Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তাদের মানবতা আজ কোথায়?


১১ মে ২০২০ ১৪:৪৭

দুর্যোগ মুহূর্তে দরকার জাতীয় ঐক্য; বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের মধ্যে সমন্বয়। দরকার সুপরামর্শ, বিচক্ষণ নেতৃত্ব। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সকলে যে যার জায়গা থেকে করোনা মোকাবিলায় জীবনবাজি রেখে সম্মুখ সমরে। এদের পাশাপাশি অর্থনীতিবিদ, সমাজবিশ্লেষক, চিন্তকদেরও সরব উপস্থিতি প্রয়োজন। কারণ যে সংকট তৈরি হয়েছে বা বিশ্ব যেই পথে যাচ্ছে সেখানে সব খাতের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই এই সংকট উত্তরণে যার যার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে থমকে গেছে বিশ্ব। ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশেও। অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। কর্মহীন হয়ে পড়ছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। এই পরিস্থিতিতে দেশের সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। দুর্যোগে বিপাকে আছেন তৃণমূলের দরিদ্রজনগোষ্ঠী। অথচ তাদের জীবনমান উন্নয়নে যার হাত ধরে শুরু হয়েছিলো ‘সামাজিক ব্যবসা’ সেই নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন কোথায়? কি করছেন তিনি? এই প্রশ্ন ঘুরে ফিরেই উঠে আসছে জনমনে।

বিজ্ঞাপন

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশিষ্টজনেরা সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছেন। কেউ অর্থ দিয়ে, কেউ সুপরামর্শ দিয়ে কেউবা সরাসরি সেবা দিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও চলছে অর্থনৈতিক সংকট। তবে সেদেশে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সরকারকে সুপরামর্শ দিয়ে পাশে আছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।

বসে নেই ভারতের আরেক নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জিও। জনসাধারণের অর্থাভাব দূর করতে টাকা ছাপিয়ে তাদের দেয়ার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সেই বিচারে আমাদের নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন কর্মসূচিতেই দেখা যাচ্ছে না। ভিডিও বার্তায় বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দেশবাসীর উদ্দেশে কিছু বলার সুযোগ থাকলেও তিনি তাও করছেন না।

বস্তিতে বসবাসরত অতিদরিদ্র মানুষের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি নিয়েছে গ্রামীণ শিক্ষা। তবে তা কেবল ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যেই সীমিত। এ পর্যন্ত মাত্র ১৬৩টি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে গ্রামীণ শিক্ষা। করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য ‘করোনা বিমা’ চালু করেছে ডিজিটাল হেলথ (ডিএইচ)। এক লাখ মানুষকে এই বিমা সহায়তা দেবে। এটিও ড. ইউনূসের প্রবর্তিত স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান। এগুলো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগেই করা হচ্ছে।

তবে এর বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নোবেল জয়ী ইউনূসের যে ধরনের উদ্যোগ বা তৎপরতা কাম্য ছিল তার ছিটেফোটাও চোখে পড়েনি। অর্থনীতির সংকট মোকাবিলা বা গ্রামীণ জনগোষ্ঠী যে দুঃসময় পার করছেন তা নিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট বার্তা নেই ড. ইউনুসের। এই সময়ে তা বেশি প্রয়োজন ছিল।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে সরকার। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে রাজশাহীতে একসঙ্গে দুজন মোটরসাইকেলে আরোহী হওয়াতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এরইমধ্যে গত ৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহীতে অনুদান নিতে ভিড় জমিয়েছিলেন এক হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আয়োজন করেছিল। দেশব্যাপী ব্র্যাক তাদের কর্মহীন সদস্যদের মধ্যে দেড় হাজার টাকা করে বিতরণ করছে। স্টেশনে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করার কথা ছিল সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের। তবে এতো মানুষের ভিড় দেখে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।

এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, লোকজনকে বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে খাদ্যসামগ্রী বা অর্থ সহায়তা দেয়া হলে কর্মহীনদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে বলা হচ্ছে। এ অবস্থায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সঠিক হয়নি।

ডা. এনামুল হক আরো বলেন, আমি শুনেছি, সেখানে কয়েকশ লোক জড়ো হয়েছিল। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে তারা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রায় দুই ঘণ্টা। সেখানে একজন যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত থেকে থাকে, তবে অনেকের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

জনস্বাস্থ্য খাতে প্রতিবছর ব্র্যাক কোটি কোটি টাকার ফান্ড ম্যানেজ করে আর এই হলো তাদের জনস্বাস্থ্য জ্ঞান! আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, ব্র্যাকের এই সহায়তা কার্যক্রম শুধুমাত্র তাদের কর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এটা আমজনতার জন্য নয়!

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ঈদ শপিংয়ে খুলবে না বসুন্ধরা সিটি শপিং মল। ইতোমধ্যেই যমুনা ফিউচার পার্ক, বায়তুল মোকাররম, নিউ মার্কেট, গাউসিয়া, চাঁদনী চক দোকান মালিক সমিতিও ঈদে মার্কেট না খোলার ঘোষণা দিয়েছে। বন্দর নগরী চট্রগ্রামেও ঈদে কোন মার্কেট খোলা হবে না বলে জানিয়েছেন সেখানকার সংশ্লিষ্ট সংগঠন এবং নেতারা। এছাড়া দেশের অধিকাংশ এলাকার মার্কেট সংশ্লিষ্টরা জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ঈদের আগে মার্কেট না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ঈদ বাজারে শপিং মলে ভিড়ে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই ঈদকে ঘিরে শপিং মল না খোলার এই নির্দেশ। তবে এই মহামারীর মধ্যেও নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ১০ তারিখ থেকে খুলেছে শীর্ষস্থানীয় দেশীয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘আড়ং’। প্রতিষ্ঠানটি তাদের মোট ২১টি আউটলেটের মধ্যে ১৭টি আউটলেট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তে সমালোচনায় পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তাতে অবশ্য আড়ং বা ব্র্যাকের কিছুই যায় আসে না। কারণ এখানে তাদের ব্যবসা আর মুনাফার হিসেবই যে মুখ্য!

পান থেকে চুন খসলেই জাতিকে জ্ঞান দেওয়া সেইসব মহানরা আজ এই ক্রান্তিকালে কোথায়? দেশের মানুষ চরম শঙ্কা আর অনিশ্চিয়তায় দিন পার করছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তারাও তো মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারতেন। নিদেনপক্ষে ভিডিও বার্তায়ও তো মানুষকে সাহস যোগাতে পারতেন।

ড. কামাল হোসেন, সুলতানা কামাল, খুশী কবীর, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মাহমুদুর রহমান মান্না, বদিউল আলম মজুমদার, শহীদুল আলম, শাহদীন মালিক, আসিফ নজরুল- এদের কোন দৃশ্যমান কার্যক্রম কি আপনাদের কারো চোখে পড়েছে?

লেখক: সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর