Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা মহামারি-সাইক্লোন আম্পান ও ঈদ


২৩ মে ২০২০ ২২:১৭

প্রানঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব। আমাদের সরকার সর্বোচ্চ সতর্কতার অংশ হিসেবে কার্যত সমস্ত বাংলাদেশ লকডাউন করে রেখেছে। দেশব্যাপি চলছে সাধারণ ছুটি। শুধুমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বা শিল্প ছাড়া ধরা  যায় সবই বন্ধ।

এ কারণে অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি বেসরকারি খাতের আবস্থাও অনেকটাই জড়োসড়ো। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় ২৬ জেলায় আঘাত হানলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আম্পান যার প্রাথমিক ক্ষতি প্রায় ১১ ‘শ কোটি টাকা। তবে প্রকৃত ক্ষতি হয়তো আরও অনেক বেশি। এমন অবস্থায় এবারের ঈদ কেমন যেতে পারে তার একটা ধারণা তুলে ধরতেই এই লেখা।

বিজ্ঞাপন

আমরা জানি ঈদ মানে আনন্দ বা খুশি। আপনি কি বলতে পারেন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারের ঈদের প্রকৃত এ অর্থ কি সার্থক হবে? যদিও সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর। কিন্তু করোনার কারণে কাজ না থাকায় কোন না কোনভাবে সবার আয়ের ওপর বড় একটা চাপ পড়েছে। আবার যারা কিছুটা বৃত্তবান, তারাও তুলনামূলক অস্বচ্ছল আত্মীয় ও বিপদগ্রস্ত প্রতিবেশীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।

এর মধ্যে ঈদের ঠিক আগে আগে ঘটে গেল মহাপ্রলংকারী সাইক্লোন আম্পান। যার কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে অনেক গ্রাম। সাগরের লোনা পানি ঢোকায় নষ্ট হয়েছে চিংড়ির ঘের, ফসল, বসত বাড়ি, অনেক অর্থকারি ফল ও ফসল। এমন অবস্থায় যে কৃষকের আশা ছিলো হয়তে আম, লিচু বা অন্য ফল ও ফসল বিক্রি করে কিছুদিন পরে একটা বড় অংকের অর্থ উপার্জন করে কিছুটা হলেও করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু হলো এর উল্টোটা। আয়ের পরিবর্তে তাকে এখন ব্যায় করতে হবে তার নষ্ট হয়ে যাওয়া ঘর মেরামতে, বাচ্চার বই কিনতে বা নতুন করে কৃষি কাজ শুরু করার জন্য বীজ বা সার কিনতে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের অবস্থা অনেকটাই দিশেহারা। বিশেষকরে যাদের ঘর আংশিক বা পুরোপুরি ভেঙে গেছে আসন্ন বর্ষা মোকাবেলায় তাদেরকে ঘর মেরামত করতেই হবে। সেই সঙ্গে কাঁচা টয়লেট, টিউবঅয়েলসহ সুপেয় পানির মাধ্যমগুলোও মেরামত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

যদিও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এখন থেকেই ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন। তবুও তাদের জন্য আমাদের যা যা করা প্রয়োজন তা নির্দিষ্টভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হল –

  • জোয়ারের পানি যাতে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য যে এলাকার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা মেরামতের কাজ দ্রততার সঙ্গে করতে হবে। একই সঙ্গে এ কাজে শ্রমিক হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
  • যাদের ঘর নষ্ট হয়েছে তা মেরামতের ব্যবস্থা করতে প্রকৃত তালিকা প্রনয়ণ করে যতদ্রুত সম্ভব তাদের মোবাইলে সরাসরি নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
  • ক্ষতিগ্রস্ত আম ও লিচুর বাগান মালিকদের তালিকা কৃষি বিভাগ কর্তৃক দ্রুততার সঙ্গে করে তাদের জন্য আগামীতে কম সুদে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
  • মৎস্য বিভাগ কর্তৃক চিংড়ি ঘের মালিকদের তালিকা করে তাদেরকেও অনুরুপ অর্থায়ন করতে হবে।
  • করোনার পাশাপাশি প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গুরুত্ব দিতে হবে না হলে জনস্বাস্থ্যে জন্য হুমকি হয় অনুরুপ আরও অনেক রোগ দেখা দিতে পারে।
  • সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সকল ছুটি বাতিল করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাড়াতে হবে।

করোনাকালীন সময়ে আমারা সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়িদের, ধন্যাঢ্য ব্যক্তিদের , বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনকে দেখেছি সহযোগিতার হাত বাড়াতে। কিন্তু দু:খের বিষয়– এ সময়ে আমরা কিন্তু দাতাসংস্থার তেমন কোন সাড়া পাইনি। এমনকি আর্ন্তজাতিক এনজিওগুলোও ছিল অনেকটাই নিরব। আশা করবো তারা এ দুযোর্গের সময় সরকারের পাশাপাশি সাধ্যমত ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার চেষ্টা করবে।

সর্বোপরি, ঈদ-উল-ফিতর হয়তে ক্ষতিগ্রস্ত কারও জন্য মোটেও ভালো যাবে না। তবুও ঈদ- উল-আযহাতে যেন সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও আনন্দ করতে পারে তার জন্য কমর্সংস্থানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প গ্রহণ কতে হবে। এবং এ বিষয়ে সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে স্থানীয় সরকার, খাদ্য, কৃষি, স্বাস্থ্য, পানি সম্পদ, অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে কাজ করতে হবে এবং এ সকল প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সরাসরি মনিটরিং এর জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করতে পারে।

লেখক- উন্নয়নকর্মী, পরামর্শক ও গবেষক

ঈদ উল ফিতর করোনা মহামারি মো: আব্দুল কাদের খান সাইক্লোন আম্পান

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর