আওয়ামী লীগ, প্রজন্ম যেন মনে রাখে সেই সময়!
২৩ জুন ২০২০ ২০:৫৬
আতাউর রহমান সাহেব ও আমি পাবনা, বগুড়া, রংপুর ও দিনাজপুরে প্রোগ্রাম করলাম। নাটোর ও নওগাঁয় কমিটি করতে পেরেছিলাম, কিন্তু রাজশাহীতে তখনও কিছু করতে পারি নাই। দিনাজপুরে সভা করলাম, সে দিন বৃষ্টি ছিল। তাই লোক বেশি হয় নাই। রাতে এক কর্মী সভা করে রহিম সাহেবের নেতৃত্বে একটা জেলা কমিটি করলাম। এইভাবে বিভিন্ন জেলায় কমিটি করতে পারলাম। কিন্তু রাজশাহীতে পারলাম না। পাবনায়ও কেউ এগিয়ে আসল না।… এইভাবে উত্তরবঙ্গ সেরে আবার দক্ষিণবঙ্গে রওনা করলাম। কুষ্টিয়া, যশোরে ভাল কমিটি হল। খুলনায় কোন বয়েসী লোক পাওয়া গেল না।… জুন, জুলাই, আগস্ট মাস পর্যন্ত— আমি বিশ্রাম না করে প্রায় সমস্ত জেলা ও মহকুমা ঘুরে আওয়ামী লীগ শাখা গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। ( পৃষ্ঠা ২২০, অসমাপ্ত আত্নজীবনী)।
আমার এই লেখা লিখছি মানবতা বিরোধী কর্মকান্ড সহ্য করতে পারিনি বলে। প্রতিদিন কত লাশ, কত আহত, রক্তাক্ত মানব সন্তান ও তাদের আত্নীয় স্বজন পরিবার, আপনজনের আহাজারি শুনতে হচ্ছে। অসহায় হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্জিনিয়ারিং, মেডিকেল ও কলেজে সাধারন পরীক্ষার্থীকে তাদের পরীক্ষা দিতে দেয়নি বিএনপি- জামায়াত জোট সরকারের নেতাকর্মীরা? এদের ভবিষ্যৎ কি? ফিরিয়ে দিতে পারবে কি কেউ তাদের হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো? এ কি তান্ডব চলছে সমগ্র দেশব্যাপী? ‘সহে না মানবতার অবমাননা’ গ্রন্থে (৬ ফেব্রুয়ারি-২০০৩) তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এভাবেই লিখেছেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অত্যাচার নির্যাতন দেখতে তিনি ছুটে গিয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ সভাপতি, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করার সুবাদে দেখেছি আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত আমার নিজ এলাকা ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে অত্যাচারিত নির্যাতিতদের বাড়ি বাড়ি হেঁটে হেঁটে গিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৎকালীন সময়ে সরকারদলের বাঁধায় চরম প্রতিকুল পরিস্থিতিতে গফরগাঁও ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কেঁদে দিয়েছিলেন। নির্যাতিত মানুষদের এই জনসভায় না আসতে গ্রামে গ্রামে, পথে পথে চরম বাঁধা দেওয়া হয়েছিল। তারপরও ছুটে আসেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে। এর আগে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে নির্যাতিত আম্বিয়াদের বুকে জড়িয়েছিলেন পরম মমতায়। ২০০১ সালের এই ঘটনাগুলো প্রত্যক্ষ করেননি যারা, তারা বুঝতে পারবেন না দুঃসময় কি? প্রজন্ম যেন না ভোলে সেই সময়ের ঘটনাগুলো। সেই সময় অনেকেই কোন পদ-পদবী, বা সুযোগ-সুবিধার জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থন করতেন না। এখনও করেন না।
তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতারা এসব চিত্র কি প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছেন? মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। তৃণমূল আওয়ামী লীগের সাধারন কর্মী, সমর্থকদের এই দিনের অনুভূতি আগেও ছিল যেমন, এখনও তেমনই আছে। সেসময় জাতির পিতার সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কলম সৈনিক থাকার অপরাধে ২০০১ সালের বিএনপি জামায়াত সরকারের আমলে একাধিক মিথ্যা মামলায় জেল হাজতে থেকে পায়ে জেল কোড অনুযায়ী সেই সময়ের আইনে ডান্ডাবেরী নিয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে থেকেছেন বা পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে নদীর পাড়ে খড়ের নিচে রাতের পর রাত কাটিয়েছেন কারা! নব্বই দশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নিজ হাতে লিখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেয়ালিকা করেছেন কারা! ২০০১ সালে সারাদেশে বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে নৌকা সমর্থিতদের ওপর নির্যাতন অত্যাচার নিয়ে লিখেছেন বা তথ্য সংগ্রহ এবং রাজধানীতে মানবতার বিরুদ্ধে জাতীয় অপরাধ কনভেনশনে কাজ করেছেন কারা! তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা গ্রন্থ ‘সহে না মানবতার অবমাননা’ বইটি পড়েছেন কারা! শিবির-জামায়াতের বিরুদ্ধে তৎকালীন সময়ে কলম চালিয়েছেন কারা! অনুভূতির আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠন করতে বাবার সহায় সম্পত্তি নষ্ট করে একেবারে পথে বসেছেন কারা! ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি জামায়াত সন্ত্রাসীদের নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার কারণে নিজ এলাকা ছেড়ে ছিলেন কারা! ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছিলেন কারা! ১/১১ এর সময় মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে পুলিশের রিমান্ড ও জেল হাজতে কাটিয়েছেন কারা! অনুভূতির সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরও কোন সরকারি, বেসকারি অনুদানসহ যেকোন সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তদের তালিকায় নাম না থাকা কারা! মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতার লেখা অসমাপ্ত আত্নজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা বই নিজ টাকায় কিনে এলাকার শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেছেন কারা! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লেখনি লিখেছেন কারা! দলের আর্দশিক লড়াই সংগ্রামে বিভিন্ন প্রকাশনা সম্পাদনা করেছেন কারা! ২০০১ সালের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে গেলে বিএনপি জামায়াত সন্ত্রাসীরা প্রবেশ পত্র ছিনিয়ে নিয়ে অংশ নিতে দেনননি, শিক্ষাজীবনে এমন নির্যাতিত কারা! বর্তমান দল ক্ষমতায় থাকার পরও বিএনপি জামায়াতের একাধিক মিথ্যা মামলা ও ১/১১ এর সময় মিথ্যা মামলা কোন রাজনৈতিক তদবির ছাড়া আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন কারা! এখনো দলের অসহায় প্রবীণ ও নবীন নেতাকর্মীদের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন কারা! স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে আমার চেতনায় আমার আন্দোলন করেছেন কারা !
হ্যাঁ, ওপরে লেখা সবগুলো আমার জীবনের উত্তর। তাইতো সুবিধা ভোগীদের তালিকায় নাম তুলতে চাই না। ২০০১ সালে জন্ম নেওয়া শিশু এখন যার বয়স প্রায় বিশের ঘরে। সেই সময় নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে গ্রামে গ্রামে, শহরে, নগরে সাধারন মানুষের ওপর বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাসীদের অত্যাচার নির্যাতন যেন মনে রাখে এই প্রজন্ম। তাদের জানা দরকার ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দেশে তৎকালীন বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময় কত অত্যাচার নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছিল তাদের পরিবার, পরিজন, আত্নীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের। বর্তমান সময়ে অনুভূতির সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিবাচক বিষয়গুলো যখন দেখতে পাই, আনন্দিত হই, গর্ববোধ হয়।