বাবার প্রতি ভালোবাসা
২১ জুন ২০২০ ১৬:৩৬
বটবৃক্ষের ছায়ার মত জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অবিরাম পরম যত্নে যিনি লালন করেন, তিনি বাবা। একটা সন্তানের ভরসা, ছায়া এবং নির্ভরশীলতার প্রতীক তার বাবা। একজন বাবা তার সন্তানের ভালোর জন্য জীবনের প্রায় সবকিছুই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করতে সবসময় প্রস্তুত থাকেন। অন্যদিকে একজন সন্তানের আদর, শাসন আর বিশ্বস্ততার জায়গা হলো তার বাবা। বাবার মাধ্যমেই সন্তানের জীবনের শুরু। সন্তান বাবার ঋণ কখনো শোধ তো দূরের কথা পরিমাপও করতে পারে না। আর তাই বাবার প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা জানাতে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব বাবা দিবস।
সব জায়গাতে ভালোবাসার প্রথম স্থান দখল করে আছেন মমতাময়ী মা। আর মায়ের পরবর্তী স্থান বাবার। কিন্তু বাবাকে কাছে পাবার আকাঙ্খা, বাবার ভালোবাসা পাবার ইচ্ছা সব সময়ই প্রতিটা সন্তানের একটু বেশিই। কেননা মাকে আমরা সব সময়ই কাছে পাই কিন্তু বাবা ব্যস্ততার কারনে সারাক্ষণ বাইরেই থাকে। পরিবারকে হাসিখুশি রাখতে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে শক্ত তালু ও চোপসানো চোয়ালে বাসায় ফেরে সন্তানের জন্য এক চিলতে হাসিমুখ নিয়ে। প্রতিটি সন্তানের কাছে বাবার এই হাসিটা ও বাবার মুখে খোকা-খুকি ডাক অতি প্রিয়। সকল দুঃখ-কষ্ট, সকল প্রকার বিষাদ নিমিষেই দূর হয়ে যায়। আর তাই মনে পড়ে যায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও শ্রাবন্তী মজুমদারের গাওয়া বিখ্যাত সেই গান, ‘কাটেনা সময় যখন আর কিছুতে বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না, জানালার গ্রীলটাতে ঠেকাই মাথা, মনে হয় বাবার মতো কেউ বলে না- আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়’
আজ বিশ্ব বাবা দিবস। জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বের প্রায় ৮৭ দেশে বাবা দিবস পালিত হয়। জুন মাসের তৃতীয় রোববার হিসেবে এ বছর ২১ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাবা দিবস।
সন্তানের কাছে বাবার প্রতি ভালোবাসা তো প্রতিদিনই থাকে, তবুও কেন এই দিবস? উত্তরে বলা যায় লম্বা ইতিহাস। কিন্তু সহজভাবে বললে, মা দিবসের মতো এখন পৃথিবীর মানুষ বছরের একটা দিন বাবার জন্য রেখে দিতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শতকের প্রথম দশক থেকেই শুরু হয় বাবা দিবসের প্রচলন। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সনোরা স্মার্ট ডোড নামের এক তরুণীর মাথায় আসে বাবা দিবসের বিষয়টি। ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পিতৃ দিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণার বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেন।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৮৭ দেশে বাবা দিবস পালন করে। তার মধ্যে জুন মাসের তৃতীয় রবিবারে দিবসটি পালিত হয় ৫২ দেশে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, অ্যান্টিগুয়া, বাহামা, বুলগেরিয়া, পাকিস্তান, কানাডা, চিলি, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, জাপান, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ভেনিজুয়েলা ও জিম্বাবুয়ে অন্যতম।
এছাড়া ইরানে বাবা দিবস পালিত হয় ১৪ মার্চ। লিবিয়া, ইতালি, হন্ডুরাস, পর্তুগাল ও স্পেনে ১৯ মার্চ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮ মে, ডেনমার্কে ৫ জুন, নিকারাগুয়া, পোল্যান্ড ও উগান্ডায় ২৩ জুন এবং জুন মাসের প্রথম রবিবার লিথুনিয়ায় বাবা দিবস পালিত হয়
কিন্তু বাবাদের জন্য ভালোবাসা প্রকাশ করার এই নির্দিষ্ট দিন ছাড়া কি অন্যদিন গুলোতেও বাবারা ভালোবাসা পাচ্ছেন? বাবারা কি তাদের সন্তানদের থেকে আদর, যত্ন পাচ্ছেন, না তারা অবহেলিত? এমন প্রশ্ন থেকেই যায়।
সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হলো, বিশ্ব বাবা দিবস ঘোষণার একশ বছর পরও আজকেও অনেক বাবারা অবহেলিত, নির্যাতিত ও নিপীড়নের শিকার। যেই বাবার থাকার কথা পরম যত্নে, সন্তান ও নাতি-পুতিদের সাথে হাসিখুশির সাথে, সেই বাবার স্থান আজ রাস্তার ফুটপাতে কিংবা বৃদ্ধাশ্রমে। আমাদের সমাজে এমন অনেক বাবা আছেন যারা বৃদ্ধ বয়েসে এসে নির্যাতনের শিকার। মনে প্রশ্ন থেকেই যায় যে, আজ বাবারা যদি পরম যত্নে থাকতো তাহলে বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে কেনো এতো চাপ। কেন দিনের পর দিন দেশে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে? উত্তরে একটা কথায় আসে বাবার প্রতি সন্তানের অবহেলা।
একটা কথা সকল সন্তানকেই মনের ভিতর থেকে অনুভব করতে হবে আর সেটা হল আমরা এখন যে মুখে বা যে ভাষায় বাবাকে বকা দিই বা তাদের সাথে খারাপ আচারণ করি এই ভাষা ওই বাবারই সৃষ্টি আধো আধো করে কথা বলা শেখা ওই বাবার থেকেই। নিজে হাতে যখন খেতে পারতাম না, ওই বাবাই তার নিজ হাতে পরম যত্নে খাইয়ে দিতো। তাহলে আজ কেন আমরা তাদের সেই অবদান ভুলে যাই। আজ কেন তাদের রাস্তার ফুটপাতে কিংবা বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হয়?
পিতার প্রতি সকল সন্তানকে হতে হবে সহানুভূতিশীল ও কর্তব্যপরায়ণ। একজন পিতার প্রতি তার সন্তানের দায়িত্বের কোন শেষ নেই। আর তাই প্রতিটা ধর্মেই বাবাকে শ্রদ্ধা করার কথা, বাবাকে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে। কারন তিনিই জন্মদাতা, তিনি সকল কিছুর উর্দ্ধে।
পবিত্র কোরআন শরীফে বলা হয়েছে, তুমি এমন কোন আচার-আচরণ করো না যাতে পিতা-মাতা কষ্ট পেয়ে উহ্ শব্দটুকু না করে। অন্যদিকে পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহী পরমং তপঃ, পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা’-সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই মন্ত্র জপে বাবাকে স্বর্গজ্ঞান করে শ্রদ্ধা করেন।
আজ বিশ্ব বাবা দিবসে সকল সন্তানের একটাই চাওয়া সুখে থাক পৃথিবীর সকল বাবা। বিশ্বের প্রতিটি সন্তান হয়ে উঠুক তার বাবার প্রতি দায়িত্বশীল। বাবারা থাকুক পরম যত্নে।
লেখক: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়