মানবিক প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে করোনাদুর্গতদের ঈদ উপহার
২২ মে ২০২০ ১৮:৫৭
বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মানবিক সহায়তার নতুন রেকর্ড করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে আড়াই হাজার টাকা করে সহায়তা পেয়েছেন নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবার। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ও বর্তমান বিশ্বে এটি রেকর্ড।
এই কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে একটি ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মানবিক সহায়তা কর্মসূচিগুলো তুলে ধরা হয়। ওই ভিডিওটিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁর গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা হয়।
একসঙ্গে এতো মানুষ মানবিক সহায়তা পাওয়ার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম এতো সংখ্যক মানুষকে একসাথে মানবিক সহায়তা প্রদান করেছেন।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রমজানের শুরুতে প্রথম ধাপে ৬ হাজার ৯৫৯টি কওমি মাদ্রাসায় ৮ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেন। পরে দ্বিতীয় ধাপে আরো ৬ হাজার ৯৭০ টি কওমি মাদ্রাসায় ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকার অনুদান দেন।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটের সময়ে সারা দেশে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে সরকার ত্রাণ সহায়তা দেয়া অব্যাহত রেখেছে। গত ১ মে পর্যন্ত এক লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন চাল ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ করা হয়েছে এবং বিতরণ করা হয়েছে ৯২ হাজার ৩৪১ মেট্রিক টন। বিতরণকৃত চালের উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা ৯৩ লাখ ৩৮ হাজার এবং উপকারভোগী লোক সংখ্যা ৩ কোটি ৯৫ লাখ।
এছাড়া দেশের ৬৪ জেলায় এ পর্যন্ত নগদ প্রায় ৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে নগদ সাহায্য হিসেবে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫২ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং বিতরণ করা হয়েছে ৪১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এতে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা ৫১ লাখ ৭৭ হাজার এবং উপকারভোগী লোকসংখ্যা প্রায় দুই কোটি ৪২ লাখ। শিশুখাদ্য সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ করা হয়েছে ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এতে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা দুই লাখ ৬৩ হাজার এবং লোক সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ ২৬ হাজার।
করোনাভাইরাস সংকটে কর্মহীন মানুষের জন্য সরকারি ত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ১০ টাকা কেজি চালের ব্যবস্থা করেছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে টিসিবির পণ্যের ব্যবস্থা পর্যন্ত করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারের পাশাপাশি সারা দেশে কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কোথাও কোথাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে গরিব মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। সারা দেশে ৯০ লাখ ২৫ হাজার ৩২৭ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি ৮ কোটি ৬২ লাখ ৮ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে।
এছাড়া পিপিই, চশমা, মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড গ্লাভস, ফিনাইল, হ্যান্ড সেনিটাইজার, ব্লিচিং পাউডার, স্প্রে মেশিনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম ও টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে এবং বিভিন্ন এলাকায় ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছে, যার সেবা এখনো চলমান।
সেই সাথে সারা দেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কর্মসূচি পালন করে আসছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ইফতার, সেহরি ও বিনামূল্যে সবজি বিতরণ এবং টেলিমেডিসিন, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও লাশ দাফনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম চলমান।
রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা করোনা সংকটে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যাতে এই সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আগের অবস্থায় দ্রুত ফিরে আসতে পারে। মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরবরাহ ও চাহিদা দ্বিমুখী সংকটের সম্মুখীন। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন খাতে ১১.৬০ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সম্মুখসারির যোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলেছেন। প্রত্যক্ষভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিশেষ পুরস্কার ও প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। এজন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ডাক্তার, সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মচারীদের জন্য বিশেষ বিমা ব্যবস্থা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দায়িত্ব পালনকালে যদি কেউ আক্রান্ত হন, তাহলে পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য থাকছে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা করোনাভাইরাসের এই সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তিনি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। কারণ বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এখানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে জাতিসংঘের একটি গোপন প্রতিবেদনে বলেছিল। অথচ সেই আশংকা মিথ্যা প্রমাণ করে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ অন্য দেশের তুলনায় কম সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এক কথায় বলা যায়, যেখানে অন্য দেশগুলো করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। কিসিঞ্জারের সেই ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ তত্ত্ব কেবল বৈশ্বিক বিশ্লেষকদের কাছেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের কাছেও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ঠিক
তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে রোল মডেল হবে। আর বহির্বিশ্বের সকল ধারণা ভূল প্রমাণ করে বাংলাদেশ করোনা মুক্ত হবে।
লেখক: সাবেক ভিপি, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র সংসদ। সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ