Sunday 19 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্রিকেটীয় শিষ্টাচার

অলোক আচার্য
১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৩৯

ক্রিকেটটা ভদ্র মানুষের খেলা হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃত। ব্রিটিশদের আবিষ্কার করা এই খেলাটি একসময় কেবল সাদা চামড়ার সাহেবদের খেলা ছিল। সাহেবরাই এই খেলার আবিষ্কারক। ভারতজুড়ে তখন বহু গ্রামীণ খেলাধূলা প্রচলিত ছিল। সাহেবরা যখন ভারতীয় উপমহাদেশকে বগল দাবা করে তখন এখানেও সাহেবরা ক্রিকেট খেলতে শুরু করে। প্রথম প্রথম সাহেবদের খেলা দেখা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল! তাও রীতিমতো ভয়ডর নিয়ে! হিন্দি সিনেমা লগন প্রায় সবাই দেখেছি। পুরো সিনেমাটাই ক্রিকেটময়। সেখানে কর মওকুফের শর্ত হিসেবে অদক্ষ ভারতীয় ক্রিকেটার যারা কোনোদিন ব্যাট বল হাতে তোলেনি তাদের খেলতে হয় নিত্য জলভাতের খেলা ব্রিটিশ সাহেবদের সাথে। এটা যতটা না ক্রিকেটীয় দক্ষতার তার থেকেও বেশি মনস্তাত্ত্বিক। একদিকে বিশাল কর মওকুফের শর্ত এবং অন্যদিকে শাসকদের বিরুদ্ধে ব্যাট উঁচিয়ে ধরা অথবা বল হাতে তেড়ে আসা! এও এক ধরনের যুদ্ধ ছিল। ব্যাট-বলের যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে ব্রিটিশ সাহেবরা পরাজিত হয়েছিল। এটাই ইতিহাস। ক্রিকেটের এই ব্যাট বলের যুদ্ধই দর্শকের আনন্দের খোরাক। এখন তো গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে ক্রিকেটের জয়জয়কার। ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জাতীয় খেলার থেকেও ক্রিকেট জনপ্রিয় এবং দামী খেলা। এই উপমহাদেশ তো ভালো সারা বিশ্বেই যেসব দেশ ক্রিকেট খেলছে সবার ভিতর ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথই সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য। দর্শক ভাগ্যে লাভও প্রচুর পরিমাণ। তার কারণ ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ মিলিয়ে ক্রিকেটের যে বিপুল সমর্থক রয়েছে তা ইউরোপ অষ্ট্রেলিয়ার দেশেজুড়েও নেই। অন্য সব খেলায় আমরা যতই কম আয় করি, ক্রিকেটে দেদার আয়।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী বোর্ড হিসেবে পরিচিত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। প্রচুর দর্শক ক্রিকেট খেলা দেখে। ইউরোপ আমেরিকায় যেমন ফুটবলটা তুমুল জনপ্রিয়, এখানে ক্রিকেট সেরকম। দীর্ঘ সময় নষ্ট করেও আমরা ক্রিকেট দেখি। এই তিন দেশের ক্রিকেটাররা রীতিমতো রাজকীয় জীবন যাপন করেন। এটা বেশ সময়ের খেলা। দর্শককে দীর্ঘ সময় নিয়ে বসে থাকতে হয়। ঐ যে এটা সাহেবদের খেলা। বেশ সহবৎ নিয়ে খেলতে হয়। আজকাল অবশ্য সহবতের বালাই নেই। খেলার আগে দুই অধিনায়কের টস করতে হয়, হাত মেলাতে হয়, মুখে মিষ্টি হাসি বিনিময় করতে হয় এবং খেলা শেষেও হাত মেলাতে হয়। পরাজিত হলেও ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। এই যে কয়েকদিন আগে এশিয়া কাপ টি-২০ টুর্নামেন্টে ভারত-পাকিস্তানের খেলায় এসব সহবতের কোনো বালাই ছিল না। দুই দলই সমানতালে দেখিয়ে দিয়েছে এসব সহবত দিয়ে কিছু হয় না। বরং ছিল যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা। এমনকি পুরস্কারের দিন তো পরিস্থিতি আরও বেগতিক ছিল। খেলোয়াড়দের মনে যাই চলুক আমরা যারা দর্শক তারা কেবল ক্রিকেটীয় সৌন্দর্যাটাই বুঝি, এসব রাজনীতি বুঝি না। মাঠের বাইরের যুদ্ধ মাঠের ভিতর টেনে আনা, কাউকে খোঁচা দিয়ে কোনো ইঙ্গিত করা ক্রিকেটীয় সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করেছে। ভারত-পাকিস্তান দুই দেশ একে অপরের প্রতিবেশী কিন্তু তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী। এমনিতেই দুই দেশের ভিতর কেমন একটা যুদ্ধ যুদ্ধ মনোভাব থাকে অধিকাংশ সময়ই। ফলে এর রেশ দেখা যায় দুই দেশের ক্রিকেটে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক কোনো টুর্নমেন্ট সচরাচর হতে দেখা যায় না। মাঝে মধ্যে আইসিসি আয়োজিত বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ভাগ্যক্রমে দুই দেশের দ্বৈরথ দেখার সৌভাগ্য হয় ক্রিকেটপ্রেমীদের। সৌভাগ্যই বলছি কারণ এই দুই দেশের খেলা হলেই মাঠে দর্শকের কানায় কানায় ভরে যাওয়া। খেলার আগেই সমর্থকদের তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়া।

এই দর্শকের উপস্থিতি ক্রিকেটের জন্য সৌভাগ্যের। কারণ দর্শক আছে জন্যই ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট নিয়ে এত মাতামাতি। দর্শক না থাকলে কিছুই না। তো আগে তুমুল প্রতিযোগীতা দেখেছি কিন্তু ক্রিকেটে এবার যেভাবে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি প্রভাব ফেলেছে এতটা আগে মনে হয় দেখিনি। টস শেষে হ্যান্ডশেক না করা, মাঠে যুদ্ধের সময়কার ইঙ্গিতপূর্ণ কার্যকলাপ, পুরস্কার প্রদানের দিনের ছবি মনে করিয়ে দেয় ক্রিকেটা আসলে এভাবে হয় না। দুই দেশের খেলোয়াড়দের ভিতর এই অসহিঞ্চু মনোভাব ক্রিকেটেরই ক্ষতি করছে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি বাংলাদেশের মানুষের আনন্দের একটি বড় উৎস হলো ক্রিকেট। আমরা জিতি বা পরাজিত হই আমরা ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকতে ভালোবাসি। আমরা ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করি, ক্রিকেটারদের নিয়ে ভাবি, ক্রিকেট নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নের কথা আজ না বলি। ক্রিকেট আমাদের কাছে আবেগ। অন্য দেশ যাই হোক, এশিয়ার চারটি দেশের ক্রিকেট দেখা আমাদের জন্য অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়। এটা নেহায়েত একটি প্রতিযোগীতা নয়, একটি বিনোদনের উৎস। যদি আর এর ভিতর সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয় ভারত-পাকিস্তানের দ্বৈরথ। তবে এবার যেভাবে শেষ হলো দুই দলের তিন ম্যাচ, তাতে আগামীতে শঙ্কার জায়গা থাকে। আমরা ক্রিকেটীয় সৌন্দর্য নষ্ট হোক চাই না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিষ্ট

সারাবাংলা/এএসজি
বিজ্ঞাপন

ক্রিকেটীয় শিষ্টাচার
১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৩৯

চারিদিকে কী একটা অবস্থা
১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:২৯

একা থেকেও একাকী না থাকার কৌশল
১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:১৭

আরো

সম্পর্কিত খবর