কতটা সাহস দেখাতে পারবে নেপাল!
২৭ জুন ২০২০ ১৫:১০
স্বাধীনতা উত্তর ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা ছিল জোট নিরপেক্ষতা, উপনিবেশ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অবস্থান। নব্য উপনিবেশ রুখতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ‘নতুন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিন্যাস’ (ইংরেজিতে সংক্ষেপে NEW) এর অন্যতম উদ্যোক্তা ভারত। বহির্বিশ্বের এমন নীতি নিয়ে আগালেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী পাকিস্তানসহ অন্যান্য প্রতিবেশীর সাথে ভারতের সম্পর্ক প্রায়শই টানাপোড়নের মধ্যে দিয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী চীন, পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধাবস্থার পাশাপাশি নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সাথে সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না ভারতের।
১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্ট পার্টির বিপ্লবের পর ভারত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। চীন ও ভারতের মধ্যে বাফার জোন হিসাবে থাকা তিব্বতে চীনা দখল সামরিক সহযোগিতা দিয়েও আটকাতে পারেনি ভারত। চীনের উত্থানের ফলে অন্যান্য প্রতিবেশী ‘বাফার স্টেট’ ভুটানের সাথে ১৯৪৯ সালে এবং নেপাল ও সিকিমের সাথে ১৯৫০ সালে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত। নেপালের সাথে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক ‘ইন্দো-নেপাল শান্তি ও মৈত্রী চুক্তি ১৯৫০’কে ভারত-নেপাল সম্পর্কের ভিত্তি ধরা হয়। এই চুক্তির মূল কথা ছিল উভয় দেশ তৃতীয় দেশ থেকে আসা নিরাপত্তা হুমকি একসঙ্গে মোকাবেলা করবে। এই চুক্তি নেপালকে দীর্ঘদিন চীনের কাছ থেকে দূরে রাখে। ১৯৫৫ সালে নেপালে নতুন রাজা এসে চীনের সাথে দুয়ার খুললেও সম্পর্ক অনেকদিন ধরেই ছিল গড়পড়তা।
কাঠমুন্ডুর রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে প্রভাবশালী দিল্লীর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০ বছর গেছে নানা নাটকীয়তায়। সম্প্রতি মানচিত্র বিতর্কে কাঠমুন্ডু ও দিল্লীর চিরচেনা সম্পর্ক যেন হঠাৎ বদলে গেছে। ভারতীয় পক্ষ অবশ্য বলছে চীনের উস্কানিতে নেপালের এমন আচরণ। কিন্তু ৭০ বছর ধরে কাঠমুন্ডুর রাজনীতির কলকাঠি নাড়া ভারতের বিরুদ্ধে কতক্ষণ সাহস দেখাতে পারবে নেপাল! নেপালে কি ভারতের দিন শেষ হতে চলেছে! নাকি সাময়িক উত্তেজনা শেষে দুই দেশ আবার বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে উঠবে। সেই প্রশ্নই এখন বড় হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মাঝে।
কালাপানি নিয়ে ভারত-নেপাল মুখোমুখি
ভারত ও নেপালের মধ্যে মধ্যে প্রায় ১৮৫০ কিলোমিটার সীমান্ত। ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া থাকলেও নেপাল সীমান্তে মানুষের অবাধ বিচরণ। সীমান্ত প্রহরায় বিএসএফের বদলে ভারত নিয়োগ করেছে এসএসবি পুলিশ। তবে সীমান্তে কালাপানি নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। ১৯৮১ সালে প্রথম এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করা হয়। কালাপানি ও লিপুলেখ নিয়ে বিতর্ক নিরসনসহ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করতে ২০১৬ সালে উচ্চ পদস্থ ‘ইমিনেন্ট পারসন গ্রুপ’ গঠন করা হয়।
২০১৮ সালে সেই গ্রুপের জমা দেওয়া প্রতিবেদনে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ১৯৫০ সালের চুক্তিতে হালনাগাদ করতে সুপারিশ করা হয়। যদিওবা কোন দেশ প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। ২০১৯ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখকে ভারতীয় ইউনিয়নের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে মানচিত্র প্রকাশের সময় ভারত বিরোধপূর্ণ কালাপানিকে কোন ধরনের আলোচনা ছাড়া নিজেদের অংশ হিসাবে দেখায়। ভারতের পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ নেপালের পক্ষ থেকে বারবার আলোচনা আহবান জানালে ভারতীয় পক্ষে সাড়া ছিল না। এই বিতর্কের মধ্যে গত ৮ মে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং কালাপানির পার্শ্ববর্তী লিম্পুলেখে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা উদ্বোধন করেন।
নেপালের পক্ষ থেকে এই রাস্তার অন্তত ১৭ কিলোমিটার তাদের ভূমির উপর দিয়ে গেছে বলে দাবি করা হয়। সমসাময়িক সময়ে ৫ মে থেকে লাদাখ সীমান্তে চীনা সৈন্যের আনাগোনা ছিল। এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাপ্রধান এমএম নারভান নেপালের আপত্তিকে ‘অন্যদেশের প্রক্সি প্রতিবাদ’ বলে মন্তব্য করেন। তার মন্তব্যে নেপালে ভারত বিরোধী বিক্ষোভ দানা বাধে। নেপালি বলিউড স্টার মনীষা কৈরালা নেপালের পক্ষে মন্তব্য করলে ভারতীয় ডানপন্থী মিড়িয়ায় ট্রলের স্বীকার হন। বিক্ষোভ চলাকালে কালাপানি লিপুুলেখ ও লিম্পিওয়াধুরার ৩৩৫ কিলোমিটার এলাকাকে নিজেদের দাবি করে ‘রাজনৈতিক মানচিত্র’ প্রকাশ করে যা পরবর্তীতে সংসদের নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ থেকে পাশ করিয়ে নেওয়া হয়। যেখানে ইতিমধ্যে নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী স্বাক্ষর করেছেন।
ভারত নেপালের এই সীমান্ত বিরোধ ১৮১৬ সালে সম্পাদিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে নেপালের স্বাক্ষরিত চুক্তিতে সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা। চুক্তিতে কালি নদীকে দুই দেশের সীমান্ত ধরা হয়। সে মতে কালাপানি নেপালের হওয়ার কথা। কিন্তু ভারতীয় পক্ষের দাবি কালি নয় বরং কালির শাখা নদী লিম্বিয়াধৌরাকে ভুলে মূল নদী হিসাবে ধরা হয়েছিল।
এছাড়া চীনের তিব্বত দখলের প্রাক্কালে নেপাল সীমান্তে ১৭-১৮ টি ভারতীয় সামরিক চৌকি স্থাপন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সব সামরিক চৌকি সরিয়ে নেওয়া হলেও কালাপানি চৌকি সরানো হয়নি। ভারতের দাবি, নেপাল কালি নদী সংক্রান্ত ভুল জানত তাই এটা সরাতে বলা হয়নি নেপালের পক্ষ থেকে। এভাবে যুক্তি পাল্টা যুক্তির মধ্য দিয়ে দুই দেশেই জাতীয়তাবাদী বিক্ষোভ দানা বাঁধছে।
নেপালে ভারতীয় প্রভাব ও সম্পর্কের অবনতি: নেপালের সাথে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক সেটা রাজনৈতিক দল থেকে রাজপরিবার, সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে আত্মীয়তার পর্যায়ে। নেপালের রাজপরিবারে দিল্লীর প্রভাব ছিল লক্ষণীয়। কিন্তু ১৯৫৫ সালে রাজা ত্রিভুবনের মৃত্যুর পর মাহেন্দ্র রাজা হলে এবং ১৯৬০ সালে ‘রাজকীয় অভ্যুত্থান’ করে সর্বসময় ক্ষমতা নিয়ে নিলে নেপালে ভারতীয় প্রভাব ক্ষুণ্ণ হয়। রাজা মাহেন্দ্র চীন ও পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করার উদ্যোগ নেন। তার আমলে নেপালে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর স্থান হয় ভারতে। তবে ১৯৭২ সালে রাজা মাহেন্দ্রর পুত্র বীরেন্দ্র বীর বিক্রম সাহা রাজা হলে ভারতের সাথে সম্পর্ক আবার মজবুত হয়। রাজা মাহেন্দ্র চীন-ভারতের সাথে ভারসাম্য করার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। ‘ইন্দো-নেপাল বাণিজ্য চুক্তি’ ও ৬১ কিলোমিটার ‘চিকেন নেক’ ট্রানজিট চুক্তি করে ভারত ও বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন।
২০০১ সালে রাজা বীরেন্দ্রের নিজ সন্তানের হাতে মর্মান্তিক মৃত্যুর পর রাজা হন রাজা জ্ঞানেন্দ্র। ভারতপন্থি বলে পরিচিত রাজা জ্ঞানেন্দ্র ক্ষমতায় আসলে সরকারের সাথে মাওবাদীদের সাথে গৃহযুদ্ধ চরমে উঠে। নেপালের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটে ২০০৮ সালে যখন রাজতন্ত্র বিলুপ্ত ঘোষণা করে প্রজাতান্ত্রিক নেপাল ঘোষণা করা হয়। ভারতের প্রত্যাশা ছিল গণতান্ত্রিক নেপাল তার জন্য সুখকর হবে। ২০১৩ সালে নেপালি কংগ্রেসের বিজয় ভারতকে সেই বার্তায় দিচ্ছিল। নরেন্দ্র মোদি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন নেপালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ভারতপন্থি নেপালি কংগ্রেসের সুশীল কৈরালা। মোদিকে শুভেচ্ছা জানাতে তার শপথ অনুষ্ঠানে উড়ে যান মি. কৈরালা। প্রায় ১৭ বছর পর ২০১৪ সালে নেপাল সফরে যান মোদি। নেপালের সংসদে বক্তৃতা দিয়ে প্রতিবেশীর মনও জয় করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ২০১৫ এপ্রিলের ভূমিকম্প সব এলোমেলো করে দেয়। ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে ব্যর্থতায় সমালোচনার মুখে পড়ে কংগ্রেস সরকার। সে সময় ত্রাণ কূটনীতি নিয়ে নেপালের পাশে দাঁড়ায় ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন।
একই বছরে নেপালের নতুন সংবিধান রচনা নিয়ে ভারতের সাথে সম্পর্কে টানাপোড়ন শুরু হয় নেপালের। সংবিধানে হিন্দুকে রাষ্ট্রধর্ম না করা এবং রাজ্যের সীমানা পুননির্ধারণ নিয়ে আপত্তি তোলে ভারত। ভারতীয় জনগোষ্ঠীর সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ মদহেশিদের অভিযোগ করেন, নতুন সংবিধানে এমনভাবে প্রদেশের সীমানা ভাগ করা হয়েছে যাতে সাতটির মধ্যে ছয়টি প্রদেশে মদহেশিদের ক্ষমতায় আসার কোন সম্ভাবনা নেই। সংবিধানের বিরুদ্ধে ‘মদহেশিদের আন্দোলনের মুখে’ ভারত নেপালে জ্বালানী তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এরইমধ্যে ২০ সেপ্টেম্বর নতুন সংবিধান গৃহীত এবং ১০ অক্টোবর সংসদে নেপালি কংগ্রেসকে হারিয়ে প্রধানমন্ত্রী হোন কমিউনিস্ট পার্টির কে পি শর্মা অলি। তখন জ্বালানী তেলের জন্য দেশজুড়ে হাহাকার। নতুন প্রধানমন্ত্রী শত চেষ্টা করেও ভারতীয় অবরোধ প্রত্যাহার করাতে পারেননি। ভারতের অবরোধে বেকায়দায় পড়া কমিউনিস্ট প্রধানমন্ত্রীর পাশে জ্বালানী তেল নিয়ে দাঁড়ায় চীন। ভারতের অবরোধের ভুক্তভোগী নেপাল সরকার পরবর্তী বছর চীনের সাথে ট্রানজিট এন্ড ট্রান্সপোর্ট চুক্তি করে। যার মাধ্যমে চীনের চার সমুদ্র বন্দর ও তিন স্থল বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশের সাথে বাণিজ্য করার অনুমতি পায় নেপাল।
ভারতের সাথে ১৯৯৬ সালে মহাকালী চুক্তি করা নেপালি কংগ্রেসের শের বাহাদুর দিউবার তত্ত্বাবধানে ও নতুন সংবিধানে অধীনে প্রথম নির্বাচনে স্বস্তিদায়ক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০১৭ সালে আবার ক্ষমতায় আসে মাওবাদী ও কমিউনিস্টদের বামপন্থি জোটের কে পি শর্মা অলি। কমিউনিস্টদের এই বিজয় নেপালে ভারত স্বার্থকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে এই নির্বাচনে নেপালি কংগ্রেসের হারার পেছনে ভারত বিরোধী প্রচারণা ভূমিকা রেখেছে। কারণ তখনো নেপালিদের স্মৃতি থেকে অবরোধের বিড়ম্বনা মুছে যায়নি। দেশের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী বামজোটের কে পি অলি শর্মা ফের প্রধানমন্ত্রী হয়ে চীনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। ভারতীয় অবরোধের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী তো ছিলেন মি. শর্মা।
নেপাল ২০১৮ সালে বিমসটেকের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতের পুনেতে অনুষ্ঠিত জঙ্গি দমন মহড়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে সমসাময়িক সময়ে চীনের সিচুয়ানের জঙ্গি দমন মহড়ায় যোগ দিলে কূটনৈতিক ধাক্কা খায় ভারত। সে কূটনৈতিক ধাক্কা খাওয়ার বছরে কালাপানি নিয়ে দুই দেশের ‘ইমিনেন্ট পারসন গ্রুপ’ প্রতিবেদন জমা দেয়। নেপাল ক্রমশ ভারত থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে তা স্পষ্ট বোঝার পরও ২০১৯ সালের মানচিত্রে কালাপানিকে যোগ করে শিথিল উত্তেজনাকে রাজপথে নিয়ে যায় দিল্লী। নেপালের সাতে ভারতের ইতিহাসের বিস্ময়কর এই টানাপোড়ন আরও জটিল হয়ে উঠে রাজনাথের রাস্তা উদ্বোধন ও পরবর্তীতে নেপালও পাল্টা ‘রাজনৈতিক মানচিত্র’ প্রকাশের মাধ্যমে।
নেপালে কেমন প্রভাবশালী নয়াদিল্লী
জওহারলাল নেহেরুর সময় থেকে নেপালের সাথে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক। বর্তমানে চীনপন্থি বলে পরিচিত কে পি শর্মার দল কমিনিউস্ট পার্টি গঠন হয় কলকাতায়। ২০১৩-২০১৪ এর হিসাব মতে নেপাল তার মোট রফতানির ৬৬ শতাংশ করে ভারতে। নেপালের মোট বিনিয়োগের ৪০ শতাংশ ভারতীয় কোম্পানির। প্রতিবছর তিন হাজার নেপালি ছাত্র ভারতে পড়তে যায়। ভারতে নেপালি নাগরিকদের ওয়ার্ক পারমিট নিতে হয়না। তাছাড়া দুই দেশের মধ্যে মুক্ত ভিসা চুক্তি ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। ভারতে প্রায় ১৫ লক্ষ নেপালি কাজ করেন। আনঅফিসিয়ালি এই সংখ্যা ৭০ লক্ষ বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে নেপালে বাস করছে প্রায় ৬ লক্ষ ভারতীয়। মদহেশিরা ভারতীয়দের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ।
এছাড়া সাংস্কৃতিকভাবেও নেপালে ভারতের প্রভাব রয়েছে। অনেক নেপালি বলিউড ও ভারতের টিভি শো’তে এসে নিজের ক্যারিয়ার দাঁড় করিয়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করে নেপালের বিখ্যাত গোর্খা রেজিমেন্টের ৪০ হাজার সদস্য। ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া ৮০ হাজার নেপালি এখনো অবসর ভাতা পান ভারত থেকে। তবে ভারতের উদ্বেগের বিষয় নেপালি জাতীয়তাবাদের প্রবল উত্থান। বলা হচ্ছে কে পি শর্মা তার দল, জোট ও দেশের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য ভারত বিরোধী মন্তব্য করছেন। কিন্তু ১০ জুন যখন নেপালের পার্লামেন্টে নতুন মানচিত্র বিল উঠেছে তখন কেউই এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি। ৬৩ জন কংগ্রেস সংসদ সদস্য পক্ষে ভোট দিয়েছেন। অথচ কংগ্রেস ভারতপন্থি বলে পরিচিত। এছাড়া মদহেশিদের দল সদ্ভাবনা পার্টির কেউও এর বিপক্ষে ভোট দেয়নি। অথচ মদহেশিরা তরাই অঞ্চল নিয়ে ভারতীয় সমর্থনে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করছে বলে আলোচনা আছে।
কতটা সাহস দেখাতে পারবে নেপাল
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নেপাল-ভারত সীমান্তের ১৫টি সীমান্ত পোস্টে সেনা মোতায়েন করেছে নেপাল। চলমান উত্তেজনার মধ্যে এক ভারতীয় শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছে নেপালি পুলিশ। নেপালের সেনা প্রধান বিতর্কিত কালাপানি পরিদর্শনে গেছেন। ভারতের বিহার রাজ্যের সীমান্তে বাধ নির্মাণে বাধা দিয়েছে নেপাল। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সহজ শব্দে বিবৃতি দিলেও নেপালের নেতারা কঠিন শব্দে হুঙ্কার দিচ্ছেন। উভয় দেশ জানে কোন সংঘাত সৃষ্টি হলে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে চলমান বৃহৎ আকারের যোগাযোগ ও বাণিজ্য হুমকিতে পড়বে। কলকাতা বন্দর থেকে নেপালের দূরত্ব ৯৩৩ কি.মি। অন্যদিকে চীনের নিকটতম সমুদ্রবন্দরের সাথে দূরত্ব ৩৩০০ কিলোমিটার। ফলে অতিমাত্রায় চীন নির্ভরও নেপালের পক্ষে সম্ভব না।
এছাড়া কোন ধরনের সংঘর্ষ শুরু হলে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ৪০ হাজার গোর্খা সৈন্য নিয়ে বিপাকে পড়বে ভারত। ২০১৫ সাল থেকে নেপালের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কে বেশ কয়েকটা ভুল করা ভারত তাই কৌশলে পা ফেলছে। নয়াদিল্লী বুঝতে পারছে দুই দশক আগের নেপাল আর আজকের নেপাল এক নয়। শক্ত জবাব দিতে গেলে বুমেরাং হয়ে নেপাল আরও অধিক মাত্রায় চীনের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়া গ্লোবালাইজেশনের এই সময়ে অবরোধ কোন সমাধান না তা কাতার অবরোধ বিশ্বকে দেখিয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে ‘অপেক্ষা করো পর্যবেক্ষণে থাকো’ নীতি ছাড়া অন্য কোন নীতি খোলা নেই নয়াদিল্লীর সামনে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়