Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাক্রান্তি চলতে থাকলে কী হবে আমাদের?


১৫ মে ২০২০ ২২:০১

লকডাউনের একঘেয়ে সময় কাটছে কিভাবে তার বর্ণনায় আমার এক দুঃসম্পর্কের বন্ধু তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছে— এইতো, ঘুম থেকে উঠে বসি, এরপর দাঁত মাজতে বসি, দাঁত মেজে মুখ ধুইতে বসি, ওখান থেকে টয়লেটে গিয়ে বসি, টয়লেট থেকে উঠে হাত ধুইতে বসি, এরপর নাস্তা করতে বসি, নাস্তা সেরে পত্রিকা নিয়ে বসি, অতঃপর ছাদে গিয়ে বসি, ছাদ থেকে ঘরে এসে সোফায় বসি, সোফা থেকে বিছানায় গিয়ে মোবাইল নিয়ে বসি, তারপর আবার খাইতে বসি; এভাবে খেয়ে আর বসেই কাটছে সময়।

বিজ্ঞাপন

বাঁচার জন্য এ বসে থাকাটা জরুরী হলেও এটা যে কত একঘেয়ে ও অনুৎপাদনশীল হয়ে উঠেছে তা ঐ বন্ধুর বর্ণনায়ই স্পষ্ট। সরকার তা বুঝতে পেরে কিছুটা পরিবর্তনের চিন্তা করেছিল। আসলে গত ৪ মে করোনা থেকে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা একদিনে এক হাজারের উপরে দেখে সরকারও একটু আশাবাদী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ১১ মে যখন দেখা গেল হাজার ছাড়িয়ে (১০৩৪) রেকর্ড পরিমাণ আক্রান্তের সংখ্যা এবং তারপরই ১৩ মে আবার সর্বোচ্চ আক্রান্ত ১১৬২ জন ও মৃত্যু ১৯জন এবং ১৪ মে আক্রান্ত ১০৪১ ও মৃত্যু ১৪ জন তখনতো আবার নৈরাশ্য হাতছানি দিয়ে কপালে ভাঁজ আঁকে।

বিজ্ঞাপন

একদিনে অতিসংক্রমন (১০ হাজার) দেখে ভয় পেয়ে রাশিয়ার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সমিতির প্রধান আন্না পোপোভা বলে দিয়েছেন পৃথিবী থেকে কখনোই করোনা যাবে না। আন্না পোপোভার কথাটা ভিত্তিহীন, কিন্তু যখন তা খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে শোনা যায় (বিবিসি, ১৩ মে) তখন তো নিরাশ না হয়ে উপায় থাকে না। এতকিছুর পরেও নৈরাশ্যবাদী না হয়ে আমি মজা করে বলি- গো ধরেছে করোনা; সহসা সে যাবে না। তবে মহামারি রোগের ইতিহাস থেকে সাহস নিয়ে আমি বিশ্বাস করি যে- করোনা যাবেই; হয়তো কিছুকাল বেশী স্থায়ী হবে।

ইতোমধ্যেই প্রমাণ হয়ে গেছে যে, করোনাভাইরাস ডিজিজ (কোভিড-১৯) এর জিনদ্বয় এর আগে দেখা যাওয়া করোনা ভাইরাসের জিনসমূহের চেয়ে বেশী ছোঁয়াচে ও মারমুখী এবং তা দীর্ঘস্থায়ীও হবে। সার্স কোভ-১ যা চীনের গংডং থেকে শুরু হয়েছিল তাও স্থায়ী হয়েছিল মাত্র তিনমাস। কিন্তু এই কোভিড-১৯ যাকে বলা হচ্ছে সার্স কোভ- ২ তা এখনো আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বিবেচনায় বৈশ্বিক মহামারিরুপে সমানতালে বিদ্যমান।

১৯৬৬ সালে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল লান্সেটে করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রকাশিত প্রতিবেদনে টাইরেল ও বাইনোয়ি নামক গবেষকদ্বয় লিখেন যে, করোনাভাইরাস শীতে শুরু হয়ে বসন্তকাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়; ২০১০ সালে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণও তেমনটিই বলেন। কিন্তু কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে তা কার্যকরী হবে বলে মনে হচ্ছে না। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ বলে দিয়েছেন যে, পৃথিবী করোনামুক্ত হতে আরো সময় লাগবে চার বছর আর সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে দুই বছর।

যাই হোক এসব নৈরাশ্যজনক খবর রেখে আবার ফিরে যাই আশাবাদে। গত ৪ মে বাংলাদেশে হঠাৎ করে যেভাবে সুস্থ হওয়াদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল আমরা আছি তেমন খবরের অপেক্ষায়; বাংলাদেশের জন্য এবং সারা পৃথিবীর জন্য। আশা বাঁধার আরো কিছু পথ আছে। যেমন- এক. আশা বাঁধবো এই ভেবে যে, যেহেতু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞায়ই বলা হয়েছে যে কোভিড-১৯ এর দৌড় মার্স (হাল্কা সর্দি, কাশি) থেকে সার্স (অতিমাত্রায় জ্বর, শুষ্ক কাশি ও শ্বাস কষ্ট) পর্যন্ত এবং যেহেতু আক্রান্তদের বেশিরভাগই মার্সের মধ্যে আছেন, সেহেতু আতঙ্কিত না হয়ে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্ত-পোক্ত রেখে আমরা চেষ্টা করেতে পারি এ রোগের ভয়াবহতাকে মার্স এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে।

দুই. অক্সফোর্ডে মানুষের উপর কোভিড-১৯ এর যে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছিল তার ফলাফল শুভ। গত ২৮ এপ্রিল নিউইয়র্ক টাইমস এর একটি খবরে লেখা হয় যে, এ বছরেই ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ডে আবিষ্কৃত ভ্যাক্সিনটি স্বল্পমূল্যে ৬০ মিলিয়ন ডোজ তৈরী করবে এবং আগামী বছর তারা ৪০০ মিলিয়ন ডোজ তৈরি করবে যার খরচ পড়বে মাত্র ১০০০ রুপি করে।

তিন. বাংলাদেশে বিদ্যমান কোভিড-১৯ এর জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কৃত হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ এবং এশিয়ার যে অংশে বাংলাদেশের মতো আবহাওয়া বিদ্যমান সেখানে কোভিড-১৯ এর জীনদ্বয় পরিবর্তিত হয়ে এমন মাত্রায় চলে যেতে পারে যে তা সার্স এর মতো ভয়ঙ্কর রুপে যেতে পারবে না।

আইইডিসিআর এর তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যার তুলনায় মৃত্যুহার অনেক কম (১.৫ শতাংশ)। তার মানে, এখানে বেশীরভাগ রোগীরই রোগের মাত্রা মার্সের মধ্যে আছে। এটাকে ১০০ শতাংশ করতে পারলে আর মৃত্যু হবে না।

চার. গত ২৭মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ইয়ান লিপকিন কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া রোগীর এন্টিবডি তথা ‘ব্লাড প্লাজমা থেরাপি’র কথা বলেছিলেন, তার প্রয়োগে ইউরোপ-আমেরিকায় ভালো ফল পাওয়া গেছে। আমাদের দেশেও যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের সহায়তায় এ চিকিৎসা চালু করা যেতে পারে। এছাড়া চীন রাশিয়া, ইতালির অনুকরনে ভারতে শুরু হয়েছে ফ্যাভিপিরাভি নামক ওষুধের প্রয়োগ। ঐদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে স্কাবোসিক্স নামের ওষুধ ব্যবহার করে ৯৫ শতাংশ সফলতা পাওয়া গেছে বলে খবর এসেছে (১০ মে, ডিবিসি নিউজ)। এসবই আশাবাদ।

পাঁচ. হার্ড ইমিউনিটি কথাটা এখন মুখে মুখে। এর সহজ মানে হলো, দলে দলে সবাই ভাইরাস থেকে ইমিউন বা নিরাপদ হয়ে যাওয়া। যখন ৭০-৯০ শতাংশ মানুষ কোন ভাইরাসের আক্রমন থেকে নিরাপদ হয়ে যায় তখন ঐ জনগোষ্ঠীতে হার্ড ইমিউনিটি এসেছে বলে ধরে নেয়া হয়। সেটা যদি হয় তবে বাঁচা গেল। তবে এর মধ্যে একটা ‘কিন্তু’ আছে। কারণ হার্ড ইমিউনিটি হতে পারে দুভাবে- ক. ৭০-৯০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাক্সিন দিয়ে। খ. ৭০-৯০ শতাংশ মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শরীরের শক্ত-পোক্ত ইমিউন সিস্টেম দিয়ে ঐ ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে শরীরে এন্টিবডি তৈরী করার মাধ্যমে।

এখন ‘কিন্তু’টা হলো ‘খ’ এর মধ্যে। আসুন ব্যাখ্যায় যাই। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে একসময় গুটিবসন্তে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের জন্য ‘পক্স পার্টি’ হতো; এই কারণে যে, একবার হয়ে গেলে এন্টিবডি তৈরী হবে যা আক্রান্ত ব্যাক্তিকে আজীবন গুটিবসন্ত থেকে মুক্ত রাখবে।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সিডিসি’র তথ্যমতে, ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে গুটি বসন্তে মারা যায় মাত্র ১০৩ জন যা বছরের হিসেবে আনলে মাত্র ১৭ জন। অথচ গত দুইমাসে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাতে মারা গেছে ৮৩,২৮২ জন (নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১৩ মে)। গত কয়েকমাসে যুক্তরাজ্যে মারা গেছে ৩৩, ১৮৬ জন (বিবিসি নিউজ, ১৩ মে)। লকডাউন না মানা `সচেতন জনগনের দেশ’ সুইডেনে মৃত্যুহার ১২.৩ শতাংশ (ডাটা ব্যাংক স্ট্যাতিস্তা, ১৩ মে)। বাংলাদেশে আক্রান্ত জনগনের মধ্যে মৃত্যুহার ১.৫ শতাংশ। অর্থাৎ এখন ইউরোপ-আমেরিকার জন্য হার্ড ইমিউনিটির কথা চিন্তা করাটাও পাপ।

তার মানে, যতদিন পর্যন্ত আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা শূন্যতে না নামে, ততদিন আমাদেরকে ঘরেই থাকতে হবে। কিন্তু এতদিন বসে বসে খেলে সব টাকা যে শেষ হয়ে যাবে সেই দিকেও তো চিন্তা করতে হবে। লকডাউনের পর থেকে বিশ্বব্যাপী একটা বড় ধরণের অর্থনৈতিক মন্দার কথা চারদিক থেকে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। গত ১১ মে হিন্দুস্থান টাইমস পত্রিকায় কলাম লেখক শশীশেখর ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনোমি’ এর বরাত দিয়ে বলেন, লকডাউনের পর মাত্র ৫০ দিনে ভারতে বেকারত্বের হার ৭ শতাংশ থেকে লাফ দিয়ে ২৭ শতাংশে চলে এসেছে।

বিবিসির তথ্যানুযায়ী, শুধু এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে বেকার জনসংখ্যা বেড়েছে ২০.৫ মিলিয়ন যা ১৯৩০ সালের মহামন্দার চেয়েও আশংকাজনক। গত পহেলা এপ্রিল নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে লেখক পীটার এস গুডম্যান দাবী করেছিলেন, করোনাভাইরাস পৃথিবীকে একটা নিশ্চিত অর্থনৈতিক মন্দার ফাঁদে ফেলতে যাচ্ছে। ঐ প্রবন্ধে তিনি কয়েকজন অর্থনীতিবিদের বক্তব্য টানেন। এর মধ্যে হার্ভাডিয়ান অর্থনীতিবিদ কেনেথ এস, রোগফ বলেন ‘ইতোমধ্যে বোঝা গেছে যে, এটা হবে গত একশ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে গভীর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা। এখন দেখার বিষয় এটা কতদিন স্থায়ী হয়। কিন্তু যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে সেটা ইতিহাসের সব মন্দাকে ছাড়িয়ে যাবে।

জেনেভার ইন্দোসুয়েজ ওয়েলথ ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানীর প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যারী ওয়েন্স থমসেন বলেন, আমি বরং এটাকে একটা সাময়িক সমস্যা হিসেবেই দেখছি। আপনার মেশিনে সমস্যা থাকলে আপনি তা কিছুক্ষন অফ রাখতে পারেন, আবার তা চালু করলেই তো তা চলতে শুরু করবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ১৩ মে এর খবর অনুযায়ী, বর্তমানে করোনা আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চলের সংখ্যা ২১৫। পৃথিবীর ইতিহাসে এভাবে একসাথে কোন মহামারি ছড়ায়নি। তাই মন্দা নিয়ে ভাবনাটা যৌক্তিক।

কিছুদিন আগে আমার এক ‘অর্থনীতির শিক্ষক বন্ধু’ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে একটা সুন্দর কথা লিখেছিল, ‘অর্থনীতি হলো টাকা নয়, চাকা’। আমি সেটাকে আমার কায়দায় নিয়ে এসে বলি, আসলে অর্থনীতি হলো টাকার চাকা। টাকার এ চাকাটা সব সময় সবখানে ঠিকমতো ঘোরে না। হঠাৎ করে যেকোন কারণে সবচেয়ে বেশী ঘুরত যেখানে সেখানেও স্থবির হয়ে পড়তে পারে এ চাকা। যেমন, ‘টাকার চাকা ঢাকা’ এখন স্থবির। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুদ্ধি করে ঐ চাকা ঘোরাতে শুরু করলেন ধানক্ষেতে। সেটা করে তিনি তার অভিভাবক সুলভ আচরণ দেখিয়েছেন। কিছু বিজ্ঞাপনী বিনোদন সমালোচনার ঝড় তুললেও ঘরে ভাত আসবে কোথা থেকে এই চিন্তাটা যে ঘরের প্রধানকেই করতে হয় তা শেখ হাসিনা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

এখন আমাদেরও উচিত ঘরে বসে হলেও অর্থনীতির চাকাটাকে ঘোরানোর চেষ্টা করা নচেৎ দেশকে তথা পৃথিবীকে একটা নিশ্চিত অর্থনৈতিক মন্দার কবল থেকে রক্ষা করা যাবে না। আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে না রেখে শেষ ওভারে ছত্রিশ রান করার চিন্তাটা জেনে শুনে বিষপানের মতোই হবে।

তাই, অর্থনীতিবিদ ম্যারি ওয়েন্স থমসনের (উপরোল্লিখিত) মতোই আশাবাদী হয়ে বলা যায়- আমরা চাইলেই এ প্রক্ষেপিত মন্দা থেকে আমাদের বিশ্বকে রক্ষা করতে পারি। লেখার শুরুতে টেনে আনা আমার সেই দুঃসম্পর্কের বন্ধুর মতো আমরা যারা বসে আর খেয়ে সময় কাটাচ্ছি তাদের জানা উচিত যে, আসলে আমরা ছাড়া কেউ কিন্তু থেমে নেই। দেশের প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত অনলাইন সভা করে দেশের সব জেলার অর্থনীতির চাকাকে ঘোরানোর চেষ্টা করছেন, বিভিন্ন এনজিও’র ভাই বোনেরা জুমসভা, ওয়েবিনার ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। আমার এক সাংবাদিক বন্ধু গ্রামে গিয়ে ওয়াইফাই লাইন নিয়েছেন। এখন ওখান থেকে অফিস করছেন এবং তার পূর্বে কল্পিত বিশাল শাকসবজি ও ফলমূলের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। মানে তার টাকার চাকা এখন ঢাকায় নয়, গ্রামে। আমাদেরও উচিত, যেখানে সম্ভব টাকার চাকাকে এভাবে ঘুরার মধ্যে রাখা।

ঈদের সময় বাংলাদেশে একটা বড় ধরণের অর্থনৈতিক লেনদেন হয় যা অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে সহায়তা করে। এ ঈদে তেমনটা হবে না। কিন্তু অন্তত কিছু না হলেও যাদের টাকা দিয়ে সরকারের রাজস্ব তৈরী হয় সেই ব্যবসায়ীরা টাকা দিবে কোথা থেকে? এসব চিন্তা মাথায় রেখে অনলাইন শপিং বলুন আর নিয়ম মেনে বলুন চাকাটাকে ঘোরাতে হবে।

শোনা যাচ্ছে, আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বেশী বরাদ্দ দেয়া হবে। তার মানে সরকার তার চিন্তা ঠিকই করছেন। এবার আমাদেরও উচিত নিয়মের মধ্যে থেকেই একটু নড়েচড়ে বসে সরকারের চিন্তার সাথে তাল মেলানো। বিশ্ব একটা বিশাল অর্থনৈতিক মন্দার দিকে যাচ্ছে এটা জেনেও চুপ করে বসে থাকলে তো মন্দা হবেই।

একটা গল্প বলে শেষ করি- শৈশবের কোন এক বর্ষায় ঘরের সামনে একটা ব্যাঙ দেখা গেল। খেলতে থাকা আমাদের দুইভাইকে উদ্দেশ্য করে মা দূর থেকে বলে উঠলেন, লাঠি দিয়ে ব্যাঙটা তাড়া। আমার পীঠাপীঠি বড় ভাই লাঠি খুঁজতে থাকল। সবুজ সুন্দর ব্যাঙটা আমার ভালো লাগল। আমি ওকে বললাম, থাম, আমি এটাকে হরলিক্সের বয়ামে ঢুকিয়ে রাখবো। ও থামল না। ও খুঁজতে থাকল লাঠি আর আমি বয়াম। আমাদের প্রস্তুত হতে হতে ব্যাঙ ঘরে ঢুকে খাটের নিচে চলে গেল, যেখানে আছে নানান পট, বয়াম, মুড়ির টিন। এইবার ঠেলা সামলাও।

ব্যাঙের মতো করোনা ভিতরে ঢুকে গেলেই বাড়বে জটিলতা। তাই খুশখুশে কাশি এলেই সাথে সাথে কালিজিরা বা আমলকি চিবিয়ে খেয়ে কুসুম গরম পানি খান, জ্বর জ্বর ভাব হলেই গরম পানি দিয়ে লাইম সিপ খান। জ্বরের পূনরাবৃত্তি হলে ডাক্তারকে জানান। বয়স্কদের মধ্যে দুধে যাদের এলার্জি তারা ইমিউনিটি শক্ত করার আশায় দুধ খেয়ে ডায়রিয়া বাঁধিয়ে হিতে বিপরীত কান্ড করবেন না, বিকল্প খাবার খান। যেভাবেই হোক সুস্থ থাকুন। অন্তত এ যাত্রায় বাঁচুন।

লেখক:জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষক

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর