বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ কেন বাংলাদেশ?
৯ জুন ২০২০ ১৪:৫৩
বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা দিন দিন এক ভয়ংকর পরিণতির দিকে এগুচ্ছে। মারাত্মক পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যগত বিপদ ডেকে আনছে এ সমস্যা। প্রধান শহরগুলোতে বর্জ্য সংগ্রহের হার কম হওয়ার ফলে এ সমস্যার উদ্ভব। ঘনবসতিপূর্ণ দেশে বিশাল বর্ধনশীল জনসংখ্যার কারণে বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিশ্বের নবম জনবহুল এবং দ্বাদশ সর্বাধিক ঘন জনবহুল দেশ বাংলাদেশ। ইউএনএফপিএর এক প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বেহাল দশা যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এদিকে প্লাস্টিকের ঝুঁকি থেকে বাংলাদেশ যেন রক্ষা পাচ্ছে না। বিভিন্ন শিল্পে বিশেষত প্যাকেজিংয়ে প্লাস্টিকের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় প্লাস্টিক দূষিত দেশগুলোর মধ্যে একটি। প্লাস্টিকের বোতলগুলো যত্রতত্র ছুঁড়ে ফেলার ফলে জলাবদ্ধ নদীর চিত্রগুলো ভয়ংকর সমস্যাকে চিত্রিত করে। যা শুধু স্বাস্থ্য বিপদই ডেকে আনছে না বরং নীরবঘাতক হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন ৩ হাজার টন প্লাস্টিকের বর্জ্য তৈরি হয়। ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় ১৪ মিলিয়ন পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। এগুলো প্রায়শই নদী এবং সাগরে ফেলা হয় যা সমুদ্রের জীবনের জন্য বিপদ সৃষ্টি করে চলছে।
বাংলাদেশের বড় বড় শহর এমনকি ঢাকায়ও মোট বর্জ্য সংগ্রহের হার মাত্র ৩%। বর্জ্য যথাযথভাবে সংগ্রহ না করা হলে এগুলো অবৈধ ও ভিন্নভাবে নিষ্পত্তি হচ্ছে এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হচ্ছে।
দূষিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার, সবচেয়ে বিরূপ প্রভাবগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ম্যালেরিয়া এবং শ্বাসকষ্টের মতো রোগের প্রকোপ এবং প্রসার। সেইসাথে ভূগর্ভস্থ পানির দূষণের মাধ্যমে অন্যান্য অসুস্থতা। বায়োমেডিকাল বর্জ্যগুলো বাংলাদেশে অনেক বড় বিপদ ডেকে আনছে। একটি প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, বায়োমেডিকাল বর্জ্যের ২০% ‘অত্যন্ত সংক্রামক’ এবং এটি একটি ঝুঁকির কারণ। এগুলো প্রায়শই নালা বা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এই ধরনের দুর্বল স্যানিটেশন বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। একটি প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে যে ‘শিশু মৃত্যুর বেশিরভাগ এ সমস্যার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে’। জীবনযাত্রার মান নির্ধারণে শক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক রয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্বদানে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশকে চরম মূল্য দিতে হবে।
লেখক: কানাডার রেজায়না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী