Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গেদুচাচা, নিষ্ঠাবান এক সংবাদকর্মীর প্রতিচ্ছবি


৬ জুলাই ২০২০ ১৯:২৫

ছোটবেলা থেকেই যেকোনো বিষয়ে পড়তে আমি ভালোবাসি। নানা বাড়িতে বড় হবার সুবাদে আমি ছিলাম আমার নানুর নিউজ রিডার। রাজনৈতিক পরিবারে নিয়মিত বিভিন্ন সাপ্তাহিক সংখ্যা রাখার সুবাদে পাঠক হিসেবে ‘গেদুচাচা’ নামটির সাথে আমার পরিচয় ঘটে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে।

ছদ্মনাম নাম গেদুচাচা। পারিবারিক নাম খন্দকার মোজাম্মেল হক। সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মোজাম্মেল হকের জন্ম ১৯৫০ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারী ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলাধীন গতিয়া পূর্ব সোনাপুর গ্রামের খন্দকার বাড়িতে। তার পিতা এটিএম খন্দকার ওবায়দুল হক ছিলেন শিক্ষক। মা সৈয়দা আজিজুন নেছা ছিলেন জি এম হাট এলাকার ঐতিহ্যবাহী সৈয়দ বাড়ির মেয়ে।

বিজ্ঞাপন

খন্দকার মোজাম্মেল হক তার নিজের সম্পর্কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ১৯৬৪ সালের ১১ই মার্চ ছাত্র গনহত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে ধর্মঘট ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার কর্মসূচি পালনের সময় তিনি ছাগলনাইয়া থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে থানার সামনে পাকিস্তানের উত্তোলিত জাতীয় পতাকা ছিড়ে ফেলার অভিযোগে অন্যান্য সহকর্মীসহ হুলিয়া নিয়ে পালিয়ে বেড়ান।

১৯৬৬ সালের ৭ই জুন তিনি আটক হলেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ফেনী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক, ১৯৬৭ সালে ফেনী মহকুমা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন।

ঐতিহাসিক ১১ দফা আন্দোলনের সময় খন্দকার মোজাম্মেল হক এবং শহীদ সৈয়দ মাওলানা ওয়ায়েজ উদ্দিন নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক নির্বাচিত হন। সেই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনসভায় খন্দকার মোজাম্মেল হক স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন। সেই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষন শোনার পরদিন ৮ই মার্চ তিনি ফেনীতে আসেন। এসেই ৮ই মার্চ নিজ হাতে তিনি জাতীয় পতাকা তৈরি করেন। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ফেনী মহকুমার আহ্বায়ক হিসেবে ৯ মার্চ ১৯৭১ ফেনীর ট্রাংক রোডে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের বিশাল জনসভায় লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন খন্দকার মোজাম্মেল হক।

ফেনীতে একটি পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্প ছিল, সিও অফিসে তারা ছিল। ২৭শে মার্চ সেই ক্যাম্প ঘেরাও করেন অস্ত্রহাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মোজাম্মেল হকসহ আরও অনেক মুক্তিকামী জনতা। ক্যাম্পের দেওয়াল ফুটো করে মুক্তিকামী জনতার ওপর গুলি ছুড়ে পাকিস্তান হানাদারবাহিনী। এক পর্যায়ে এ দেশীয় পুলিশ ও সাবেক আর্মিদের সহায়তায় সবগুলো পাকহানাদারকে খতম করা হয়। তখন প্রাথমিকভাবে ফেনী শত্রুমুক্ত হয়। পরবর্তীতে ফেনীতে যাতে পাক হানাদার বাহিনী ঢুকতে না পারে এজন্য মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রাখেন খন্দকার মোজাম্মেল হকসহ মুক্তিকামী জনতা। পরবর্তীতে সেলিং করতে করতে পাকিস্তান সরকার শত্রু সৈন্য নামিয়েছে ফেনী নদী দিয়ে স্পীড বোর্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন গানবোট নিয়ে এসে ফেনীতে অবস্থান নেয়। তারপর (২৪ শে এপ্রিলের পরে) ক্যাপটেন জাফর ঈমাম ফেনীতে আসেন। তিনি মুন্সির হাট এলাকায় ডিফেন্স গড়ে তোলেন। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর খালেদ মোশারফ। জাফর ইমাম ছিলেন সাব সেক্টর কমান্ডার।

১৯৭১ সালে ৬ই ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত হলে বিজয় মিছিলের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী ছিলেন আমাদের গেদুচাচা। মিছিল শেষে অন্যতম একজন আলোচক হিসেবে তিনি বক্তব্য রাখেন। ফেনী মুক্ত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া থানার প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক পূনর্বিন্যাস কমিটির আহবায়ক এর দায়িত্ব পালন করেন।

লেখালেখি ছিল তার সারাজীবনের অন্যতম অধ্যায়। ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি সাপ্তাহিক সুগন্ধা, সূর্যোদয়, আজকের সূর্যোদয়, দৈনিক আজকের ঢাকা, দৈনিক পূর্ব আলোর প্রধান সম্পাদক ছিলেন। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাহী সদস্য, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে ডেইলি নিউজ ইউনিয়নের চিফ ছিলেন। বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সদস্য, মানবাধিকার সাংবাদিক গ্রুপের মহাসচিব ছিলেন। শিক্ষা জীবনে খন্দকার মোজাম্মেল হক স্নাতক ডিগ্রি ছাড়াও আইন ও সাংবাদিকতা বিষয়ের ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯৯১ সালে তিনি আজকের সূর্যোদয় গ্রুপ পাবলিকেশন্স প্রতিষ্ঠা করেন। এ গ্রুপ থেকে তিনি আজকের ঢাকা, আপনজন, সোনার তরী সোসাইটি প্রকাশ করতে শুরু করেন যা আজও বের হচ্ছে। এছাড়াও তিনি উল্টোস্রোত নামক এনজিও বিষষয়ক মাসিকেরও সম্পাদনা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি রেডক্রিসেন্ট, বাংলাদেশ লায়ন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ব্লাড ব্যাংক ঢাকা, ফেনী ডায়বেটিক সমিতি, ম্যাপ বাংলাদেশ এর আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি গতিয়া আজিজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

ইতিমধ্যে তাঁর লেখা কাব্যগ্রন্থ নগ্ননারী বিসার্প, বোমারু বিমান এবং গেদুচাচার খোলা চিঠি নামে একটি কলাম সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ‘তোমার সংগে যাবো’, ১৯৯৬ সালে ‘আরেক একাত্তর’ নামে তার লেখা দুটো উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। তার আরেকটি প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘রক্তাক্ত স্মৃতি ১৯৭১’।

খন্দকার মোজাম্মেল হক সাউথ এশিয়ান সোসাইটি, ইউনেস্কো, রিসার্চ রাইট ফোরাম, হিউম্যান রাইট ফোরাম ও অল ইন্ডিয়া মিডিয়া নিউজ পেপার ফেডারেশন থেকে একাধিক পুরস্কার লাভ করেন। সমাজ সেবক হিসেবে তিনি বহু সংগঠের সাথে জড়িত। তিনি লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ৩১৫বি ২ এর রিজিয়ন চেয়ারম্যান।

রাজনৈতিক ও সামাজিক কোন সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত পোষণ করে এত সুন্দর কাব্যিক, নমনীয় ও সরস ভাষায় শুধুমাত্র চিঠি লিখে কতটা আধুনিক চিন্তাধারায় সমালোচনা করা যায়, তা আমি মুগ্ধ হয়ে ভেবেছি অসংখ্যবার। কলামটি পড়াকালীন সময়ে অপেক্ষায় থাকতাম গেদু চাচার খোলা চিঠি পড়ার জন্য। আকাঙ্ক্ষিত চিঠিতে মার্জিত সমালোচনা, স্পষ্ট বক্তব্য যেমন প্রকাশ পেত ঠিক তেমনি একইভাবে স্থান পেত গৃহীত ভালো উদ্যোগের অকৃপণ প্রশংসা।

প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলার জনজীবনের প্রতিনিয়ত বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করা- চা দোকানদারের বক্তব্য থেকে শুরু করে, পাশের বাড়ির ধানের ক্ষেতে কাজ করা নুরু মিয়ার চিন্তাভাবনার প্রতিচ্ছবি কোন কিছুই বাদ পড়তো না সেই গেদু চাচার খোলা চিঠিতে। কতটা বিনয় নিয়ে সরস ভাষায় সমাজের অসংগতি, অনিয়ম, চোখে পড়া নানা জটিলতা নিয়ে স্পষ্ট-সত্য সমালোচনা করা যায় তা নিবিড়ভাবে উপলব্ধি ছোটবেলায় করতে না পারলেও বড় বেলায় ঠিকই তা আমাকে ভাবিয়েছে অসংখ্যবার। এই ভাবনাগুলো খুব বেশি জীবন্ত হয়ে আমার কাছে বারংবার ছুটে এসেছে, যখন লেখককে খুব কাছ থেকে দেখার এবং জানার সৌভাগ্য হয়েছিল।

একজন রাজকীয় মানুষ। যার চলনে-বলনে সব সময় খুব সুন্দর একটি আভিজাত্য ফুটে থাকতো। কিন্তু তিনি যাপন করতেন সাধারণ জীবন। আভিজাত্যের মাঝে সাধারণে মিশ্রিত মানুষটিকে আমি কখনো গোমড়া মুখে দেখিনি। তার চোখ, মুখায়ব সবকিছুতেই সবসময়ই হাসির আভা ফুটে থাকতো। কথা বলতেন, ভারী গলায় স্পষ্ট উচ্চারণে। যুক্তির পর পাল্টা যুক্তি দিতেন যেকোনো পারিবারিক কিংবা সামাজিক আলোচনায়। কিন্তু মতের অমিল হলে রেগে যেতেন-এমনটা আমার চোখে কখনো পড়েনি। ব্যক্তিগত আত্মীয়তার সুবাদে কিছুটা সময় কাছ থেকে দেখা এই মানুষটির চলনে-বলনে আমি মুগ্ধ হয়েছি অসংখ্যবার।

হ্যাঁ বলছি গেদুচাচা খ্যাত কলামিস্ট খন্দকার মোজাম্মেল হক এর কথা। ব্যক্তিত্ববান, রাজকীয়, স্পষ্ট-ভরাট কন্ঠের মেধাবী এই মানুষটির সাথে আমার জীবনে প্রথম দেখা হয় ২০১০ সালের ৯ই আগষ্ট মধ্যরাতে আমার বাসার ড্রইংরুমে। আমি সৌভাগ্যবান এইজন্য যে, তিনি আমাকে সেই দিনটিতে নিতে এসেছেন তার ছোট বোনের পুত্রবধূ করে। আমি যখন তার পা দুটো ছুঁয়ে সালাম করলাম, তিনি পরম মমতায় স্নেহের স্পর্শে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। কখনো তাকে খুব করে বলা হয়নি, তিনি আমার পড়ার জগতে আবিষ্কার করা একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তাকে আমি দেখেছি ভিন্ন ভিন্ন অভিভূত করা চরিত্রে।

তিনি ছিলেন ৩ ভাই ৫ বোনের সবার বড়। তিন ভাই ও পাঁচ বোনের বড় ভাইটি কতটা স্নেহ, কতটা ভালোবাসা নিজের বুকে ভাইবোনদের জন্য ধারণ করেন তা তার চোখেমুখের ভাষা দেখে খুব সহজেই বোঝা যেত। ভাই-বোন, ভাগ্নে-ভাগ্নি সবাইকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু সরল মন তা প্রকাশের ভাষা না জানলেও আচরণ তা লুকাতে বরাবরই ব্যর্থ হতো। পাশাপাশি বাসায় থাকার কারণে, দেখেছি বোন ডাকলেই কতটা সহজভাবে ছুটে আসেন বড় ভাই। পরম মমতা নিয়ে এবং অনেকক্ষণ ধরে ভরাট কণ্ঠে নিজের সহজাত বলার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেন নিজস্ব ভঙ্গিমায়। বলার বিষয়বস্তুতে স্থান পেত- বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সামাজিক দায়বদ্ধতা, নিজের জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ, ধর্মীয় বিশ্লেষণসহ আরও কত কিছু।

কি জানতেন না তিনি! সব বিষয়ে গভীর জ্ঞান তার কথাতে স্পষ্টভাবেই প্রকাশ পেত। বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রতি ছিল তার অকুণ্ঠ ভালোবাসা। প্রতিটি বিষয়েই সুযোগ পেলেই নিজের রাজনৈতিক স্মৃতিচারণে হারিয়ে যেতেন।

তিনি ১৯৭৮ সালের ৩০ শে নভেম্বর ছাগলনাইয়া উপজেলাধীন মাটিয়া গোধা গ্রামের এম এ রউফের প্রথম কন্যা ফারজানা নুর নাহার লাকির সাথে সংসার জীবন শুরু করেন। একজন মানুষ নিজের স্ত্রীকে কতটা ভালোবাসতেন এবং সেই ভালোবাসা প্রকাশ করতে জানেন, তা তাকে না দেখলে হয়তোবা আমার জানাটা অসমাপ্ত থেকে যেত। স্ত্রীর প্রতিটি জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকীসহ গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতে কবিতা কিংবা ছন্দ দিয়ে চমৎকার অভিব্যক্তি প্রকাশের মাধ্যমে খুব সহজেই প্রকাশ পেত তার ভালোবাসার প্রখরতা ও গভীরতা।

তিনি ছিলেন অনেক যত্নশীল একজন মানুষ। নিয়ম করে সময়মতো খাওয়া, পায়ে হেঁটে অফিসে যাওয়া এবং নিজের যত্ন নেওয়া সবই করতেন পরম মমতা নিয়ে। প্রতিদিনের রুটিনে সাধারণ জীবনযাপনে তিনি অভ্যস্ত ছিলেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখভাল করতেন পরম মমতায়। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৩ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক। বাবা হিসেবে ছিলেন চমৎকার মানুষ। পাঁচ সন্তানের প্রত্যেকের সাথে ছিল তার আলাদা করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তিনি তার সন্তানদের পেশা-নেশা সবকিছুতেই নজর রাখতেন বন্ধুর মতো করে। একই সাথে একই বাসায় বসবাস করলেও ফোন করে প্রতিদিন আলাদা করে খোঁজ নিতেন তাদের অফিস টাইমে। যা সত্যি বাবা হিসেবে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

বাসার ড্রয়িং রুমের একটি কোনায় ছিল তার পড়ার জায়গা। আমার কাছে কেন যেন মনে হতো, এটা তাঁর নিজস্ব একটা ভুবন। যেখানে বসে তিনি প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করতেন নিজেকেই ভিন্ন ভিন্ন রঙে। একদম নিজের মতো করে যেখানে বসে তিনি প্রতিনিয়ত লিখতেন- গেদু চাচার খোলা চিঠি, সিদ্ধি বাবার উপলব্ধি, সুসংবাদ দুঃসংবাদসহ এরকম জনপ্রিয় কলামগুলো। যেখানে প্রতিটি চরিত্র একেবারে জীবন্ত। তার চেনাজানা খুব কাছের মানুষগুলোর মনের গহীনের কথামালাগুলোই স্থান পেত তার লেখাতে। শৈশব-কৈশোর, যৌবন কিংবা মধ্যবয়সে যতজন মানুষের সাথে তার পরিচয় ঘটেছিল, বেশিরভাগ মানুষদের প্রকাশ করা আবেগ-অনুভূতি কিংবা অভিমতগুলোই তিনি তুলে ধরতেন তার লেখনীতে।

অসম্ভব মেধাবী এই মানুষটি পড়াশোনা করতে ভালোবাসতেন। যেকোন বিষয়ে ছিল তার গভীর জ্ঞানের দখল। আমার দাদী শাশুড়ি যেদিন মারা গেল, সেদিন একই গাড়িতে পরিবারের সবাই মিলে বাড়ি যাওয়ার সময় গাড়িতে বসে তার জানা কুরআনিক ব্যাখ্যা, ধর্মীয় বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য অনেক সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা শুনে আমি আরও একবার মুগ্ধ হয়েছি।

খন্দকার মোজাম্মেল হক’কে বিশ্লেষণ করা এতো স্বল্প ভাষায় সম্ভব নয়। তবে তিনি আমার দেখা একজন গুণী, মেধাবী বিশ্লেষক, ঐশ্বর্যমণ্ডিত ব্যক্তিত্ব, প্রেমিক স্বামী, স্নেহময়ী পিতা, উচ্চমানের ভালোবাসায় ভরপুর পরমাত্মীয়। উদার, নির্লোভ, নিরহংকারী, স্পষ্ট-কাব্যিক-ইতিবাচক একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র কালো মেঘে খুব দ্রুত, কিছু না বুঝে উঠার আগেই মিলিয়ে গেল। আপনি বেঁচে থাকুন, আপনার সুন্দর লেখনীর মাঝে গ্রাম বাংলার সর্বস্তরের মানুষদের অন্তরে।

খন্দকার মোজাম্মেল হক গেদুচাচা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর