করোনা পরিস্থিতিতে জনগণের পাশে পরশ-নিখিলের নেতৃত্বে মানবিক যুবলীগ
২৭ জুন ২০২০ ০১:১৫
ঢাকার বংশালের বাসিন্দা শফিক। এক মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা তিনি। স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে ছোট সংসার। স্ত্রীর ৭/৮ দিন যাবত জ্বর। খাবারে অনীহা, গলা ব্যথা। অফিসের সহকর্মী, আত্মীয়স্বজন সবাই শুধু ফোনেই পরামর্শ দিলেন। স্ত্রীকে করোনাভাইরাস টেস্ট করাতে নিতে হবে হাসপাতালে। কেউ সহযোগিতা করল না। হতাশ শফিক এক ধরণের পরাজয় মেনে নিয়ে বাসায় চিকিৎসা শুরু করলেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই অবস্থার পরিবর্তন হলো না। শেষে স্থানীয় এক যুবলীগ কর্মীর তথ্যে যুবলীগের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের জন্য ফোনে যোগাযোগ করলেন। যুবলীগের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে স্ত্রীকে ঢাকার কুর্মিটোলায় করোনা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হলো। ভর্তির ১৫ দিনের মধ্যে স্ত্রীর করোনাভাইরাস টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসল।
এই ১৫ দিন নিয়ম করে হাসপাতালে আসা যাওয়ায় শফিক যুবলীগের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ব্যবহার করলেন। এ অভিজ্ঞতায় শফিক শুধু অভিভূতই হননি, পরে তার পরিচিত কারও করোনার লক্ষণ দেখা গেলেই তিনি তাদের যুবলীগের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের সহায়তা নিতে পরামর্শ দেন। এরকম শত শত শফিক এর পরিবারের জন্য রাজধানীতে যুবলীগ ২৪ ঘণ্টার জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করেছে সম্পূর্ণ ফ্রিতে।
০১৭১৫৩৮৫৪৯৮, ০১৭১১১০১৫২৬,০১৭১১১৫৮৯৭১,০১৭১২০৪১০০৮ এবং ০১৭৫৩৪৮২৮০৬ এই নম্বরগুলোতে কল করলেই মিলছে যুবলীগের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। এতে উপকৃত হচ্ছে করোনা রোগীদের পরিবার। শুধু ঢাকা নয়, পাবনাতেও করোনা রোগীদের জন্য ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করেছে জেলা যুবলীগ। শুধু ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসই নয়, খুলনায় করোনা আক্রান্ত রোগী ও তাদের পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে খুলনা মহানগর যুবলীগ।
মুশফিক এক জন নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা। আবাস রাজধানীর মিরপুরে। পেশায় বাস ড্রাইভার তিনি। করোনার প্রভাবে কর্মহীন মুশফিক ৬ সদস্যের পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। রাস্তায় দাঁড়াতে অপরাগ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মুশফিক। স্থানীয় এক চা দোকানির সঙ্গে তার এই দুরবস্থার কথা আলোচনা করেছিলেন। স্থানীয় এক যুবলীগ কর্মীর মাধ্যমে এই খবর যুবলীগের কানে পৌঁছাতেই মুশফিকের বাসায় সরবরাহ করা হলো ১৫ দিনে খাদ্যসামগ্রী।
করোনা পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েও যারা সাহায্যের জন্য হাত পাততে পারছেন না, পরিচয় প্রকাশের ভয়ে যারা সাহায্যের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন না- এমন মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের সহায়তায় ধারাবাহিকভাবে উপহার হিসেবে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে যুবলীগ।
কুমিল্লার মুরাদনগরের ত্রিশ গ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তি মারা যান। মৃত ব্যক্তির দাফন কাজে এলাকার কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের নেতৃত্বে গঠিত যুবলীগের ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি স্বেচ্ছাসেবক টিম ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী ওই ব্যক্তির মরদেহ দাফন করে। করোনার উপসর্গে মৃতের দাফন করেছে ফেনীর পরশুরাম উপজেলা যুবলীগ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এভাবেই নীরবে ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন কাজ করছে যুবলীগ।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং জনসমাগম পরিহার করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মহীন, ছিন্নমূল, অসহায় মানুষদের লিস্ট তৈরি করে উপহার হিসেবে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছে যুবলীগ। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকে কর্মহীন, ছিন্নমূল, অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সংগঠনের প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্দেশনায় সারা বাংলাদেশের মহানগর, জেলা, থানা ও ওয়ার্ড ইউনিট সমূহ অসহায় মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে।
প্রথমে দেশব্যাপী নাগরিক সচেতনতায় কাজ শুরু করে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিটি ইউনিট। প্রথমদিকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও মাস্ক বিতরণ করে যুবলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে কর্মহীন, ছিন্নমূল, অসহায় মানুষের খাদ্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সংগঠনের প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, ফ্রি সবজি দোকান, সেহরি, ইফতার ও রান্না করা খাবার সরবরাহ, করোনা মৃতদেহ দাফন এবং ফ্রি টেলি মেডিসিন সেবা, ভ্রাম্যমাণ বাজার, হিজড়া সম্প্রদায়, অন্ধ, পঙ্গু, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে উপহার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, করোনা আক্রান্ত রোগীর পরিবারে খাদ্য সহায়তা, ডক্টরস সেফটি চেম্বার, কৃষকের ধান কেটে দেওয়া, হাসপাতালে পিপিই বিতরণ, অ্যাম্বুল্যান্স ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের খাদ্য ও সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে তরান্বিত করতে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেনের নেতৃত্বে ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অর্থায়ন ও সহযোগিতায় মোবাইল ও ওয়েব অ্যাপ কার্যক্রম চালু হচ্ছে জুলাই থেকে। যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষক জনাব ইব্রাহিম মিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারস ল্যাবে করোনা টেস্টিংয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এ সবই বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাইনুল হোসেন খান নিখিল এর সৃষ্টিশীল ও গতিশীল নেতৃত্বের ধারাবাহিক কর্মসূচির একটি খণ্ডচিত্র। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে যুবসমাজের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে জনগণের পাশে থেকে পরশ-নিখিলের নেতৃত্বে মানবিক যুবলীগ এগিয়ে যাক বহমান নদীর মত।
লেখক: সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা