একটা শিশুকে অভিভাবকের খুব আদর যত্ন করে লালন করে সেটাতে কোন দ্বিমত নেই। শিশু যখন আস্তে আসতে বড় হতে থাকে তখন ৪ থেকে ৫ বছর বয়সে তাদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয় এবং প্রতিটি অভিভাবকই চাই তার সন্তান একটা ভালো মানের স্কুলে পড়ালেখা করুক কিংবা ভাল মানুষ গড়ে উঠুক। আমরা অনেকে এখনো জানিনা একটা কোমলমতি শিশুকে কিভাবে তার উজ্জল ভবিষ্যত গড়ার নিয়ম নীতি, যার ফলে শিশুরা অজান্তেই ভুলেভরা তার জীবন শুরু করে।
প্রাইমারি শেষ করে একটা শিশু মাধ্যমিকে যখন পাঠদান করে তখন তার শারীরিক ও আবেগীয় পরিবর্তন ঘটে। সেই সময়টা একজন কিশোরের জীবন গঠনে অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও ভূমিকা রাখা খুবই প্রয়োজন। তাদের সঠিক পথে এগিয়ে নিতে অভিভাবকদের সচেতনতা ও সহমর্মিতা প্রয়োজন। মাধ্যমিকে যখন কিশোরেরা পদায়ন করে তখন অভিভাবকের দায়িত্বের মাত্রা পূর্বের চেয়ে বহুগুণ বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন, এই সময়টা তাদের জীবন গড়ার অন্যতম সময়। তখন তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করা, ভালো সঙ্গ নিশ্চিত করা এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা, সন্তানদের আচরণ ও অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করা ও তাদের আত্মবিশ্বাস এবং দায়িত্ববোধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করা। শ্রেণি শিক্ষক বা স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন, সন্তানের স্কুল জীবন ও পারদর্শিতা সম্পর্কে জানুন, সন্তানের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে উৎসাহ দিন এবং প্রয়োজনে সঠিক দিক নিদের্শনা দিন। এসময়ে খোলামেলা যোগাযোগ রাখা তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং অনুভূতি ও উদ্বেগ বোঝার চেষ্টা করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া তাদের নৈতিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করা, মানবিক ও মূল্যবোধ সম্পর্কে অবগত করা এবং তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও দায়িত্ববোধ গড়ে তোলা অভিভাবকদের অন্যতম দায়িত্ব। অনেক অভিভাবক সন্তানের সাথে কথা বলতে চায় না এই অভ্যাসটা বদলিয়ে তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করুন যাতে তারা নিজেদের চিন্তা ও উদ্বেগ নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পারে। তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং প্রকাশ করুন, যেন তারা মনের করে যে, তাদের সহানুভুতিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দিনের কোন একটা সময় তাদের সাথে পড়ালেখা, খেলাধুলা এবং বন্ধুদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেন, এবং সেই সাথে তাদের মূল্যবোধ ও নীতি সম্পর্কে বলুন ও উদাহরণ দিয়ে নেতৃত্ব দেওয়া এবং জীবন চলার পথে সঠিক দিক নিদের্শনা দিন।
জীবনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে সাহায্য করুন এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরিতে সহায়তা করুন। তাছাড়া পড়াশোনার পাশাপাশি গান, নাচ, আবৃত্তি, খেলাধুলা ইত্যাদি সহশিক্ষা কার্যক্রমে তাদের উৎসাহিত করুন যা তাদের খারাপ কাজগুলো থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করবে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি কমিকস, গল্প বা কবিতার বই পড়তে উৎসাহিত করুন। কিশোর বয়সে তাদের নিজস্ব পছন্দ এবং সিদ্ধান্তে নেয়ার সুযোগ দিন, তবে তা যেন সঠিক পথে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। তাদের উপর দায়িত্ব দিন এবং তারা তা কতটা ভালোভাবে পালন করছে তা পর্যবেক্ষণ করুন, এতে তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরি হবে। শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের সময় যেমন বয়ঃসন্ধিকালে নানা পরির্বতন হয় সে সময় বন্ধুসুলভ আচরন করে পাশে থাকুন।
পরবর্তীতে আপনার সাথে সবকিছু শেয়ার করার মানসিকতা বা আগ্রহ তৈরি হবে। তাদের ভূলগুলি শুধরে দিন কিন্তু সেটা যেন তাদের প্রতি অপমান বা অবজ্ঞার কারণ না হয়, সততা বিনয়, ধৈর্য সহানুভুতি ও শ্রদ্ধাবোধ সম্পর্কে খেয়াল রাখুন, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ একজন কিশোরকে শৃঙ্খলাপূর্ণ ও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। তাই নিজেদের আচরনে অভিভাবকদের ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। সন্তানরা সবচেয়ে বেশি অনুকরণ করে বাবা, মা এবং শিক্ষকদের, সে জন্য অভিভাবকদের অবশ্যই নীতিবান পরিশ্রমী ও সৎ হতে হবে তাহলে সন্তানও সেই পথ অনুসরণ করবে।
বর্তমানে সবকিছুই প্রযুক্তি নির্ভশীল তাই সন্তানের প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি যেমন জ্ঞানের উৎস, তেমনি অপব্যবহারের তা বিপদের কারনও হতে পারে তাই স্মার্টফোন বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে সময় সীমা নির্ধারণ করা খুবই প্রয়োজন। বর্তমানে কিশোর বয়সের ছেলেরাই সবচেয়ে বেশি স্মার্টফোনে আসক্ত। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারে সন্তানদের প্রতি বেশি করে নজর দেয়া উচিৎ। সর্বোপরি বলা যায়, কিশোরদের সঠিক পথে রাখতে অভিভাবকদের ভালোবাসা, ধৈর্য দিক নিদের্শনা ও সময় দেয়ার বিকল্প নেই। একজন সুশিক্ষিত সচেতন ও দায়িত্বশীল অভিভাবকই পারে তার সন্তানকে সুস্থ সুন্দর ও নৈতিক পথের দিকে এগিয়ে নিতে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী