Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাকালে ডায়ালাইসিস সেন্টার, রোগী ও প্রশাসনের করনীয়


৫ মে ২০২০ ১৯:৫৯

কিডনির জটিল রোগে যারা ভুগছেন, যাদের সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার ডায়ালাইসিস নিতে হয় তারাই কেবল অনুধাবন করতে পারেন বেঁচে থাকার যুদ্ধ কতোটা অন্তহীন আর কষ্টকর। এই রোগে বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস অবশ্যপালনীয়। কিন্তু এটি একটি কষ্টসাধ্য ব্যাপার। যারা ডায়ালাইসিস করছেন তারাই জানেন অথবা যাদের পরিবারে একজন ডায়ালাইসিস রোগী আছে তারাই বুঝতে পারেন এর প্রয়োজনীয়তা এবং অপরিহার্যতা।

যারা ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন তাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি খুবই সামান্য পরিমাণে অবশিষ্ট থাকে। তাই যারা ডায়ালাইসিসের উপর নির্ভর করে জীবন অতিবাহিত করছেন তাদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে তাদের করোনা রোগের উপসর্গগুলো কম প্রকাশ পায়। তাই তারা যেসব সেন্টারে ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন সেখানেই কন্টিনিউ করতে থাকবেন।

বিজ্ঞাপন

তবে পরামর্শ হচ্ছে, ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করতে হবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য। যেমন- গাউন ব্যবহার করবেন, মাথায় কভার, সু-কভার এবং সার্জিকাল মাস্ক ব্যবহার করবেন এবং প্রতিদিন ডায়ালাইসিসের পর ব্যবহৃত কাপড়গুলো গরম পানিতে ধুয়ে দিবেন। যদি সর্দি, জ্বর, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট থাকে তাহলে দায়িত্বরত চিকিৎসককে অবহিত করবেন।

ডায়ালাইসিস রোগীরা যাদের করোনা ইতিমধ্যে ধরা পড়েছে তাদের ডায়ালাইসিস করার জন্য আলাদা ডায়ালাইসিস সেন্টার আমাদের দেশে এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য আলাদা ডেডিকেটেড ডায়ালাইসিস কেন্দ্র আছে। সেখানে যোগাযোগ করে ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কারণ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আগে থেকেই একটি ডায়ালাইসিস সেন্টার আছে। এটা যদিও এই মুহূর্তে খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার তবে স্বাস্থ্য প্রশাসনের উচিত কমপক্ষে বিভাগীয় শহরগুলোতে রোগীদের জন্য আলাদা ডায়ালাইসিস সেন্টারের ব্যবস্থা করা।

বিজ্ঞাপন

ডায়ালাইসিস চালানোর মতো দক্ষ লোকজনের খুব অভাব। বিশেষ করে যেসব হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টার আছে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ থাকা বাঞ্ছনীয়। তা নাহলে স্বাস্থ্যকর্মীরা যদি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে পড়েন তাহলে ডায়ালাইসিস সেন্টার পরবর্তীতে চালিয়ে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে ডায়ালাইসিস নির্ভরশীল রোগীদের জীবন চালানো খুব কষ্টকর হয়ে যাবে। কারণ বাইরে কোন প্রাইভেট সেন্টারে এসব রোগীদের বর্তমানে ডায়ালাইসিস দিতে চাচ্ছে না।

তাই যেসব সরকারি সেন্টারে ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান করা হয় সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুরক্ষা সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ রাখা উচিত। যদি কোন সেন্টারে কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী পাওয়া যায় তাহলে ফিউমিগেশন বা ডিজইনফেকশন করে দুই দিন বন্ধ রেখে পরবর্তীতে আবার ডায়ালাইসিস চালু করা সম্ভব হবে তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ থাকা বাঞ্ছনীয়। ডায়ালাইসিস সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার, স্টাফ নার্স, ক্লিনার সবাইকেই সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করতে হবে। সবার চেষ্টায় এই দুঃসময়ে সংকটাপন্ন রোগীদের বঁচাতে পারলে তা হবে মানবতার স্বার্থকতা।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, নেফ্রোলজী ও ডায়ালাইসিস ইউনিট, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ।

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর