Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গাজীপুরের বর্বরতা: ধর্ষকদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করুন


৪ মে ২০২০ ১৮:৫১

গত সপ্তাহে গাজীপুরে এক প্রবাসী পরিবারের মা, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিহত হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ বলছে, একজন দাগী অপরাধী, মাতাল ও সমাজবিরোধী কাজটি করেছে। পুলিশের উদঘাটিত তথ্য আষাঢ়ে গল্প হিসেবে পরিচিতি পাবার আগেই র‌্যাব বলেছে, এই ঘটনার সঙ্গে একজন নয় বরং আরো ৫ জন জড়িত ছিল।

পুলিশ তদন্ত রিপোর্টে বলেছে, হত্যাকারী একাই ৪ জনকে হত্যার পর মা-মেয়েসহ তিনজনকে ধর্ষণ করে টাকা, পয়সা, গহনাপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই এজন্য যে তাদের দ্রুত ব্যবস্থার কারনে র‌্যাব অন্য অপরাধীদের সনাক্ত করতে পারলো। তবে পুলিশ এই অতি সরলীকৃত সিদ্ধান্ত নিল কীভাবে? এই প্রশ্ন ওঠানো অবান্তর নয়।

পুলিশ এমন একজন ১৭ বছরের বালককে খুঁজে পেল যে একাই তিনজন মৃত নারীকে ধর্ষণ করতে পারে। পুলিশের অনুসন্ধানে ঘটনার ভয়াবহতা ও বর্বরতার রূপ ফুটে উঠেছে ঠিকই তবে তাড়াহুড়োর মধ্যে সকল রহস্যের উদঘাটন সম্ভব হয়নি বলে মনে করছি।

র‌্যাব পুরো ঘটনা উম্মোচন করেছে বলে বেনজীর আহমদের যোগ্য উত্তরসূরী চৌধুরী আল মামুনসহ তাঁর যোগ্য সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশ্বস্ত হচ্ছি যে, ৬ দুর্বৃত্তের পক্ষেই চারজনকে হত্যা ও তিনজনকে ধর্ষণের ঘটনা সম্ভব। তাদের উদ্দেশ্য ছিল অর্থ লুন্ঠন; তার সাথে যুক্ত হয়েছে কুৎসিত যৌন তাড়না এবং সাক্ষী নির্মুলের প্রয়াস।

জানা গেছে, এই ঘৃণ্য অপরাধীদের ৪ জনের বিরুদ্ধে আগেও বিভিন্ন মামলা ছিল। ছিল মদ, জুয়া ও সামাজিক অপরাধের অভিযোগ। একজন অপরাধী নাবালক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে ধর্ষণের অপরাধে আগেও সংশোধন প্রক্রিয়ায় ছিল। সংশোধন তো দূরের কথা, লঘু সাজার ফলশ্রুতিতে এবারে সে অন্য ৫ জনকে নিয়ে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির পূর্বে প্রবাসী ঐ পরিবারের নিরন্তর বিড়ম্বনার কারণ হয়েছিল।

আমাদের দেশে প্রবাদ আছে ‘যেমন কুকুর তেমন মুগুর’অর্থাৎ অপরাধের শাস্তি হবে অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে, বয়স কিংবা সামাজিক বা রাজনৈতিক অবস্থান দিয়ে নয়। যে ব্যক্তি ধর্ষণের মতো জঘন্য প্রাপ্তবয়স্কের কাজে জড়িত হতে পারে তাকে নাবালক হিসেবে আইনের শিথিল প্রয়োগ তাকে এক ধরনের লাইসেন্স দিয়ে এ জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করতে পারে। তাই ধর্ষণ জাতীয় অপরাধের ব্যাপারে বয়সের বিষয়টি পুনঃনিরীক্ষা বা বিবেচনার দাবি রাখে।

এখন অনেক সামাজিক মাধ্যম বিষয়টিকে সে দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখছে ও দাবি তুলছে যে, এসব ধর্ষণকারীর সাধারন সাজা কিংবা মৃত্যুদণ্ড নয়, তাদের অঙ্গচ্ছেদ করে সমাজের করুনা ও ঘৃনার পাত্রে পরিণত করে অনাগত ধর্ষকদের নিরুৎসাহিত করতে হবে। আমার মনে হয় এই নিষ্ঠুরতার বিকল্প সীমিত।

অতীতে এসিড নিক্ষেপের ক্ষেত্রে কঠোরতা সুফল দিয়েছে। একটা সময় ছিল যখন এসিড নিক্ষেপ একটা নিত্যকার ও অপ্রতিরোধ্য ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। আইনী সংশোধন এবং তার নির্মোহ ও নির্মম প্রয়োগ এসিড নিক্ষেপকে প্রায় নির্মূল করেছে। আমার ধারণা ধর্ষণের বিস্তৃতি ও ব্যাপকতা বিবেচনায় কিছু সময়ের জন্য হলেও আমাদেরকে কঠোরতম অবস্থানে যেতে হবে।

এখন দেখা যাচ্ছে, তিন বছরের শিশু থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষিত হচ্ছে। অসহায় বিধবাও ধর্ষকদের শিকারে পরিণত হচ্ছে। আর ধর্ষক শাস্তি এড়াতে কখনও নাবালকত্বের ভান করছে অথবা সাক্ষী প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করতে ধর্ষিতার প্রাণহানি ঘটাচ্ছে। ধর্ষকের মধ্যে তথাকথিত নাবালক থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধও রয়েছে। এ তো গেল নারী ধর্ষণের কথা।

পুরুষও পুরুষ কর্তৃক ধর্ষিত হচ্ছে যাকে সাধু বাংলায় বলাৎকার বা সমকামিতা বলে। এক্ষেত্রে মাদ্রাসা ছাত্রদের ক্ষতিগ্রস্থতার মাত্রা ও পরিমাণ বেশি। এখানে তথাকথিত ধর্মবেত্তা বা ধার্মিকরা এসব দুষ্কর্মে জড়িত হয়ে খোদ ধর্মের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। জানান দিচ্ছে যে ধর্মও তাদেরকে সৎ পথে আনতে বা রাখতে পারছে না। সমাজের ধার্মিকদের স্বার্থেই এই জাতীয় বলাৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোরতা বাঞ্ছনীয়।

আবারো পুলিশ প্রসঙ্গে আসতে হচ্ছে। পুলিশ মাঝে মাঝে অভিযোগ করেন যে, রাজনৈতিক চাপে তারা প্রকৃত দোষী বা আসামীকে সাজার সম্মুখীন করতে পারে না। গাজীপুরের এই বর্বর ঘটনার অনুঘটক কেউ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয় কিংবা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বা অনুকম্প প্রাপ্ত নয়। তাহলে পুলিশ কর্তৃক এমন দ্রুত তদন্ত এবং অতি সরলীকৃত উপসংহার টানা বিস্ময়ের ব্যাপার বইকি! এতে গাজীপুরের পুলিশ বিভাগ এবং বিশেষ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা পিবিআই এর প্রতিষ্ঠিত সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে নিঃসন্দেহে।

পুলিশের প্রতি প্রত্যাশা রইলো, তারা তাদের দায়িত্ব পালনে আরো সতর্ক হবেন এবং সমাজের দুর্বল অংশসহ বিদেশে কর্মরতদের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যার ব্যাপারে বিশেষ যত্নশীল হবেন। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটি এসব দুষ্কৃতি কর্তৃক আগেই সংকটের মধ্যে ছিল। যথাসময়ে যথাবিহিত পদক্ষেপ নিলে তাদেরকে সুরক্ষা দেয়া যেত বলে মনে করছি।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য

গাজীপুরের বর্বরতা ধর্ষকদের শাস্তি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর