের প্রকৃত মুক্তির পথ। সেই শিক্ষার আলোয় যারা আমাদের অন্তরকে প্রজ্বলিত করেন তারাই শিক্ষক। শিক্ষক হলো শিক্ষার্থীদের অক্সিজেন। প্রাণ বাঁচাতে অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষতায় প্রয়োজন মানবিক, পেশাগতভাবে দক্ষ, সৎ ও একনিষ্ঠ শিক্ষকের। তাই শিক্ষকদের মর্যাদা ও সম্মান অক্ষুণ্ন রেখে দেশকে শিক্ষিত ও উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণে শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষকতা হচ্ছে- পৃথিবীর প্রাচীন পেশাগুলোর একটি। শিক্ষকতা একটি মেধাভিত্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পেশা। এটি শতভাগই একটি স্নায়বিক শ্রমের পেশা।

একজন মানবসন্তানের বর্ণমালার পরিচিতি থেকে জীবনবোধের শিক্ষা সবকিছুই লাভ করে শিক্ষকের মাধ্যমে। শিক্ষকরা জ্ঞান বিতরণ করেন, নতুন দিগন্তের সন্ধান দেন এবং নৈতিক মূল্যবোধের বীজ বপন করেন। প্রকৃতপক্ষে, শিক্ষকের ভূমিকা আমাদের চারপাশের সমাজের প্রতিটি স্তরেই বিরাট প্রভাব ফেলে। একজন শিক্ষক সমাজের মানুষদের কেবল শিক্ষিত করেন না, বরং তাদের মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করেন। শিক্ষকেরাই তরুণ প্রজন্মকে জ্ঞান, নীতি-নৈতিকতা ও মানবিকতার আলোয় আলোকিত করে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনেন। তারা কেবল পাঠদান করেন না, বরং অনুপ্রেরণা জোগান, স্বপ্ন দেখাতে শেখান এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তোলেন শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষকরা হলো জাতি গড়ার কারিগর। বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও শিক্ষকেরা প্রায়ই শ্রেণিকক্ষে একা পাঠদান করেন, মানসিক সুস্থতা কিংবা আধুনিক পাঠদানের জন্য সহযোগিতামূলক কাঠামো এখনো সীমিত। তাই এ সালের লক্ষ্য হলো শিক্ষকতাকে এমন এক পেশা হিসেবে রূপান্তর করা, যেখানে পারস্পরিক সমর্থন, জ্ঞান বিনিময় ও সম্মিলিত দায়িত্ববোধকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নীতি ও পরিবেশে পারস্পরিক সমর্থন, অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করা দরকার। এর মাধ্যমে শিক্ষকেরা হবেন আরও দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী, আর শিক্ষার্থীরা পাবে আরও সমৃদ্ধ ও কার্যকর শিক্ষা- যা জাতির ভবিষ্যৎকে করবে উজ্জ্বল।

শিক্ষকতা পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমাদের এখনই সময় এসেছে, এই পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শিক্ষকরা আগামীতেও যাতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকরা বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে তা ভাবতে হবে। সময়ের সঙ্গে জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা করে তাদের বেতন মানসম্মত করতে হবে। দেখা যায়, শিক্ষকতা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পেশা হলেও দেশের মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চায় না অন্য পেশার মতো এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা নেই বলে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চায় না। তাই এ পেশার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত দরকার।

শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা শিক্ষার উন্নয়নে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে পৃথিবী প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষকদেরও বদলাতে হবে প্রতিনিয়ত। এ ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষকরা কতটা পিছিয়ে সেটা দেশে মহামারি করোনা আসার পর আমরা লক্ষ করেছি। একজন শিক্ষক আজকেই আগামী দশকের সুযোগ ও সমস্যা মোকাবিলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করছেন। ফলে শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ, কর্মশালার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের আত্মোন্নয়নের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষকদের গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক মানের।

শিক্ষকরা হচ্ছেন জাতির বিবেক ও মূল্যবোধ সংরক্ষণের ধারক ও বাহক। শিক্ষার সংস্কার, সম্প্রসারণ ও মান উন্নয়নে সরকার বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেবে বলে শিক্ষক সমাজ প্রত্যাশা করে। আমাদের প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে সরকার এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করে শিক্ষক সমাজকে যথাযথ সম্মান দেখাবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ, সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা

সারাবাংলা/এএসজি

উম্মে সালমা বিশ্ব শিক্ষক দিবস মুক্তমত শিক্ষক শিক্ষার্থী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর