Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমার শিক্ষক মোস্তফা কামাল সৈয়দ


৩ জুন ২০২০ ১৯:২৩

আমাদের ঢাকা থিয়েটারের ‘হাত হদাই’ নাটকে চৌষট্টি বছরের আলোর ভান্ডারী নিজের সম্পর্কে বলতেন, ‘আই তো ইয়াং ম্যান সিক্সটি ফোর’। তারও চেহারা আর শরীরে বেশ খানিকটা ন্যুজ ভাব ছিল। আর আমাদের কামাল ভাই আজ অপার্থিব অথচ অন্তর জুড়ে জ্বলজ্বলে মোস্তফা কামাল সৈয়দ ভাই সে তো ছিলেন টান টান শরীরে ‘অলওয়েজ ইয়াং ম্যান’ মনে মননে ও শরীরে।

২০০৫ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারি মিডিয়াকম ছেড়ে মাছরাঙ্গা প্রডাকশনের দায়িত্ব নিতে হলো। সঙ্গে পেলাম নুরুল আলম আতিক আর নজরুল ইসলাম রাজু ভাইকে। প্রথম ধারাবাহিক নাটক চিঠি’র নির্মাণ কাজ চলছে আতিকের পরিচালনায় আর শিবব্রত বমর্নের রচনায়। প্রতিটি ভিন্ন গল্প নিয়ে ধারাবাহিক কাজেই খরচ বেশি। আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব অঞ্জন চৌধুরী বললেন, এনটিভিতে গিয়ে অনুষ্ঠান প্রধানের সাথে কথা বলতে। নাম মোস্তফা কামাল সৈয়দ। বিটিভিতে ছিলেন দীর্ঘদিন, সহ একটা সংক্ষিপ্ত পরিচিতি যা ছিলেন তাতে মনে হলো খুব ব্যক্তিত্ববান রাশভারী লোক।

বিজ্ঞাপন

দরজায় টোকা দিয়ে একটু কেশে নিয়ে ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলাম,’আসবো?’
উনি নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠেই ছুটে এলেন। তারপর ভরাট গলায়, ‘আসুন আসুন পঙ্কজদা (উনি আমাকে পুরো জীবন এই সম্বোধনেই ডেকেছেন)। বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন, অঞ্জনদা (মাছরাঙ্গার এমডি) আপনার কথা বলেছেন।

তারপর নানা গল্প শুরু। প্রায় চল্লিশ মিনিট কিংবা তারও পরে প্রসঙ্গে এলেন। পঙ্কজদা বলেন আমাদের এনটিভির জন্য কি এনেছেন? ‘চিঠি’ ধারাবাহিকের প্রসঙ্গ নিয়ে খানিকটা বলার পরেই প্রস্তাবনা। গল্প সংক্ষেপ, পরিকল্পনা, বাজেট সব দেখলেন এবং পড়লেন। বেশ কিছু প্রশ্ন করলেন এবং বিশাল একটা হাসি দিয়ে বললেন, কালই চুক্তিপত্র হয়ে যাবে, কাজ শুরু করুন। ‘চিঠি’ শুধুমাত্র এনটিভির।

বিজ্ঞাপন

সেদিনই কামাল ভাই আমার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিলেন যেকোন প্রযোজনা হাতে নেওয়ার আগে উনাকে দেখাতে হবে। সেই সুযোগে আমিও একটা কথা আদায় করে নিলাম, উনার শিষ্যত্ব। যেকোন দিন যেকোন সময় ফোন করতে পারবো, বিনা বাধায় আসতে পারবো, আলোচনা করতে পারবো, পরামর্শ নিতে পারবো। এমনকি সেই প্রযোজনা যদি অন্য টিভি চ্যানেলের জন্যও হয়। এরপর ২০১৭ সাল পর্যন্ত কত নাটক, কত ধারাবাহিক, সিনেমা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে।

মাঝখানে ২০১০ সালের পর থেকে এনটিভিতে ভিন্ন ধরনের, ভিন্ন রুচির নাটক শুরু হলো। কামাল ভাইয়ের মন খারাপ আমি দেখেছি, কথা হয়েছে অনেক।
‘কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করবো না’- এ শপথ আমাকে কামাল ভাই-ই করিয়েছে। তাই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাতে পারিনি। শেষ দিন পর্যন্ত চেষ্টা করেছি ওনার মতো মাথা উঁচু রাখতে।

প্রতিটি প্রজেক্টের প্রতিটি পান্ডুলিপি পড়া, এডিট করা, দায়িত্ব নিয়ে নির্মাণ করা- এগুলো তো কামাল ভাইয়ের কাছ থেকেই শেখা। প্রতিটি বিষয়ে এতো খুতখুতে ছিলেন তিনি এবং তাতে কখনো কখনো বিরক্তি যে আসেনি, রাগও হইনি তা কিন্তু নয়। প্রতি সপ্তাহে ২ টি করে ধারাবাহিকের ৪ থেকে ৫ টি করে পর্ব প্রচার হচ্ছে। প্রচারের ২ দিন আগে জমা নিয়েছেন। নিজে থেকে প্রিভিউ করেছেন। প্রতি প্রিভিউতে ২/৩ বার করে ফোন নানান প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে কত কি যে শিখেছি।

সংলাপ, শিল্পীর অভিব্যক্তি, পোশাক, ফ্রেম, গল্প ইত্যাদি নিয়ে কত কত কত পরামর্শই যে পেয়েছি এই দেবদূতের কাছ থেকে তা ভাষায় প্রকাশের নয়।

অডিও ভিজুয়াল মিডিয়াতে যে ক’দিন কার্যকরী ছিলাম খুব বেশি অবদান রাখতে পারিনি। শিক্ষক সৈয়দ যা কিছু শিখিয়েছেন হাতে ধরে সবটুকু প্রয়োগও করতে পারিনি সত্যি। তবে একথা বোধ করি মাথা উঁচু করে বলতেই পারি।

আজ যতটুকু সফলতা নিজেকে আনন্দ দেয়, গর্বিত করে সে সাহস, জ্ঞান আর শিক্ষাটা একজন গুরুর নিজ হাতে তৈরি। স্যার মোস্তফা কামাল সৈয়দ- আমার শিক্ষক।

লেখক: পঙ্কজ বনিক, প্রাক্তন প্রধান, মাছরাঙ্গা প্রডাকশনস লিমিটেড

এনটিভি নাটক নির্মান পঙ্কজ বণিক বাংলাদেশ টেলিভিশন বিটিভি মোস্তফা কামাল সৈয়দ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর