ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করছে মানুষ
১৯ মে ২০২০ ১৮:৩৭
একুশ শতকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ৬ জানুয়ারি ২০০৯ দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নেন। ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনে বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল অর্থনীতি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি বিনির্মাণই নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধান বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এটি শুধুমাত্র একটি সরকারী কর্মসূচি নয়, সাধারণ মানুষের কর্মসূচি। দেশের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। বর্তমানে করোনাভাইরাস প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষ সেই কর্মসূচির সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে এবং উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে।
সম্প্রতি ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাওয়ার কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করছি-
১. নতুন যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশের বিচার বিভাগ। দেশের উচ্চ আদালত হাইকোর্টে শুরু হলো অনলাইনে বিচার কার্যক্রম। শুধু হাইকোর্ট নয়, নিম্ন আদালতগুলোতেও এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে নিয়মিত আদালত বন্ধ থাকায় ভার্চুয়াল আদালত চালু করতে রাষ্ট্রপতিকে অধ্যাদেশ জারির জন্য অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করা হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই আবেদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার আলোকে আইন মন্ত্রণালয় গত ৯ মে ভার্চুয়াল উপস্থিতিকে সশরীরে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য করে আদালতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ নামে গেজেট প্রকাশ করে। এই অধ্যাদেশের ক্ষমতাবলে ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার মাধ্যমে আদালতকে মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ বা রায় দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়।
২. বাংলাদেশের মানুষ যখন করোনাভাইরাস মোকাবিলা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল ঠিক তখনি আমাদের জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার পথ খুঁজতে থাকেন। তারপর তিনি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে সাত দফা পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের ৬৪ জেলার কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। এর মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসনকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যা আমাদের করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সচেতন করেছে। মানুষের মনের ভেতর যে ভীতি, ভয় ছিল সেটা দূর হয়েছে।
৩. করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অন্যতম উপায় সামাজিক দুরত্ব মেনে চলা। প্রথম দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাভাবিকভাবেই গণমাধ্যম কর্মীদের ডেকে সংবাদ সম্মেলন করতেন। কিন্তু এর মাধ্যমে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা কঠিন হতে থাকে। এরপরেই করোনাভাইরাসের সর্বশেষ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গত ৭ এপ্রিল থেকে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
৪. করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত ২৯ মার্চ থেকে সংসদ টেলিভিশনে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির পাঠদান সম্প্রচার শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। এরপর ৭ এপ্রিল থেকে প্রাথমিকের ক্লাসও সম্প্রচার করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইউজিসি দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
৫. দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, বিভিন্ন মন্ত্রী-সাংসদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ভিডিওয়ের মাধ্যমে বাসা থেকে বার্তা দিচ্ছেন।
উপরোক্ত প্রত্যেকটা ঘটনা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। আর ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে মানুষ অতিসহজেই তার কাঙ্ক্ষিত তথ্য পেয়ে যাচ্ছে। এতে বিশেষ কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হয় না।
উলেখ্য, ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করেছিল, ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ পরিণত হবে। একটি উন্নত দেশ, সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, একটি ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠী, রূপান্তরিত উৎপাদন ব্যবস্থা, নতুন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি সব মিলিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের স্বপ্নই দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বস্তুত জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যে সমৃদ্ধি ও উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করবে।
বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপই হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে বোঝায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে সেই সুখী, সমৃদ্ধ, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ, যা প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণভাবে জনগণের রাষ্ট্র এবং যার মুখ্য চালিকাশক্তি হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। এটি বাংলাদেশের নাগরিকের উন্নত জীবনের প্রত্যাশা, স্বপ্ন ও আকাক্ষা। এটি বাংলাদেশের সব মানুষের ন্যূনতম মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর প্রকৃষ্ট পন্থা। এটি বাংলাদেশের জন্য স্বল্পোন্নত বা দরিদ্র দেশ থেকে সমৃদ্ধ ও ধনী দেশে রূপান্তরের জন্য মাথাপিছু আয় বা জাতীয় আয় বাড়ানোর অধিকার। এটি হচ্ছে একুশ শতকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা।
প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথিকৃৎ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কেননা, তিনি পথিকৃৎ হিসেবে লক্ষ্য অর্জনে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য ছেলে এবং আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তথ্যপ্রযুক্তি তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে এবং স্কুল পর্যায়ে সেসব ল্যাবের নামকরণ করা হয়েছে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’। নিঃসন্দেহে এটি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রবর্তনের মাধ্যমে নাগরিকদের আন্তঃযোগাযোগ সহজতর হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব জেলা শতভাগ ইন্টারনেটের আওতায় আসবে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৯৩ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং ১৬০ মিলিয়ন মোবাইল ব্যবহারকারী আছে এবং মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে নবম। তাছাড়া দেশে বর্তমানে ২৮টি হাইটেক পার্ক নির্মাণাধীন রয়েছে। এগুলোর কাজ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বে আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়ন হবে। ফলে সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
২০২৩ সাল নাগাদ সরকারের সব অফিস ও দফতরসমূহ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করবে। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নের আওতায় প্রায় ৪৫,০০০ সরকারি অফিস ও দফতরের ওয়েবসাইট রয়েছে। অর্থাৎ এক ক্লিকেই আমরা সরকারের সব কার্যাবলি ঘরে বসেই দেখতে পারি এবং সব সেবা ঘরে বসেই উপভোগ করতে পারি। দেশে প্রায় ৫ হাজার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে; যেখান থেকে প্রান্তিক জনগণকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনসহ আরো অনেক সেবা দেওয়া হয়। এছাড়া প্রায় ১০০ মিলিয়ন বাংলাদেশি নাগরিককে ডিজিটাল আইডি কার্ড প্রদান করা হয়েছে; যেটি বর্তমান সরকারের একটি বিশাল অর্জন।
সরকারের সব ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার আয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার বেড়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা আমাদের নিজেদের তৈরি পণ্য ব্যবহার করছি। অর্থাৎ বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য গতিতে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই কর্মসূচি যখন প্রথম ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন তা নিয়ে কেই কেই হাসি-তামাশা করেছিল। কিন্তু সাধারণ জনগণ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এখন তা হাসি-তামাশার বিষয় নয়, বাস্তব।
প্রযুক্তির উদ্ভাবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারি বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি লাভ করেছে এবং মোবাইল ও ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি প্রযুক্তি ও নানা উদ্ভাবনের হাত ধরে পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ