Sunday 01 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাকালে সরকারের নতুন সিদ্ধান্তও ফলপ্রসূ হবে


২ জুন ২০২০ ১৪:৪৯
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাভাইরাস শুধু বাংলাদেশে সমস্যা নয়। এটা বৈশ্বিক সমস্যা। তবে এই সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন অবস্থান করলে সামনে আরও বেশি সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ, এই করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়ছে দেশের প্রতিটি সেক্টরে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। সরাসরি মানুষের জীবন জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মার্চের ৮ তারিখ প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিয়ে জরুরি নয় এমন ব্যবসা-বাণিজ্য অনলাইনে পরিচালনার নির্দেশ দেন। এর আগে জানুয়ারির প্রথম থেকেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং ডিভাইস বসান, যাতে কেউ করোনাভাইরাসের উপসর্গ বহন করছে কিনা তা বোঝা যায়। প্রায় সাড়ে আট লাখ মানুষের স্ক্রিনিং হয়, তাদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।

বিজ্ঞাপন

গত তিন মাস ধরে করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে লড়ছে বাংলাদেশ। ছোঁয়াচে এই রোগের বিস্তার রোধে ৩০ মে পর্যন্ত ছিল সাধারণ ছুটি। সবাইকে বলা উহয়েছিল ঘরে থাকতে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের সূচনার দিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ থেকে সর্বস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ঘোষিত হয়। পরে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। অর্থাৎ রোগী শনাক্তের ২ সপ্তাহ পরই হার্ডলাইনে চলে যায় সরকার।

গত ৩ মাসে দেশের আট বিভাগের জেলা প্রশাসক, চিকিৎসক, পুলিশ, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে ব্রিফিং ও নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সংকট মোকাবিলার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মতামতও নিয়েছেন; লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ যেন খাবার সংকটে না পড়ে সেজন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও নেতা-কর্মীদের নির্দেশও দিয়েছেন একাধিকবার।

মহামারির কারণে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সরবরাহ ও চাহিদা দ্বিমুখী সংকটের সম্মুখীন। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন খাতে যে বৃহৎ অংকের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে যার মূল সুবিধা ভোগ করবে উৎপাদন ও সেবা খাত, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষামূলক খাতসমূহ। সংকট প্রলম্বিত হলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী এ সময় শুধু কৃষি খাতে প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা দিয়েছেন।

লকডাউন ও ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটির পরবর্তী দিনগুলোতেও খেটে খাওয়া মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষার জন্য সুচিন্তিত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। যাতে কোনো মানুষই মৃত্যুবরণ না করে, আর যাতে মানুষ আক্রান্ত না হয়, সেই লক্ষ্য নিয়েই প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নিয়ে কাজ করছেন। অন্যদিকে মানুষের জীবিকা রক্ষার জন্য লকডাউন শিথিল করে দিয়েছেন।

বহুমুখী সংকটের কথা মাথায় নিয়ে আমাদের লকডাউন শিথিল করতেই হতো। আমরা যে স্থানে এসে পৌঁছেছি সেখান থেকে উৎপত্তিস্থলে ফিরে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। যা হয়ে গেছে তাকে ভিত্তি ধরেই এগোতে হবে। যেমন এগোচ্ছে মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, শপিং মল। শিক্ষাঙ্গনও খুলে দিতে হবে।

ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সাধারণ ছুটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে জরুরি প্রয়োজনের প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের সব কিছু বন্ধ ছিল। জনবহুল দেশে এত দীর্ঘ মেয়াদে ‘লকডাউন’ চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন। এরপরও আপামর জনসাধারণ রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে লকডাউনের নিয়ম-কানুন মেনে চলেছেন। এ কারণেই ১৫ দিনের জন্য নতুন নিয়মে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সরকার সেই চেষ্টা করে। সরকারকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সীমিত পরিসরে অফিসসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত মূলত সবার বিষয় চিন্তা করেই নেওয়া হয়েছে। জীবন-জীবিকাকে সমন্বয় করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিয়ে যেতেই প্রধানমন্ত্রী এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

করোনা থেকে দেশ কবে মুক্তি পাবে, এটা কেউ বলতে পারেন? তাই অনির্দিষ্টকালের জন্য বসে থাকা যাবে না। কয়েক দিন পর বাজেট পেশ করতে হবে। শুধু ত্রাণের খাবারে মানুষের পেট ভরবে না। তাই লকডাউন কিছুটা শিথিল করা ছাড়া বিকল্প ছিল না।

মনে রাখতে হবে লকডাউন সীমিতভাবে তুলে নেওয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। করোনাকে সঙ্গে নিয়েই জীবন পরিচালনা করতে হবে।

ইউরোপ, আরব ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বছরের এ সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যবিধির অভ্যাসগুলো প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী অন্যান্য দেশের নেওয়া পদক্ষেপের তুলনায় বাংলাদেশের সিদ্ধান্তগুলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রশংসা পেয়েছে। রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। আশা করি, নতুন সিদ্ধান্তও সঠিক প্রমাণিত হবে।

লেখক: সাবেক ভিপি, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র সংসদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ

করোনাকাল করোনাভাইরাস গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু লকডাউন স্বাস্থ্যবিধি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর