Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জীবন বাঁচাতে আর কয়েকটি দিন ঘরে থাকুন


৪ মে ২০২০ ১৯:১৭

বিশ্বে কোভিড-১৯ বা করোনা মহামারির এই সময়ে আমরা আসলে কাদের পথ অনুসরণ করছি? আমরা কি প্রস্তুত? নাকি আমাদের লেফাফা দূরস্থ অবস্থা। এই বিষয়ে আলোচনার আগে একটু পেছনে তাকাই।

যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এর প্রথম কেস ডায়াগনসিস হয় ২১ ফেব্রুয়ারি (২০টি)। এর একদিন আগে ইতালিতে একটি পরীক্ষা করা হয়। এরপর যুক্তরাজ্যে ২৩ ফেব্রুয়ারি (৪টি), স্পেনে ২৪ ফেব্রুয়ারি (১টি), ফ্রান্সে ২৫ ফেব্রুয়ারি (২টি), ব্রাজিলে ২৯ ফেব্রুয়ারি (১টি), ইকুয়েডরে ১ মার্চ (৫টি), ভারতে ২ মার্চ (৩টি) এবং বাংলাদেশে ৮ মার্চ (৩টি) কেস ডায়াগনসিস হয়।

কোভিড ১৯ এর সর্বোচ্চ কেস শনাক্ত হয় ইতালিতে ২১ মার্চ (৬৫৫৭টি), স্পেনে ২৬ মার্চ (৮২৭১টি), ফ্রান্সে ৩ এপ্রিল (১৭,৩৫৫টি), যুক্তরাজ্যে ১০ এপ্রিল (৮৬৮১টি), যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ এপ্রিল (৩৮,৯৫৮টি), ইকুয়েডরে ২৪ এপ্রিল (১১,৫৩৬টি)। এগুলো ছাড়াও ব্রাজিল, ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে চলমান উর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে।

সবশেষ পহেলা মে’র সমসাময়িক রিপোর্টে শেষ কেস এবং মৃত্যু সংখ্যা যুক্তরাজ্যে ৬২০১ টি নতুন কেস এবং মৃত্যু ৭৩৯ জন, ইতালিতে ১৯৬৫টি ও মৃত্যু ২৬৯ জন, স্পেনে ৩৬৩৯টি ও মৃত্যু ২৮১ জন, ফ্রান্সে ১৬৮টি ও মৃত্যু ২১৮ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৬,০০৭টি ও মৃত্যু ১৮৯৭ জন, ব্রাজিলে ৬৭২৯টি ও মৃত্যু ৫০৯ জন, ইকুয়েডরে ১৪০২টি ও মৃত্যু ১৬৩ জন, ভারতে ২৩৯৪টি ও মৃত্যু ৬৯ জন এবং বাংলাদেশে ৫৭১টি নতুন কেস ও মৃত্যু ২ জন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের করণে প্রথম মৃত্যু হয়েছে, যুক্তরাজ্যে ৫ মার্চ (১ জন), ইতালিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি (১ জন), স্পেনে ৩ মার্চ (১ জন), ফ্রান্সে ২ মার্চ (১ জন), যুক্তরাষ্ট্রে ২৯ ফেব্রুয়ারি (১জন), ব্রাজিলে ১৭ মার্চ (১ জন), ইকুয়েডরে ১৩ মার্চ (১ জন), ভারতে ১২ মার্চ (১ জন) এবং বাংলাদেশে ১৮ মার্চ (১ জন) একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু যুক্তরাজ্যে ২১ এপ্রিল (১১৭২ জন), ইতালিতে ২৭ মার্চ (৯১৯ জন), স্পেনে ২ এপ্রিল (৯৬১ জন), ফ্রান্সে ১৫ এপ্রিল (১৪৩৮ জন), যুক্তরাষ্ট্রে ২১ এপ্রিল (২৬৮৩ জন), ব্রাজিলে ২৮ এপ্রিল (৫২০ জন), ইকুয়েডরে ২৮ এপ্রিল (২০৮ জন), ভারতে ৩০ এপ্রিল (৭৫ জন), বাংলাদেশে ১৭ এপ্রিল (১৫ জন)।

তথ্যগুলো দেওয়ার একটা উদ্দেশ্য আছে। তবে কোভিড-১৯ এর প্রথম শুরু চীনের তুলনা আনা হয়নি এখানে। কেন যেন মনে হচ্ছে আমাদের দেশের অবস্থা লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর ভাবধারার মতো হতে যাচ্ছে। তাই তথ্যগুলো উল্লেখ করা হলো।

করোনা টেস্টের ক্ষেত্রে আমরা উল্লেখিত দেশগুলোর ধারেকাছেও যেতে পারিনি। পর্যাপ্ত টেস্টিং কিট, ল্যাবের অভাব এবং জনগণের অসচেতনতায় কারণে তা সম্ভব হয়নি। যখন মহামারিতে আক্রান্ত উন্নত দেশগুলোর মৃত্যুর হার ও সংক্রমণের হার নিম্নমূখী সেখানে আমরা আমাদের চরম পিক থেকে দূরে আছি।

প্রথম ডায়াগনসিস হতে উল্লেখিত অন্যান্য দেশ থেকে আমরা প্রায় ২০ দিন পিছিয়ে। লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশ এবং পার্শ্ববর্তী ভারত আমাদের কাছাকাছি। সর্বোচ্চ শনাক্ত কেসের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশে (আমাদের থেকে তুলনামূলক অনেক বেশি টেস্ট করে) দেখা যাচ্ছে পিক সময়টা এপ্রিলের শুরু থেকে মোটামুটি পুরোটাই, তবে ইতালির ক্ষেত্রে একটু দ্রুত হয়েছে।

সংক্রমণের ওয়েভ চিন্তা করলেও আমরা এখন দ্রুত লয়ের পিকের শুরুতে যাচ্ছি যেটা হয়তো মে মাসের মধ্য থেকে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারে, এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত।

লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে সংক্রমণ যখন শুরু হয়েছে সেটার দশদিন পর চিন্তা করলেও সময়টা তাই বলে। সর্বোচ্চ মৃত্যুর মিছিল এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রায় শেষ সপ্তাহে ক্রমবর্ধমান থেকে কমে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে এপ্রিলের একদম শেষে এসে লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে উর্ধ্বগামী, যেটা চলমান। এখানেও আমার ধারণা মিলে যায়।

সরকার সঠিক সময়ে লকডাউন নিয়েছিল কিন্তু সমন্বয়হীনতায় সাফল্য আসেনি। আর চলমান শেষ পর্যায়ের বাস্তবতায় বাকী সব দেশগুলো জরুরী অবস্থার মতো লকডাউনে গিয়েছিল যেটা চলমান। সেখানে আমরা সব খুলে দিচ্ছি। জনগনকে সামাজিক দূরত্ব যেটুকু বোঝানো হয়েছিলো সেটাও ভেঙ্গে গেছে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়াও হয়তো ভুলে যাবে।

টেস্টের কথা সেরকম না বলে শুনতে পাচ্ছি উপসর্গ হলেই ঘরে আইসোলেশন হয়ে যান। টেস্ট করানোটাও দুঃসহ যুদ্ধ, সাধারণ মানুষ সে যুদ্ধে যাচ্ছে না। আমি চাই না আমার দেশে সর্বোচ্চ পিক আসুক। আমি চাই না একটু অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করতে থাকুক আক্রান্ত মানুষগুলো। আইসোলেশন হয়তো হবে, কিন্তু অক্সিজেন পাবে না, চিকিৎসক সুরক্ষিত থাকবে না।

পুরো দেশটি কি অরক্ষিত? আমি বিশ্বাস করি না।

সর্বোচ্চ আক্রান্ত চিকিৎসক আর নিরাপত্তা বাহিনীর যোদ্ধারাই। জীবন বাঁচাতে সর্বোচ্চ কঠিন সিদ্ধান্তে যাওয়া কি যায় না? যখন বারবার বলা প্রয়োজন, ঘরে থাকুন; ঘরে থাকুন আর কয়েকটি দিন। তখন মানুষ বের হয়ে যাচ্ছে। আর একটু কঠিন লকডাউন আমাদের মুক্ত করবে আমার বিশ্বাস।

লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ; গবেষণা সহকারী, বিএসএমএমইউ

করোনাকালে ঘরে থাকুন কোভিড-১৯


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর