মৃত্যু অনিবার্য হলেও কাম্য নয় তারপরও বিধাতার নিয়ম মৃত্যূর স¦াধ গ্রহণ করতেই হবে। বিধাতার এ নিয়ম মেনে নিতেই হবে এর কোন বিকল্প নেই। কিছু কিছু মৃত্যূ শুধু যে স্বজন, পরিবার বা সমাজকে কাঁদায় তা নয়, কিছু কিছু মৃত্যূ গোটা জাতিকে কাঁদায়। আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শূন্যতা অপুরণীয় হয়ে থাকবে। তার মৃত্যূ দিয়েই বর্ণাঢ্য জীবনের সমাপ্তি ঘটলো।
রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবে, বৈরিতা থাকবে, আলোচনা-সমালোচনা থাকবে, বিরোধ থাকবে। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যূতে গোটা দেশ আজ স্তব্দ হয়ে পড়েছে। জাতি একজন দ অভিভাবক হারালো। দেশের এই ক্রান্তিকালে তার প্রয়োজনীয়তা ছিলো খুব…। ঠিক এই সময়ই তিনি চলে গেলেন। এ শূন্যতা সইবার নয়। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সাত দিনব্যাপী বিএনপি শোক পালন করবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব কার্যালয়ে সাত দিনব্যাপী কালো পতাকা উত্তোলন করার ঘোষণা দেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
যেভাবে আপোষহীন নেত্রী হয়ে ওঠেন খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া, গৃহবধূ থেকে আপোষহীন এক নেত্রীর নাম। তার আপসহীন সংগ্রামী মনোভাব বাংলাদেশের মানুষকে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের বারবার লড়াইয়ে পথ দেখিয়েছে। সাধারণ একজন গৃহবধূ থেকে রাষ্ট্রের ক্রান্তিলগ্নে এক অপ্রতিরোধ্য নেতৃত্ব হয়ে উঠেছিলেন তিনি। শুধুমাত্র স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধেই নয়, পরবর্তীতে ভারতে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট হাসিনার কালো ছায়া থেকে বাংলাদেশকে নিরাপদে রাখতে তার ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী জনপ্রিয় এই নেত্রী ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা চন্দনবাড়ির মেয়ে তৈয়বা মজুমদার আর পিতা ফেনীর ফুলগাজির ইস্কান্দার মজুমদার। দিনাজপুরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন তিনি। জিয়া-খালেদা দম্পতির দুই সন্তান বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মরহুম আরাফাত রহমান কোকো। ১৯৮১ সালের ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে শাহাদাত বরণ করেন। তার আগ পর্যন্ত সাধারণ গৃহবধূই ছিলেন খালেদা জিয়া।
ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলের নেতাদের মধ্যে কোন্দল শুরু হয়। তখন তড়িঘড়ি করে ৭৮ বছর বয়সী ভাইস-প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মূলত, খালেদা জিয়াকে নিয়ে সামরিক ও শাসকচক্রের জন্য ভয় থাকায় তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ চেয়েছিলেন, সাত্তার প্রেসিডেন্ট হোক। এ নিয়ে সেসময় বিএনপিতে মতভেদও দেখা দিয়েছিল।
কিন্তু বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের বয়স এবং দল পরিচালনা নিয়ে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় বিএনপির একাংশ খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে আনার পরিকল্পনা করেন। দলের নেতাকর্মীরা দিনের পর দিন খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে আসার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি দলের হাল না ধরলে দল টিকবে না বলেও অনেকে বলেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আসার বিষয়ে এরশাদের মনে ভয় ছিল। কারণ এরশাদ তখন ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করছিলেন, ভাবছিলেন খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এলে পরিস্থিতি সামলানো তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু কোনো বাধাই আর কাজে আসল না। অবশেষে দলের নেতাকর্মীদের অনুরোধে রাজপথে নামেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ১৩ জানুয়ারি কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে নাম লিখান তিনি। এরপর বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে হাজির হওয়া শুরু করেন। একই বছর ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে খালেদা জিয়া প্রথম বক্তব্য দেন।
দলের তরুণ অংশ খালেদা জিয়াকে দলীয় প্রধান হিসেবে দেখতে চাইলেও জেনারেল এরশাদ আগ্রহ ছিল আব্দুস সাত্তার। বিএনপির চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য একইসঙ্গে প্রার্থী হয়েছিলেন খালেদা জিয়া এবং রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার। এর ফলে এক বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। সেসময় বিচারপতি সাত্তার খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়ে তাকে দলের সহ-সভাপতি এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানান। কিন্তু খালেদা জিয়া ব্যক্তিগত কারণে তা গ্রহণ করেননি। অবশেষে সাত্তারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর খালেদা জিয়া চেয়ারম্যান পদ থেকে তার প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচএম এরশাদ এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন। সাত্তার তখন আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির চেয়ারম্যান থাকলেও দল পরিচালনায় খালেদা জিয়ার প্রভাব বাড়তে থাকে।
১৯৮৩ সালের মার্চে খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হন। এর কয়েকমাস পরেই খালেদা জিয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। এ সময় এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। ১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একদিকে এরশাদবিরোধী আন্দোলন ধীরে ধীরে জোরালো হচ্ছিল, অন্যদিকে এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশজুড়ে খালেদা জিয়ার ব্যাপক পরিচিত গড়ে উঠে। তিনি হয়ে উঠেন আপসহীন নেত্রী। জেনারেল এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে বিএনপি জয়লাভ করে।
রাজনীতিতে আসার ১০ বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। তিনি তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার প্রথম মেয়াদ ছিল ১৯৯১-৯৬, দ্বিতীয় মেয়াদ ছিল ১৯৯৬ সালের ফেরুযুারির পর কয়েক সপ্তাহ এবং তৃতীয় মেয়াদ ছিল ২০০১-২০০৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করে ক্ষমতায় ফিরতে পারেনি বিএনপি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নিয়ে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে আর ঘুরে দাড়াতে দেয়নি। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। শুরুটা ২০১০ সালে; এক কাপড়ে জোর করে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার মাধ্যমে। সেসময় বেগম জিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, বেড রুমের দরজা ভেঙে টেনে-হিঁচড়ে তার কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। আমাকে অপমান করা হয়েছে। যেভাবে বের করা হয়েছে, তাতে আমি লজ্জিত। সেনানিবাসের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে বের করে দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে একে একে মিথ্যা মামলা দিতে থাকে আওয়ামী সরকার। এরমধ্যে ২০০৮ সালে তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের মামলাগুলোকেও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে শেখ হাসিনা।
শুধু তাই নয়, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত করা হয়। যার কারণে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেননি। পুরোনো কারাগারে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বিনা চিকিৎসায় বন্দি রাখার ফলে বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বেগম জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুপারিশ করলেও বারবার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদন শেখ হাসিনার সরকার নাকচ করে দেয়। এরপর দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে, বাধ্য হয়ে সাজা স্থগিত করে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বেগম খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। এ সময় গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় বন্দী রাখা হয় বেগম জিয়াকে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের অবৈধ নির্বাচন ও শাসনকে স্বীকৃতি দেওয়ার শর্তে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল আওয়ামী সরকার। এজন্য তাকে রাজি করাতে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু দেশের গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে এবং মানুষের স্বার্থকে বিকিয়ে দেওয়া সেই প্রস্তাবে আপোষহীন এই নেত্রীকে রাজি করাতে পারেনি কেউ। এরমধ্যে ২০২৪ সালের জুলাইতে কোটা সংস্কার আন্দোলন দাবিতে দেশজুড়ে শুরু হয় আন্দোলন, যা শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলনে গড়ায়। টানা ৩৫ দিনের রক্তয়ী আন্দোলনে পর ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। পরদিন ৬ আগস্ট খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। মুক্তি পাওয়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে লন্ডনে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। তার স্বাস্থ্যের অনেকটা উন্নতি হয়েছিল। তবে নানা রোগে জটিলতা ও শরীর–মনে ধকল সহ্য করে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। বয়সও ছিল প্রতিকূল। প্রায়ই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তেন। হাসপাতালে ভর্তি করানো হতো। গত ২৩ নভেম্বর এমনই পর্যায়ে তাকে শেষবারের মতো রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এক মাসের কিছু বেশি সময় তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঢাকার সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নির্বাচনে পরাজয় ছিল না খালেদা জিয়ার
রাজনীতিতে এসে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে কখনো পরাজিত হননি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাধিক আসনে তিনি বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেন। এর মধ্যে ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনে জয় লাভ করেন। আসনগুলো হলো— বগুড়া-৭, ঢাকা-৫, ঢাকা-৯, ফেনী-১ ও চট্টগ্রাম-৮। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ফেনী-১ আসন থেকে জয়ী হন। ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পাঁচটি আসনে জয় পান। আসনগুলো হলো— বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, ফেনী-১, ল্মীপুর-২ ও চট্টগ্রাম-১। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি পাঁচটি আসনে জয়লাভ করেন। সেগুলো হলো— বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, খুলনা-২, ফেনী-১ ও ল্মীপুর-২। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসনে জয়ী হন। আসনগুলো হলো— বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি থেকে শুরু করে আলজাজিরা, রয়টার্স, এপি, দ্য ডন, এনডিটিভিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রধান শিরোনামে উঠে এসেছে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসসহ দীর্ঘদিনের বহুমুখী অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে আজ ভোরে মারা গেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে উলেখ করেছে, বাংলাদেশের রাজনীতির এক প্রভাবশালী অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। রাজনৈতিক বৈরিতা এবং সেনাশাসনবিরোধী আন্দোলনে তার আপসহীন ভূমিকার কথা তারা বিশেষভাবে তুলে ধরেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন।’ পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মারা গেছেন। ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের সমস্যা ছিল বলে তার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। দ্য হিন্দু ও এনডিটিভি জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশে একটি শূন্যতা তৈরি হলো। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত নভেম্বরে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল এবং সবশেষ তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।’
একসময়ের লাজুক গৃহবধূ সময়ের প্রয়োজনে হয়ে উঠেছিলেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের আপোষহীন নেত্রী। স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলের হাল ধরা, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া, এক-এগারোর ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা এবং বিগত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করা বেগম খালেদা জিয়ার জীবন এক ত্যাগের মহাকাব্য। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে আজ নত্রপতন। হয়ে গেলো মহাকালের সমাপ্তি। তার এই প্রস্থানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো। নিভে গেলো কোটি মানুষের আশার আলো।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট